সমবায় আন্দোলনকে দেশব্যাপী জোরদার করতে হবে

| শনিবার , ৭ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

আজ জাতীয় সমবায় দিবস। প্রতি বছর নভেম্বর মাসের প্রথম শনিবার সরকারিভাবে এ দিবসটি ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে পালিত হয়। এ বছর মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারা দেশে এ দিবস পালিত হচ্ছে। সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য একদল মানুষের যৌথ উদ্যোগকে সমবায় বলা হয়। সমবায় শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়। সমবায়ের মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’। সমবায় সংগঠন বা সমিতি সমবায় সংগঠন ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও শক্তিকে এক করার মাধ্যমে দেশের দরিদ্র মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি করে।
বর্তমান সরকার সমবায়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন নানা সময়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবায়ের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে যুগোপযোগী সমবায় ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে সমবায়ের মাধ্যমেই আমাদের দেশের উন্নয়ন করতে পারব।
সমবায়ের কাজে যারা দক্ষ, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং সৎভাবে তারা যেন কাজ করে, সে বিষয়ে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। সমবায়ের মাধ্যমেই দ্রুত উন্নয়ন করা সম্ভব, সেই উপলব্ধি সবার ভেতরে জাগাতে হবে। এই কারণেই জাতির পিতা সমবায়কে আমাদের সংবিধানের অর্থনৈতিক নীতিমালায় সংযুক্ত করে গেছেন, সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদে। সমবায় ছিল জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার। তিনি কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, শিল্প উদ্যোগ, কৃষি ঋণসহ সবক্ষেত্রেই সমবায়ভিত্তিক উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থাপনা প্রসারিত করতে চেয়েছিলেন। আমরা জানি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার কৌশল ছিল সমবায়। জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে তৃণমূল পর্যন্ত উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে দেশের সব নাগরিকের জন্য সমান নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। ফলে এ সরকার সমাজের অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছে।
সমবায় অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের কৃষি, মৎস্য চাষ, পশু পালন, দুগ্ধ উৎপাদন, পরিবহন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, আবাসন, পুঁজি গঠন ও নারীর ক্ষমতায়নে সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার সমবায় সমিতি রয়েছে; যার সদস্যসংখ্যা ১ কোটি ৯ লাখ। এসব সমবায় সমিতির মোট কার্যকরী মূলধনের পরিমাণ ১৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। সমবায়ের মাধ্যমে সৃষ্ট কর্মসংস্থানের সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ।
নেতৃত্ব সৃষ্টি, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সমবায়ের সঙ্গে অধিকহারে নারীদের সম্পৃক্ত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নানা সময়ে। তিনি বলেন, এটা আমাদের করা উচিত এইজন্য যে, আজকাল সকলেই লেখাপড়া শেখে, চাকরি করে, দেশে-বিদেশে চলে যায়। জমি কিন্তু অনাবাদী পড়ে থাকে। আমাদের যেহেতু দেশের মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে তাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে এই জমি যেন অনাবাদী পড়ে না থাকে। সমবায়ের সাহায্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি এখন সময়ের দাবি। আমাদের বিশ্বাস, সমবায়ের ফলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশের মানুষ মুক্তি পাবে এবং আমাদের আর্থ-সমাজিক ক্ষেত্রে আরো উন্নতি হবে। উন্নয়নের যে ধারাটা আজকে সৃষ্টি হয়েছে, সেই ধারাটা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মোট কথা, সমবায় আন্দোলনকে দেশব্যাপী জোরদার করতে হবে। দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে সমবায় একটি পরীক্ষিত কৌশল। উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সমবায়ের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করার জন্য এই আন্দোলনকে দেশের কৃষিক্ষেত্রের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে