সিইসির নয়, গাইবান্ধার ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত ইসির : সিইসি

| শুক্রবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২২ at ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ

গাইবান্ধার উপ নির্বাচনে মাঝপথে ভোটগ্রহণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মধ্যে সাংবাদ সম্মেলনে এসে ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, আমরা হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। এই সিদ্ধান্ত সিইসি গ্রহণ করেনি, কমিশন গ্রহণ করেছে। সিইসি কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে গ্রহণ করেন না; করতেও পারেন না।
ঢাকা থেকে সিসিটিভিতে ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি দেখার পর ভোটকক্ষে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারপরও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান সিইসি। ওই পরিস্থিতিতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ভোট বন্ধ করার কথা জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, কমিশন সদস্যরা বসে আলাপ-আলোচনা করে চিন্তাভাবনা করে যৌথভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খবর বিডিনিউজের।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ নির্বাচন ছিল বুধবার। সবগুলো কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরা বসিয়ে ঢাকার নির্বাচন ভবনে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল ভোটের পরিস্থিতি। সেখানে নানা অনিয়মের ঘটনা সরাসরি দেখে দুপুরের মধ্যেই অর্ধশত কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি। বেলা আড়াইটার দিকে পুরো নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানান সিইসি আউয়াল। এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিএনপিবিহীন এই ভোটে অংশগ্রহণকারী জাতীয় পার্টি ইসির সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ দিলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলে, ‘গোলযোগহীন’ এই নির্বাচনে ভোট বন্ধ করার কারণ তাদের কাছে বোধগম্য নয়। এ পরিস্থিতিতে বিভ্রান্তি দূর করতে গতকাল নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা ও মো. আলমগীর তার সঙ্গে ছিলেন।
গাইবান্ধার উপনির্বাচনে কেমন অনিয়ম হয়েছিল, ইসি কীভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে, কোন পরিস্থিতে, কীভাবে ভোট বন্ধ করা হয়েছে- তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন সিইসি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়ত জনমনে কিছু বিভ্রান্তি থাকতে পারে। আমরা টকশোতে শুনেছি কেউ আনন্দিত হয়েছে, কেউ ব্যথিত হয়েছে, কেউ প্রতিবাদ করেছেন, কেউ সমবেদনা জানিয়েছেন। আমাদের মনে হয়েছে। এতে করে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। সেই বিভ্রান্তি অপলোপনের জন্য কিছু ব্যাখ্যা আমাদের দেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সমার্থক নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও একজন কমিশনার। একাধিক সদস্য নিয়ে এই কমিশন গঠিত হয়, একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হন এবং তিনি এ সংস্থার চেয়ারম্যান হন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কোনো সিদ্ধান্তে এককভাবে গ্রহণ করেন না বা করতে পারেন না। এ জন্যই আপনাদের মাধ্যমে, আমরা বলতে চাই যে আমরা কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিই নাই। সকলকে বুঝতে হবে, এটা কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা নিগুঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তারপরে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অনিয়মের ব্যাপারে সিইসি জানান, ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে তারা ঢাকার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে তিনটি কেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্য দেখতে পান। ভোট কক্ষে প্রার্থীর পুরুষ এজেন্টরা একই রকম গেঞ্জি, বুকে ও পিঠে প্রার্থীর মার্কা ইত্যাদি প্রিন্ট করা। মহিলা এজেন্টগণ একই রকম শাড়ি পরা, যা আচরণ বিধিমালার ১০ (ঙ) ভঙ্গের মধ্যে পড়ে। এই সকল এজেন্ট ছাড়াও আরো অনেক অবৈধ লোকজন ভোটকক্ষে অবস্থান করে ভোটাদেরকে ভোট দিতে প্রভাবিত করছেন। অনিয়মের ধরন তুলে ধরে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কন্ট্রোল ইউনিটে ভোটাদের আঙুলের ছাপ দেওয়ার পরপরই এজেন্টগণ গোপন ভোটকক্ষে প্রবেশ করে ভোটারকে ভোট দানের সুযোগ না দিয়ে নিজেই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ একই কাজ করছেন। তখন কমিশন থেকে ফোন দিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারদের ভোট কক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ভোট কক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ তাদেরকে গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিসি ক্যামেরায় দেখে ভোট বন্ধ কতটা যৌক্তিক, প্রশ্ন কাদেরের
পরবর্তী নিবন্ধমাতারবাড়িতে পেট্রোকেমিক্যাল হাব নির্মাণে জাইকার সহযোগিতা চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা