বাড়ছে কুকুরের কামড়ানো রোগী

জেনারেল হাসপাতালে দুই মাসে দ্বিগুণ রোগী সরবরাহ নেই জরুরি ইনজেকশানের

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ

কুকুরের কামড়ানো রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বাড়ছে চট্টগ্রামে। দুই মাসের ব্যবধানে রোগীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কুকুরের কামড়ের শিকার হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া রোগীর তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় এ চিত্র পাওয়া গেছে। রোগী বৃদ্ধির এ হারকে আশঙ্কাজনক বলছেন চিকিৎসকরা।
জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসে কুকুরের কামড়ের শিকার সবমিলিয়ে ১ হাজার ৪৬৫ জন রোগী চিকিৎসা নেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। সেপ্টেম্বরে চিকিৎসা নেন ১ হাজার ৮৭৪ জন। আর সর্বশেষ অক্টোবরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪১৪ জনে। হিসেবে দুই মাসের ব্যবধানে কুকুরের কামড়ের শিকার রোগীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ। রোগীদের মাঝে মারাত্মক জখম হওয়ায় তিন মাসে অন্তত ২৮ জন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি/রেফার করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. তানজিমুল ইসলাম। কুকুরের কামড়ের শিকার রোগীদের মাঝে ১২ শতাংশের ইনফেকশান (সংক্রমন) পাওয়া গেছে। তবে কারো শরীরে জলাতঙ্ক শনাক্ত হয়নি বলেও জানান ডা. তানজিমুল ইসলাম।
এদিকে, দিন দিন রোগী বাড়লেও বিনামূল্যের একটি জরুরি ইনজেকশানের সরবরাহ নেই হাসপাতালে। রেবিস ইমোনোগ্লুবুলিন (রেবিঙ-আইজি) নামে এই ইনজেকশান ৩য় মাত্রার রোগীদের কামড়ের পরপরই আবশ্যিকভাবে পুশ করতে হয়। মাথা, মুখমন্ডলে কামড় ও মারাত্মক জখম হওয়া রোগীদের ৩য় মাত্রার রোগী বলা হয়ে থাকে। কিন্তু গত এক বছর ধরে ইনজেকশানটির সরবরাহ নেই হাসপাতালে। এই ইনজেকশানের প্রতি ভায়াল বাইরে ৮০০ টাকায় কিনতে হয় রোগীদের। চিকিৎসকরা বলছেন, মারাত্মক জখমের রোগীদের এই ইনজেকশানের ২ থেকে ৩ ভায়াল দিতে হয়। সে হিসেবে নিজের পকেটের প্রায় আড়াই হাজার টাকা খরচ করে এই প্রতিষেধক নিতে হচ্ছে ৩য় মাত্রার রোগীদের।
সরকারিভাবে এক বছর ধরে এই ইনজেকশানের সরবরাহ না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. তানজিমুল ইসলাম বলেন, ৩য় মাত্রার রোগীদের জন্য এই ইনজেকশন আবশ্যিক ও জরুরী ভিত্তিতে পুশ করতে হয়। আগস্টে চিকিৎসা নেয়া মোট রোগীর মধ্যে ১১২ জন ছিল ৩য় মাত্রার। সেপ্টেম্বরে ছিল ২৭৩ জন। আর অক্টোবরে মোট রোগীর মাঝে ৩য় মাত্রার রোগী চিকিৎসা নেয় ৩১৮ জন। ৩য় মাত্রার এসব রোগীকে ইনজেকশানটি (রেবিঙ-আইজি) নিজের খরচে সংগ্রহ করতে হয়েছে। তবে রেবিঙ ভ্যাকসিন, টেটানাস ইনজেকশান ও এন্টিবায়োটিক, পেইন কিলার, ড্রেসিং কটনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য প্রতিষেধকের সরবরাহ রয়েছে। যা রোগীরা বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন বলে জানান আরএমও ডা. তানজিমুল ইসলাম।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে বলেন, রেবিঙ-আইজি ইনজেকশানটি শুধু আমাদের এখানে নয়, সরকারি পর্যায়ে কোথাও সরবরাহ নেই। এটি রোগীদের নিজ খরচে নিতে হচ্ছে। তবে এটির বিষয়ে ঢাকায় পুনরায় যোগাযোগ করবেন বলেও জানান তিনি। প্রসঙ্গত, কেবল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে কুকুরের কামড়ের শিকার রোগীদের সরকারি পর্যায়ে বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেয়া হয়ে থাকে।
কামড়ের শিকার সিংহ ভাগই ২০ বছরের কম বয়সী : হাসপাতাল সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০ বছরের কম বয়সীরাই কুকুরের কামড়ের শিকার হচ্ছে বেশি। মোট রোগীর মাঝে এই (২০ বছরের কম) বয়সী রোগীর হার ৬৭ শতাংশ। ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সী রোগীর হার ১৯ শতাংশ। আর ৪১ থেকে তদুর্ধ্ব বয়সী রোগীর হার ১৪ শতাংশ। মোট রোগীর মাঝে পুরুষ ৭৬ শতাংশ। আর ৩৪ শতাংশ নারী।
এদিকে, কুকুরের কামড়ের শিকার সবচেয়ে বেশি সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। মোট রোগীর ৭১ শতাংশই সিটি কর্পোরেশন এলাকার। আর ২৯ শতাংশ রোগী উপজেলা পর্যায়ে কামড়ের শিকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি সঠিক হয়নি
পরবর্তী নিবন্ধসাগর পাড়ে হচ্ছে চার লেনের নতুন টোল রোড