সিস্টেম লস আটকে ২৮ শতাংশে

দৈনিক অপচয় ১২ কোটি লিটার পানি বিলিং সিস্টেমের কাজ চলছে ধীর গতিতে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার একজন মিটার পরিদর্শক ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার মিটারের তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মোট ৪২ জন মিটার পরিদর্শক বিল তৈরি করছেন প্রায় ৭৮ হাজার গ্রাহকের। এসব কারণে ওয়াসার উৎপাদিত পানির ব্যবহারের সঠিক হিসাব না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার দীর্ঘদিনের এ সংকট নিরসনে বিলিং সিস্টেমকে অটোমেশন করার লক্ষে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার পিওর আল্ট্রাসনিক ডিজিটাল মিটার বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে অনেক আগে। নানান জটিলতায় সেই প্রকল্পটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার তিনটি প্রকল্প ও গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে দৈনিক গড়ে পানি উৎপাদিত হয় প্রায় ৪৫ কোটি লিটার। গত জুন মাসে প্রকাশিত সর্বশেষ এমআইএস প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মোট উৎপাদিত পানির ২৮ শতাংশ সিস্টেম লস বা নন-রেভেনিউ ওয়াটার। গত বছর এটি ছিল ২৯ শতাংশ। এ হিসেবে দৈনিক নন-রেভেনিউ পানির পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি লিটার, যা পরিমাণের দিক থেকে মোহরা পানি সরবরাহ প্রকল্পের উৎপাদনের চেয়েও বেশি। ডিজিটাল মিটারের মাধ্যমে বিল হিসাব করা গেলে পানির অপচয় ও অবৈধ বিক্রি রোধ করা যাবে বলে আশা করছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশলী ও রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাত্র একজন মিটার পরিদর্শক ২ থেকে আড়াই হাজার মিটারের তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন এবং ৪২ জন মিটার পরিদর্শক ৭৮ হাজার গ্রাহকের বিল তৈরি করছেন। যা অনেক কঠিন। বিলিং সিস্টেমকে অটোমেশন করার লক্ষে গৃহীত পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পানির অপচয় রোধ হবে এবং ওয়াসার রাজস্বও বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী।
এই পাইলট প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার মিটার বসানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে অনেক আগে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং ৩০ জানুয়ারি ৩ হাজার স্মার্ট মিটার বসানোর দরপত্র গ্রহণও সম্পন্ন হয়েছে। পাইলট প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
এখন প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্যায়নের কাজ চলছে বলে চট্টগ্রাম ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী জানিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) নমুনা মিটার পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এরপর নির্ধারিত মানের মিটার তৈরির জন্য সময় দেওয়া হবে প্রতিষ্ঠানকে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চলতি বছরের জুন নাগাদ ৩ হাজার সংযোগে স্মার্ট মিটার স্থাপন করার কথা থাকলেও তা হয়নি। নগরীর মেহেদীবাগ ও গোলপাহাড় এলাকার আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের বিলের হিসাব হবে এই ডিজিটাল মিটারে। এছাড়া, অনলাইনে বিল প্রদানের জন্য পেমেন্ট গেটওয়েও থাকবে ডিজিটাল এই সিস্টেমে। পাইলট প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সবগুলো সংযোগকে এর আওতাভুক্ত করা হবে।
জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকেই অটোমেশনের দিকে যাওয়ার চিন্তা করছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। শুরুতে অ্যানালগ ও ডিজিটাল দুটি ডিভাইস সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু ক্যাবল কাটা পড়লে গোলমাল হতে পারে সে বাস্তবতায় বিলিং সিস্টেম পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ডিজিটাল ডিভাইস খুঁজছিল কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের শুরুর দিকে লোরা গেটওয়ে ভিত্তিক ৫টি স্মার্ট মিটার পরীক্ষামূলকভাবে বসানো হয়। নগরীর লালখানবাজার এলাকার হাইলেভেল রোড ও বাঘঘোনায় বসানো হয় এসব পরীক্ষামূলক মিটার। এক বছরের ব্যবহারে মিটারের কার্যকারিতার সফলতা পেয়ে পাইলট প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে ধর্ষণসহ ১০ মামলার আসামি দেলোয়ার গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধদুই কিশোরকে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন