সরকারি নির্দেশনা মেনে বিনোদন পার্কগুলো খুলে দেয়ার দাবি

বাপা’র সংবাদ সম্মেলন

আজাদী অনলাইন | শনিবার , ৫ জুন, ২০২১ at ৩:৪৭ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব অ্যামিউজমন্ট পার্কস এন্ড এট্রাকশনস(বাপা)-এর পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় রাজধানী ঢাকার গুলশান-২ এর একটি হোটেলে গত ২ জুন বুধবার।
উক্ত অনষ্ঠানে বাংলাদেশে অ্যামিউজমন্ট পার্কগুলোর করোনাকালীন সময়ের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন বাপা-এর সভাপতি শাহরিয়ার কামাল।
তিনি বলেন, “করোনা সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে সরকারের যথাযথ উদ্যোগের ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছিল এবং সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আমরা বিনোদন পার্কগুলো বন্ধ রেখেছিলাম যদিও এতে বিনোদন কেন্দ্রগুলো আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারপরও মানবিকতার দিকটি বিবেচনায় রেখে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধ করা হয়েছিল। সেই সময় সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবসায়িক মৌসুম ঈদের পূর্বে পার্কগুলো খোলার অনুমতি না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আমাদের আশা ছিল ভবিষ্যতে আমরা তা কাটিয়ে উঠতে পারব কিন্তু পুনরায় ২য় পর্যায়ে আবারও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ফলে বিনোদন পার্ক ও পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফলে এই শিল্পটি ব্যবসায়িক ও আর্থিক দিক থেকে পুনরায় ক্ষতিগ্রস্থতার সম্মুখীন হচ্ছে।”
অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো এখন যদি এই বিনোদন পার্কগুলো খুলে দেওয়া না হয় তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা বা ঘুরে দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি।
বাপা সভাপতি শাহরিয়ার কামাল আরো বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এবারও সরকার গৃহীত সিদ্ধান্তের কারণে করোনার ১ম পর্যায়ের মতো ২য় পর্যায়ের ধাক্কাও সরকার সামলে উঠবে। গত বছরের একই সময়ে অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো খুলে দেওয়া হলেও বিনোদন পার্কগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এসেছিল অনেক পরে ফলে এ খাতটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ব্যাপকভাবে। তারপরও জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সরকারের সকল সিদ্ধান্তের সাথে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব এমিউজম্যান্ট পার্কস এন্ড এট্রাকশনস (বাপা) একমত পোষণ করেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জীবন ও জীবিকা একসাথে চালাতে হবে। সেই জন্য আমরা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পার্কের ধারণ ক্ষমতার ৫০% এর কম দর্শনার্থী প্রবেশ ও তাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত রেখে কার্যক্রম পরিচালনা সহ পার্কের মূল প্রবেশদ্বারের বাইরে থার্মাল স্ক্যানার বসানো, দর্শনার্থী পরীক্ষা পূর্বক টিকেট সংগ্রহ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, নিয়মিত ফুড কোর্ট আর রাইডগুলো স্যানিটাইজ করা সহ করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্যবিধি এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের নির্দেশনা অনুসরণ করে সমস্ত ব্যবস্থা আমার নিশ্চিত করেছি এবং তা নিশ্চিত করেই আমরা পার্কগুলো পরিচালনা করে আসছি। যদিও আমরা ৫০% এর কম দর্শনার্থীর কথা বলেছিলাম কিন্তু বাস্তবে ধারণক্ষমতার ২০% দর্শনার্থীও এখন আসে না।”
শাহরিয়ার কামাল আরো বলেন, “সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পেরেছি ঘরের চেয়ে বাইরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কম হয়। এ বিবেচনায় বিনোদন পার্কগুলো যেহেতু খোলা জায়গায় অবস্থিত সেহেতু এখান হতে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। এখানে ৬ ফুটেরও অধিক দূরত্ব হতে দর্শনার্থীদের সেবা প্রদান করা সম্ভব যা অন্যান্য সেক্টরগুলোতে বজায় রাখা সম্ভব না।”
তিনি জানান, বিনোদন ও পর্যটন খাতে প্রচুর বিনিয়োগ এবং ব্যাংক ঋণ রয়েছে। লকডাউনকালীন এ খাত দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এ খাতের নেক উদ্যোক্তা ঠিকমতো ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হবে না যার ফলে এর বড় একটি অংশের ঋণখেলাপী হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ খাত বন্ধ থাকলে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতাদি সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হবে না এবং অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরিচ্যুত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সেই সাথে এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লক্ষ লক্ষ পরিবারের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা দিন দিন দুরুহ হয়ে পড়বে। উ্ল্লেখ্য, গত বছর লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ খাতগুলোর জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা দেওয়া হলেও পর্যটন শিল্প তথা বিনোদন পার্কগুলোকে সেই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হয়নি।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতিসত্ত্বর অন্যান্য খাতের মতো পার্কগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে আশু সরকারি সিদ্ধান্ত প্রয়োজন উল্লেখ করে বাপা সভাপতি শাহরিয়ার কামাল আরো জানান, কক্সবাজার, কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত বা পার্বত্য জেলাসমূহের মতো খোলা জায়গায় দর্শনার্থীদের যে ঢল নামে সেখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হলেও বেসরকারিভাবে পরিচালিত বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণ, তাদের সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং যা তারা এ লকডাউনের আগেও গাইডলাইন অনুযায়ী সঠিকভাবে পার্কগুলো পরিচালনা করেছেন।
তাই ঐ সকল পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সাথে বেসরকারিভাবে বিনিয়োগকৃত বিনোদন পার্কগুলোকে একই দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করা ঠিক হবে না বলে মনে করেন তারা।
এছাড়াও বাংলাদেশে যত ওয়াটার পার্ক আছে সেখানের পানি ক্লোরিন দ্বারা পরিশোধিত আর ক্লোরিন মিশ্রিত পানি করোনাভাইরাস সংক্রমণের বাধা বলে জানান তিনি।
এমতাবস্থায় দেশে অবস্থিত বিনোদন পার্কগুলোর টিকে থাকা ও স্ব-অবস্থায় ফিরে আসার স্বার্থে নিম্নলিখিত প্রস্তাবনাসমূহ বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
১. অতিসত্ত্বর অন্যান্য খাত/প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে সেই মোতাবেক বিনোদন পার্কসমূহ খুলে দেওয়া।
২. বিনোদন পার্কসমূহকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সরকার কর্তৃক ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বিনোদন পার্কসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করা।
৩. আগামী ৫ বছরের জন্য বিনোদন পার্কের ওপর ভ্যাট, সম্পূরক শুল্কসহ অন্যান্য কর মওকুফ করা যাতে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সেবা নিশ্চিত করা যায়।
৪. আগামী ৫ বছর নতুন বিনোদন পার্ক নির্মাণ ও বর্তমান স্থাপনার সংযোজনার জন্য আমদানিকৃত বিভিন্ন রাইডসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে মূসক ও শুল্ক করমুক্ত আমদানির সুযোগ প্রদান।
৫. চলতি মূলধন যোগান নিরবচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থে ১% সুদে ঋণ প্রদান করা।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ড্রিম হলিডে পার্ক-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং বাপা’র জেনারেল সেক্রেটাারি প্রবীর কুমার সাহা, ওয়ান্ডারল্যান্ড গ্রুপ-এর চেয়ারম্যান ও বাপা’র এডভাইজার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, নন্দন পার্ক-এর সিইও ও বাপা’র ট্রেজারার তুষার বিন ইউনুস, ফ্যান ফেস্ট-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বাপা সদস্য এস এম সামসুর রহমান শিমুল, ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বাপা সদস্য মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কো. লি.-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ও বাপা কো-অর্ডিনেটর অনুপ কুমার সরকার এবং কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কো. লি.-এর হেড অব মিডিয়া এন্ড পি.আর.ও বাপা মিডিয়া এন্ড পি.আর. কো-অর্ডিনেটর এম. মাহফুজুর রহমান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরিমান্ড শেষে কারাগারে মামুনুল
পরবর্তী নিবন্ধপরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তথ্যমন্ত্রীর আহ্বান