শৈশবেই বাবা–মাকে হারান তারিকুল ইসলাম। এতিমখানায় প্রাথমিক পড়াশোনা করে ভর্তি হন মাদ্রাসায়। মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন কলেজে। কখনো মাটি কেটে, কখনো রাজমিস্ত্রির কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল অর্জন করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভর্তি পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হন। ডি–ইউনিটে ৪৩তম এবং বি–ইউনিটে হয়েছেন ৩৬তম। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত খরচ বহন করলেও এবার টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছেন না তারিকুল। তবে তার অভাবের কথা জানার পর অনেকেই তাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। তারিকুলের বাড়ি রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি থানার মডেল টাউন গ্রামে। স্থানীয় বাঘাইছড়ি বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদ্রাসার হোস্টেলে বড় হন তিনি। দিনমজুরের কাজ করে এ মাদ্রাসা থেকে ২০২০ সালে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৩৮ পেয়ে দাখিল পাস করেন। সেখানে আলিম মাদ্রাসা না থাকায় স্থানীয় কাচালং সরকারি কলেজ থেকে ২০২২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ৪.১৭ পেয়ে পাস করেন।
তবে এবার চবির ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও টাকার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তারিকুলের। গত ২০ জুন ছিল তারিকুলের ভর্তি ফি জমা দেওয়ার শেষ দিন। ভর্তির জন্য ৮ হাজার টাকা প্রয়োজন হলেও ২০ জুন পর্যন্ত তারিকুল সর্বসাকুল্যে জোগাড় করতে পেরেছেন মাত্র দেড় হাজার টাকা। এর মধ্যে যাতায়াত খরচই যাবে প্রায় ১ হাজার। তাই তিনি আর ভর্তি হতেই আসেননি। তারিকুল ইসলাম বলেন, আসলে আমার পরিবারে তেমন কেউ নেই। ছোটবেলা থেকে এতিমখানায় বড় হয়েছি। পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি কখনো মাটি কেটে, কখনো রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। ২০ তারিখের মধ্যে টাকা জমা দেওয়ার কথা থাকলেও আমি টাকা জোগাড় করতে না পারায় ভর্তি হতে যাইনি। আমার আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে স্যাররা যদি আমাকে পরবর্তীতে ভর্তির সুযোগ দেন, স্যারদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। এদিকে বংলানিউজ জানায়, চবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে তিনি যদি ভর্তি হতে না পারেন, তাহলে রোববার (আজ) তিনি যেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন বরাবর একটি লিখিত দরখাস্ত জমা দেন। আমরা বিষয়টি বিবেচনা করার চেষ্টা করব।
