সাড়ে চার বছরেও শেষ হয়নি ৩ কিমি খাল খনন

চসিকের প্রকল্প ।। বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী ।। অর্থ সংকট নেই, তবুও অগ্রগতি মাত্র ৪৫ শতাংশ

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ১৭ জুন, ২০২৩ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

সাড়ে চার বছরেও প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন একটি খাল খননের কাজ শেষ করতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। নগরের বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খাল খনন প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে প্রায় ১১শ কোটি টাকা ছাড় করেছে মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ গত মাসে ২৫৪ কোটি সাড়ে ৪৮ লাখ টাকা ছাড়ের অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ অর্থ সংকট নেই প্রকল্পে। এরপরও চলতি মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। এমনকি প্রকল্পটির জন্য প্রস্তাবিত ৫ একর ভূমি অধিগ্রহণও শেষ হয়নি। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সূত্রে জানা গেছে, খালটি বারইপাড়াস্থ চাক্তাই খাল থেকে শুরু করে শাহ আমানত রোড হয়ে নুর নগর হাউজিং সোসাইটির মাইজপাড়া দিয়ে পূর্ব বাকলিয়া হয়ে বলির হাটের পাশে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে। এ খালের প্রস্থ হবে ৬৫ ফুট। প্রকল্পের আওতায় খালের দুই পাশে ২০ ফুট করে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি রাস্তা হবে এবং ছয় ফুট প্রস্থের দুটি করে ওয়াকওয়ে হবে। সাড়ে ৫ হাজার মিটার রিটেইনিং ওয়াল, ৯টি আরসিসি ব্রিজ, ২ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৮১ ঘন মিটার মাটি উত্তোলন এবং সাড়ে ৫ হাজার মিটার ড্রেন নির্মাণও অন্তর্ভুক্ত আছে প্রকল্পে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ওয়াইজ পাড়া এলাকায় স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন। তবে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে ওই সময় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করে চসিক। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৭ নভেম্বর প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, চলতি মাস পর্যন্ত প্রকল্পের ৪৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। যতটুকু ভূমি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে সেখানে কাজ চলছে। বর্তমানে ৬টি ব্রিজের কাজ চলছে। ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার (উভয় পাশ হিসেবে) রিটেইনিং ওয়াল এবং দেড় কিলোমিটার (উভয় পাশ হিসেবে) ড্রেনের কাজ শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়েও আশাবাদী তিনি।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৪ জুন ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ চার হাজার টাকায় বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছিল। পরবর্তীতে কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি চসিক। এরপর ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর সংশোধন করে প্রকল্পটি এক হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় একনেক। ওই হিসেবে দ্বিতীয় প্রকল্পটি অনুমোদনের ৪ বছর ৭ মাস পেরিয়েছে। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকায় অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।

জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রণীত মাস্টার প্লানে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিদ্যমান খালসমূহ প্রশস্তকরণের পাশাপাশি ৩টি নতুন খাল খননের প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ১১ জুন রেকর্ড বৃষ্টিতে নগরীর একতৃতীয়াংশ ডুবে যাওয়ার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাস্টার প্লানে প্রস্তাবিত নতুন খাল খননের সুপারিশ করেছিল বিশেষজ্ঞ কমিটি। প্রস্তাবিত খাল তিনটি হচ্ছেমুরাদপুরের সিডিএ এভিনিউতে মির্জা খালের সমান্তরালে একটি খাল, বহদ্দারহাট খাজা রোডের সমান্তরালে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত একটি খাল ও শীতল ঝর্ণা খাল খননের সুপারিশ করা হয়। এরপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে প্রকল্পটি গ্রহণ করে চসিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধসাংবাদিক নাদিম হত্যাকারীরা চিহ্নিত, গ্রেপ্তার ১০