সম্ভাবনার দুই মেগা প্রকল্পে এখন শুধু অপেক্ষা

ডিসেম্বরে চালু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল ।। কক্সবাজারে ট্রেন যাবে জাতীয় নির্বাচনের আগে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২০ আগস্ট, ২০২২ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

পর্যটন ও অর্থনৈতিক খাত ঘিরে ব্যাপক সম্ভাবনাময় বৃহত্তর চট্টগ্রামের দুটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে চট্টগ্রাম ও দক্ষিণাঞ্চলসহ কক্সবাজার অঞ্চলের মানুষ। এ দুটি মেগা প্রকল্পকে ঘিরে এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরেই চালু হতে যাচ্ছে মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু টানেল। এর পরপরই ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে উদ্বোধন হবে দেশের রেল যোগাযোগ খাতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং বহুল প্রত্যাশিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন। ইতোমধ্যে ৭২ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। ৪০ কিলোমিটারেও বেশি রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিদিনই বসছে নতুন নতুন অংশে রেললাইন। কাজের অগ্রগতি দেখতে আগামী ২৪ থেকে ২৬ আগস্টের মধ্যে রেলমন্ত্রী কক্সবাজার যাওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
এদিকে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন টানেলের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হবে বলে মনে করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তাই যতোই দিন ঘনিয়ে আসছে টানেল ঘিরে পদ্মা সেতুর পর আরেক ধামাকা উৎসবের আমেজ বইছে চট্টগ্রামজুড়ে। বঙ্গবন্ধু টানেলটি পতেঙ্গা প্রান্ত দিয়ে চট্টগ্রাম শহরের সাথে যুক্ত করবে দক্ষিণ চট্টগ্রামকে। ফলে পাল্টে যাচ্ছে আনোয়ারা ও আশপাশের উপজেলাবাসীর জীবনযাত্রার মান। একের পর এক খুলছে নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। বাড়ছে টানেল সংযুক্ত সড়কের আশেপাশের জমির দাম। গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্পকারখানা।
রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি : স্বপ্নপূরণের পথে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে রেললাইন প্রকল্পের কাজ। গত জুন-জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৭২ শতাংশ। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে কক্সবাজারে নির্মিত বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং আইকনিক রেল স্টেশনের মূল ভবনের কাজ। ঝিনুকের আদলে রূপ দেয়া হয়েছে কক্সবাজার রেল স্টেশনটি। বাকি ২৮ শতাংশ কাজ শেষ হলেই আগামী বছরের জুনে ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে ট্রেনে কক্সবাজারে যাওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ৪০ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ।
এই ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান জানান, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে আমরা কাজ করছি। যদিও আমার প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত কিন্তু আগামী বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে
হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে আমাদের ট্রেন চালাতে হবে। তাই ২০২৩ সালের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি। এরপর এই রেলপথে ট্রেনের ট্রায়াল শুরু হবে।
কক্সবাজার অংশের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ৩৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম অংশে ৫ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া, হারবাং এবং রামু এলাকায় ৩৫ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৬০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের পাশাপাশি চলছে সিগন্যালিং তার টানার কাজ। মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে মেজর ও মাইনর ব্রিজ এবং কালভার্টগুলোর কাজ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, চকরিয়া থেকে কক্সবাজার অংশে ২০টি সেতুর মধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। বসানো শেষ হয়েছে রেললাইন। দোহাজারী-চকরিয়া অংশে ১৯টি সেতুর মধ্যে সাঙ্গু নদীর ওপর একটি, মাতামুহুরী নদীর ওপর দুটি এবং বাঁকখালী নদীর ওপর একটি বড় রেলসেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৮টি স্টেশনের মধ্যে বেশ কয়েকটি শেষের দিকে। এর মধ্যে ডুলাহাজারা রেল স্টেশনের কাজ শেষের দিকে। শুরু হয়েছে সাতকানিয়া এবং রামুতে রেল স্টেশন নির্মাণের কাজও।
এ দিকে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণের কাজের অগ্রগতির সাথে সাথে এই রুটে ট্রেন চলাচলের জন্যও রেল কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি শুরু করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেনের পাশাপাশি বিভিন্ন রুটে চলাচলের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৫০টি আধুনিক উচ্চগতির নতুন মিটারগেজ কোচ আমদানি করা হচ্ছে।
চলতি অর্থ বছরে এবং আগামী অর্থ বছরে এই কোচ দেশে আসবে বলে জানান বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস. এম. সলিমুল্লাহ বাহার। তিনি বলেন, আমাদের নতুন আরো ১৫০টি মিটারগেজ কোচ আসছে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। নতুন কোচ দিয়ে কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালানো হবে।
চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড প্রথম দুইভাগে কাজটি করছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ ৮৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল টানেল প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত আরও ৬ মাস সময় দীর্ঘায়িত হলে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় হবে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। তবে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে টানেলটি চালুর লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে কাজ করছেন তারা। টানেলের মূল কাজের সাথে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য জেনারেটর স্থাপন, বাতাস ও অক্সিজেন পরিবহনের প্রযুক্তি স্থাপন, ডেকোরেটিভ ওয়াল, ফায়ার ওয়াল, ওপেন কাট এরিয়া, ছাউনিসহ কেবল লাইন ও লাইটিংয়ের কাজও চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টানেলকে ঘিরে আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটারের একটি ফ্লাইওভারের কাজসহ চার লেনের ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
টানেলকে ঘিরে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠার পাশাপাশি ঘিরে নামি-দামি হোটেল-রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠছে আনোয়ারায়। টানেলের আশেপাশে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন পর্যটন স্পট। আনোয়ারা অংশে চলছে অর্থনৈতিক বিশাল কর্মযজ্ঞ। ইতিমধ্যে আনোয়ারায় অবস্থিত কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড), চায়না ইকোনোমিক জোন, বেসরকারিখাতে সবচেয়ে বড় সার কারখানা (কাফকো), চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডেসহ (সিইউএফএল) অসংখ্য বেসরকারি শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকেউ আঘাত হানলে প্রতিরোধ করুন
পরবর্তী নিবন্ধভারতকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী