তার ছায়াতলে, পরম নিবিড়ে, আশ্রয় হয়, সুশীতল মায়া, তার আলোছায়া, মন করে জয়। পুষ্টি মাটি, পরিবেশ খাঁটি, সে বেড়ে ওঠে, হাতখানি পেতে, বুকে দেয় আলয়। বটবৃক্ষ ছড়িয়ে ডালাপালা, পাতায় পাতায় গড়ে ছায়া ঘর। জানে না তার বিশালতা, সমুদ্র ও জলের বুকে গড়ে খনি। জানে না তার বিস্তৃতি, গভীরতা। শুধু দিয়ে যায় দিয়ে যায়। খোঁজে না কী হারায় কী পায়। হিসেব নিকেশের উর্ধ্বে উদারতা ভালোবাসা। তারা পাস্থ জনের সখা। এই বটবৃক্ষ একটি প্রতিষ্ঠান। ক্লান্ত শ্রান্ত পান্থ পথিকের ঠিকানা খুঁজে দেয়। সব ভুলে গিয়ে নতুন করে তাগিদ খোঁজে জীবনের জন্য।
একটি বটবৃক্ষ পরিবেশের যেমন সৌন্দর্য বর্ধন করে। তেমনি শিক্ষা সংস্কৃতির আশ্রয়স্থল। ছায়াতলে বাঁশি বাদক বাঁশিতে সুর তোলে এই প্রথম। একজন মরমীয়া কণ্ঠে দরদীয়া সুর তোলে এই প্রথম। এই উৎকণ্ঠা নিরসনের মাধুকরী, আবেগের প্রস্রবনের শক্তি। কতজন এই নিবিড়ে হয়ে গেল কবি। লিখে গেল গল্প, কত জীবনের চলমান ছবি।
প্রথমে এলো কয়জন, তারপর ভরে গেল অঙ্গন, আজ সেই বৃক্ষের ডালাপালা ছুঁয়েছে পৌঁছেছে বিশ্বাঙ্গন। কী দক্ষতা, কী কৃতিত্ব, কী ভালোবাসা এই বটবৃক্ষের।নীরব ভূমিকায়, ঝরো হাওয়ায় বৃক্ষ, পথিককে করেছে শীতল। তার মনে জাগিয়েছে উম্মাদনা, স্বপ্নের দীপ্ত হয়েছে উতল। কত সাধনা, কত পরিতাপ, এখানে হলো উজল, রথ পেতেছে, উর্ধ্বপানে, আবেগের ঝড় হলো প্রবল। বটবৃক্ষ অবদানিক এবং সম্মোহনকারি একটি প্রাণ। প্রকৃতির মাঝে সুন্দরের গুণকীর্তন ছড়িয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে। ‘ছালে আবৃত বৃক্ষ নির্দিষ্ট পরিসীমায় বিস্তার লাভ করে, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকরূপে আবৃত বটবৃক্ষ সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে পরিগ্রহ করে’। তার দর্শন সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট শুদ্ধ সত্য ভাষার প্রতি উম্মুক্ত। সে গড়তে জানে ভাঙতে জানে না। সে গড়াতে জানে বিচ্ছিন্নতা করতে জানে না।
সে নিয়ম শেখায়, জাতির কাঁধে অপবাদ ঠেকায় না। সে সময়ের কাঁটায় কাঁটায় চলে, গরিমসির ধার ধারে না। সে সংগঠিত করতে জানে, দৃঢ়তার প্রত্যয়ে, আপন পর ভেবে না। সে সম্পর্কের অবকাঠামো তৈরি করতে জানে, মৌল কাঠামো উপড়িয়ে ফেলে না। সে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করতে জানে, কর্ম দিয়ে, কদর্য দিয়ে না। চট্টগ্রাম এ এমন করে জন্ম নিয়েছে একটি বটবৃক্ষ। যে মাটির ভাবনার শেকড়ে জন্ম নিয়েছে যে বটবৃক্ষের শেকড়, জেগে উঠেছে একটি স্বপ্নদ্বীপ, যেখানে পেতেছে প্রাণে সাড়া জাগানো একটি উঠোন, বিজ্ঞজনের,একাল সেকালের কবি সাহিত্যিকদের প্রাণের পাটাতন। আলোকিত সুরভিত মানুষের ফুলেল বৃন্দাবন।
এর জন্য একজন কবি দুয়ারে দুয়ারে খোঁজে, প্রতিভূ শক্তি। জাগিয়ে তোলে তাদের ভেতরের, সম্ভাবনার ভক্তি। প্রাণের স্পন্দনে জাগায় সৃষ্টির অনুরক্তি। মানুষই গড়তে জানে, সাজাতে জানে, অনুভূতির অরণ্যে, প্রসবের শত যুক্তি। এই চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের জীয়নকাঠি চট্টগ্রাম একাডেমি। স্বপ্নের বীজ পুঁতেছে যে, সেই বটবৃক্ষ, অভিভাবকের ছায়াতলে দিয়েছে যে সেই বটবৃক্ষ, আজ সবাইকে নিয়ে মহীরুহে পরিণত হয়েছে, সেই বটবৃক্ষ, চট্টগ্রাম একাডেমি। চট্টগ্রাম শিশুসাহিত্য একাডেমি।