সাগর পাড়ে হচ্ছে চার লেনের নতুন টোল রোড

আউটার রিং রোডে টানেল, বে টার্মিনাল ও ইকোনমিক ।। জোনের গাড়ির চাপ সামলাতে নতুন প্রকল্প ।। বিদ্যমান টোল রোড পরিণত হবে সার্ভিস রোডে

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

সাগর পাড়ে নতুন করে চার লেনের টোল রোড নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ফলে আউটার রিং রোড উন্নীত হবে আট লেনে। আর বিদ্যমান টোল রোড তখন হয়ে যাবে সার্ভিস রোড। অপরদিকে চার লেনের আলাদা সড়ক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সীতাকুণ্ডে। আউটার রিং রোডে টানেল, বে টার্মিনাল এবং মীরসরাই ইকোনমিক জোনের গাড়ি চলাচলের ব্যাপারটি মাথায় রেখে উপরোক্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারির নেতৃত্বে একটি টিম পুরো বিষয়টি সরজমিনে পরিদর্শন করে ইতিবাচক মতামত ব্যক্ত করেছেন।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর যান চলাচলের সুবিধার কথা মাথায় রেখে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ১৫ .২ কিলোমিটারের চার লেনের আউটার রিং রোড নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সড়কটি নির্মাণের পরে এসে এর সাথে যুক্ত হয় কর্ণফুলীর তলদেশের টানেল এবং বে টার্মিনালের গাড়ি চলাচলের বিষয়টি। একই সাথে মীরসরাই ইকোনমিক জোনের গাড়ি চলাচলের বিষয়টিও যুক্ত হচ্ছে এই সড়কে। আগামী বছরের ডিসেম্বরে টানেল চালু হলে এবং ক্রমান্বয়ে বে টার্মিনালসহ অন্যান্য গাড়ি চলাচল শুরু হলে চার লেনের রাস্তাটি তা সামাল দিতে পারবে না।
অপরদিকে ফৌজদারহাট থেকে বন্দর পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষের ১২.৪৫ কিলোমিটার টোল রোড আট লেনে উন্নীত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে এডিবির সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। হয়েছে সমীক্ষাও। কিন্তু প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখছে না। এছাড়া টোল রোডকে আট লেনে উন্নীত করতে হলে প্রচুর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। কান্ট্রি সাইডের অতি মূল্যবান জমি এবং নানা স্থাপনাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাড়বে প্রকল্প ব্যয়।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বন্দর থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত দুই লেনের টোল রোডকে সার্ভিস রোড হিসেবে উন্মুক্ত করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। অপরদিকে টোল রোডকে নিয়ে যাওয়া হবে রিং রোডের পাশে। রিং রোডের সী সাইডে টোল রোড নির্মাণ করা হলে আলাদা করে কোনো জমি হুকুম দখল করতে হবে না। সড়ক নির্মাণ ছাড়া অন্য কোনো খরচও হবে না। দ্রুততম সময়ে কাজ করে রাস্তাটি চালু করে দেয়া হলে তা বে টার্মিনাল কিংবা টানেলের গাড়ির বাড়তি চাপ সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জাকির হোসেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সিডিএর শীর্ষ প্রকৌশলীদের একটি টিম নিয়ে পুরো এলাকাটি সরজমিনে পরিদর্শন করেন। এই সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রিয়াজ জাবেরসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের নেতৃত্বে সিডিএর একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন। তারা পতেঙ্গার টানেলের মুখ থেকে সাগরিকা পর্যন্ত বিদ্যমান রিং রোডের পাশে দুই লেনের একটি সার্ভিস লেন নির্মাণ করার বিষয়টি নিয়ে বিস্তাারিত আলোচনা করেন। বলা হয়, কান্ট্রি সাইডে সার্ভিস লাইনটি নির্মাণ করা হবে। ওই সার্ভিস লেনে লোকাল গাড়ি চলাচল করবে। অপরদিকে সাগরিকা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোডের চার লেনের সাথে আরো চার লেনের টোল রোড নির্মাণ করে আট লেনে উন্নীত করা হবে। বিদ্যমান টোল রোডকে ব্যবহার করা হবে সার্ভিস রোড হিসেবে। ফৌজদারহাটে টোল রোড এবং আউটার রিং রোডের মুখে দুইটি ইন্টারসেকশন লুপ নির্মাণ করা হবে। যাতে ঢাকার দিক থেকে আসা গাড়িগুলো অনায়াসে টোল রোড বা আউটার রিং রোডে চলে যেতে পারে, অপরদিকে বায়েজিদ লিংক রোড থেকে আসা গাড়িও যাতে অনায়াসে ঢাকার দিকে মহাসড়কে যেতে পারে। আট লেনের আউটার রিং রোডের চার লেন ফৌজদারহাটে শেষ করে ইন্টারসেকশনে মিলিয়ে দেয়া হবে। বাকি চার লেন সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। এটি মীরসরাই ইকোনমিক জোন থেকে বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত আসা রাস্তার সাথে মিলে যাবে। ইকোনমিক জোনের গাড়ি যাতে সহজে আউটার রিং রোড বা টোল রোড ধরে চলাচল করতে পারে ইন্টারসেকশনের মাধ্যমে তাও নিশ্চিত করা হবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে গতকাল অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের কথা স্বীকার করে বলেন, আউটার রিং রোডকে ৮ লেনে উন্নীত করা হবে। না হলে বিপুল পরিমাণ গাড়ির চাপ সামলানো অসম্ভব হয়ে উঠবে। বর্তমানে রিং রোড ধরে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গাড়ি চলাচল কঠিন হবে। এছাড়া বে টার্মিনাল এবং মীরসরাই ইকোনমিক জোনের গাড়ির চাপ সামলাতে রিং রোডকে আট লেনে উন্নীত করার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বিষয়টি নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান। প্রকল্পটি যাতে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়িত হয় সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরে টানেল চালু হলেই বিদ্যমান সড়কে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাড়ছে কুকুরের কামড়ানো রোগী
পরবর্তী নিবন্ধধর্মঘটে বন্দর ব্যবহারকারীদের উদ্বেগ