সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ে গাড়ি কেনা, প্রকল্পের সভার সম্মানি বন্ধ

| সোমবার , ৪ জুলাই, ২০২২ at ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ

সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে নতুন অর্থবছরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সব ধরনের যানবাহন কেনা বন্ধ রাখার পাশাপাশি সব উন্নয়ন প্রকল্পের সভার সম্মানি ভাতা দেওয়া স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার এক পরিপত্রে সরকারের এসব সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতে অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধনের লক্ষ্যে’ এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে পৃথক পরিপত্রে জানানো হয়। একই সঙ্গে আপ্যায়ন
ও ভ্রমণ ব্যয়, কম্পিউটার ও আসবাবপত্রসহ অন্যান্য কেনাকাটায় বরাদ্দ অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির সম্মানি বাবদ ব্যয় স্থগিতকরণ শীর্ষক পরিপত্রে বলা হয়, ‘২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রায়ত্ত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বাজেট ও নিজস্ব তহবিলের আওতায় বাস্তবায়নাধীন সব প্রকল্প/কর্মসূচি/স্কিমের ক্ষেত্রে ‘৩২৫৭২০৬-সম্মানি’ অর্থনৈতিক কোডের বরাদ্দ থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি), প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি (পিএসসি), বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (ডিপিইসি), বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (এসপিইসি) এবং বিভাগীয় বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (ডিএসপিইসি) সভায় সম্মানি বাবদ কোনো অর্থ ব্যয় করা যাবে না।’
অপরদিকে আরেক পরিপত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি কেনা বন্ধ রাখাসহ সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধনের লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে কিছু খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখা হবে।
খাতগুলো হল : নতুন অথবা প্রতিস্থাপক হিসেবে সব ধরনের যানবাহন কেনা (‘৪১১২১০১-মোটরযান’, ‘৪১১২১০২-জলযান’, ‘৪১১২১০৩-আকাশযান’) বন্ধ থাকবে। শুধু জরুরি ও অপরিহার্য ক্ষেত্র বিবেচনায় ‘৩২১১১০৬-আপ্যায়ন ব্যয়’, ‘৩২৪৪১০১-ভ্রমণ ব্যয়’, ‘৩২৫৫১০৫-অন্যান্য মনিহারি’, ‘৪১১২২০২-কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক’, ‘৪১১২৩০৩-বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি’ ও ‘৪১১২৩১৪-আসবাবপত্র’ খাতে বরাদ্দ করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।
দেশের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ‘৩২৩১৩০১-প্রশিক্ষণ’ খাতে (প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ব্যতীত) বরাদ্দকরা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।
উপরের এ সব খাতে বরাদ্দ করা অর্থ অন্য কোনো খাতে পুনঃউপযোজন করা যাবে না।
কোভিড মহামারীর প্রভাব কিছুটা কমে যাওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়। দেশে দেশে মুদ্রার দরপতন, আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া, কাঁচামালের মূল্য বাড়াসহ বিভিন্ন কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। এর প্রভাব দেখা যায় বাংলাদেশের আমদানির ক্ষেত্রেও। চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ সংকট তৈরি হওয়ায় ডলারের দামে রেকর্ড হয়েছে। টাকার মান নিয়মিত বিরতিতে কমছে। এমন পরিস্থিতিতে গত জুন মাস থেকে খরচ কমানোর জন্য একের পর এক কৃচ্ছ্রতার সিদ্ধান্ত দিচ্ছে সরকার। খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন সব প্রকল্পের ব্যয় স্থগিত করা, বিদেশ সফর স্থগিত করা, বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা, আমদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন বাড়িয়ে দেওয়া, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনাসহ আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুলাই মাসে এলপিজির দাম বাড়ল কেজিতে ১ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধঅসুস্থ শিশু, রিকশাচালক বাবা আর বেপরোয়া একটি ট্রাক