সাড়ে ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন চট্টগ্রাম

জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় পেট্রোল পাম্পে দীর্ঘ লাইন, সড়কে যানজট সাত ঘন্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৫ অক্টোবর, ২০২২ at ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় গ্রিডের একটি সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দেওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিস্তৃত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টা ৫ মিনিটে জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলে (যুমনার এপারে) বিভ্রাট দেখা দিলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র জানিয়েছে। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রামের কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। এদিকে টানা প্রায় সাত ঘণ্টা পর রাত ৯টা নাগাদ চট্টগ্রাম শহরের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। তবে গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরো কিছু সময় লাগে।
রাজধানীসহ বিস্তৃত এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ নির্ভর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। জেনারেটর দিয়ে হাসপাতালসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা চালু রাখার চেষ্টা করা হলেও সময় ক্রমে দীর্ঘ হয়ে ওঠায় তাতেও ধস নামে। পেট্রোল পাম্প ও সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ লাইনের পাশাপাশি সড়কে গাড়ি আটকা পড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। নগরজুড়ে মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। পিডিবির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বেলা ২টা ৫ মিনিটে হঠাৎ করে গ্রিডে সমস্যা দেখা দেয়ায় রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ময়মনসিংহসহ বিস্তৃত এলাকায় একযোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বিদ্যুৎ নির্ভর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। শুরুতে জেনারেটর দিয়ে হাসপাতালসহ কিছু সেবা চালু থাকলেও এক-দুই ঘণ্টার মধ্যে তাও বন্ধ হয়ে যায়। টানা ছয়-সাত ঘণ্টা জেনারেটর চালানোর মতো অবস্থা অনেক প্রতিষ্ঠানের নেই। এত জ্বালানি তেলও অনেকের মজুদ ছিল না। গ্রিড বিপর্যয়ের খবর শুনে অনেকে কন্টেনার নিয়ে পেট্রোল পাম্পগুলোতে ভিড় করেন। কিন্তু সেখানেও বিদ্যুৎ না থাকায় জ্বালানি তেল দিতে পারছিল না। শুধু ডিজেল ক্রেতারা নয়, যানবাহনে জ্বালানি নেয়ার জন্যও প্রতিটি পেট্রোল পাম্পে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
বিদ্যুৎ না থাকায় সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গাড়িতে গ্যাস দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পেট্রোল পাম্পে ডিজেল, অকটেন এবং সিএনজি স্টেশনে গ্যাস না পাওয়ায় নগরজুড়ে শত শত বাস, টেক্সি, টেম্পো, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহনকে সংকটে পড়তে হয়। আটকা পড়ে অনেক গাড়ি। সন্ধ্যার পর সড়কবাতি জ্বলেনি। এ সময় শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির সাথে বিদ্যুৎবিহীন নগরী ভুতুড়ে রূপ নেয়। যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে চারদিক।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সবগুলো হাসপাতালে জরুরি অস্ত্রোপচারসহ নানা সেবা ব্যাহত হয়েছে। জেনারেটর দিয়ে সেবাসমূহ চালু রাখার চেষ্টা করা হলেও সময় দীর্ঘ হওয়ায় এক পর্যায়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় গ্রিডে সমস্যা দেখা দেয়ার পরপরই পিজিসিবি প্রকৌশলীরা জরুরি মেরামত কাজ শুরু করেন। তবে এই ধরনের গ্রিড বিপর্যয় মেরামত করতে স্বাভাবিকভাবে তিন-চার ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
গ্রিড সংস্কারের পর রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হয়। প্রথমে হাসপাতালসহ জরুরি সেবাসংস্থাগুলোকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। পরে ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
রাত ৯টা নাগাদ চট্টগ্রাম শহরের ৯৫ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ন্যাশনাল গ্রিডের ইস্টার্ন জোনে বিপর্যয় হয়েছে। কাজ চলছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। আমরা শহরের ৯৫ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। ক্রমান্বয়ে অন্যান্য এলাকায়ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা টেকনিক্যাল ও জটিল ব্যাপার। উৎপাদিত বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করা যায় না। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যও বিদ্যুৎ লাগে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করা এবং চালু রাখতে কিছু বিদ্যুৎ লাগে। আবার কোনো কারণে কোনো সঞ্চালন লাইনে লোড বেড়ে গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ সাথে সাথে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কোনো কারণে কোনো কেন্দ্র বা সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো সিস্টেমে সরবরাহের ঘাটতি তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে কিছু এলাকা বিদ্যুৎহীন রেখে অথবা অন্য কোনো গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ এনে লোড সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা করা না গেলে অর্থাৎ লোড সমন্বয় না হলে অন্য কেন্দ্রগুলোর ওপর চাপ বাড়ে। এভাবে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেনারেটর বন্ধ হয়ে যেতে পারে। নতুন করে কোনো কেন্দ্র বন্ধ হলে সরবরাহে ঘাটতি আরও বাড়ে এবং একইভাবে অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রও বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। যান্ত্রিক ত্রুটিতে লোড ম্যানেজমেন্টে সংকট তৈরি হলে গ্রিডে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে, যা জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় হিসেবে দেখা হয়।
গত ৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় গ্রিডের পশ্চিমাঞ্চলের সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দেয়ায় রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ বিস্তৃীর্ণ এলাকা ৪০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন ছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তি
পরবর্তী নিবন্ধকারও ধর্মীয় অনুভূতিতে কেউ আঘাত দেবেন না : প্রধানমন্ত্রী