সমন্বিত বুকিং সিস্টেমে চলবে লাইটারেজ জাহাজ

চেম্বারে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত লাইটারেজ জাহাজ চলাচলে সমন্বিত বুকিং সিস্টেমে পরিচালিত হবে। এই সেক্টর নিয়ে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে কাউকে সুযোগ দেয়া হবে না বলেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বন্দর পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ এক মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম, নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের এই মতবিনিময় সভায় নৌ পরিবহন সেক্টর নিয়ে যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর তথা দেশের আমদানি রপ্তানির স্বার্থে এই সেক্টরে শৃঙ্খলা বজায় রাখার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাসে লাইটারেজ জাহাজ বুকিং নিয়ে বিদ্যমান বিরোধ নিষ্পত্তিসহ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন খাতের অস্থিতিশীলতা নিরসন ও শৃঙ্খলা আনয়নের লক্ষ্যে একটি গ্রহণযোগ্য এবং সমন্বিত বুকিং ব্যবস্থা চালুকরণের বিষয়ে গতকাল উচ্চ পর্যায়ের এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চিটাগাং চেম্বার প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজের সভাপতিত্বে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কনভেনর মোহাম্মদ নুরুল হক, সংশ্লিষ্ট জাহাজ মালিক ও সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দীর্ঘদিন যাবত সুনামের সাথে ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। কোনো স্বার্থান্বেষীমহল এই সুনাম ক্ষুন্ন করুক তা আমরা চাই না। বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাসে জাহাজের সিরিয়াল অনুযায়ী ও নিয়মমাফিক হতে হবে, যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তিনি আরো বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কারণে এই সেক্টরে নানা বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। ফলে অনেক জাহাজ মালিক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আমরা এ ধরণের কর্মকান্ড চাই না।

চট্টগ্রাম১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ বলেন, গত ১৫ বছর ধরে এই আসনে চট্টগ্রাম বন্দরসহ ২৩টি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কার্যক্রম একদিনের জন্যও কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। এখন নতুন করে অনেকেই নৌপরিবহন সেক্টরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের দীর্ঘদিনের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পাঁয়তারা করছে। তিনি আরো বলেনএই খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ২০০৫ সালের দিকে চেম্বারের উদ্যোগেই গঠিত হয়েছিল ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন সেল (ডব্লিউটিসিসি)। তখন থেকে সুবিধাভোগীরা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থে ব্যর্থ হওয়ায় বিভিন্ন চক্রান্ত করে চেম্বার থেকে আলাদাভাবে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল গঠন করেন। সেই স্বার্থান্বেষী মহলই সাধারণ জাহাজ মালিকের প্রায় ৬০০ কোটি টাকার অধিক বকেয়া রেখে ডব্লিউটিসি চলমান সিরিয়াল প্রথার বিপরীতে আলাদাভাবে নতুন জাহাজ সিরিয়াল ব্যবস্থাপনা চালু করেছে। ফলে তৈরি হয়েছে জাহাজ মালিকদের সংগঠন সমূহের এক বিপরীতমুখী অবস্থান।

তিনি আরও বলেন, বিরাজমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাসে অচলাবস্থা তৈরির মতো শঙ্কা তৈরি হবে। এই পরিস্থিতিতে দেশের জনসাধারণ ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে সরকার আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি বিবেচনা করছে বলেই নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্যবসায়ীদের মতামত জানতে এবং সমাধানের জন্য এসেছেন। সরকার অর্থনীতির গেইটওয়ে তথা বন্দর সচল রাখার ব্যাপারে সোচ্চার এবং কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে থাকেন মর্মে তিনি উল্লেখ করেন।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন, সরকার আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি হ্যান্ডেল করছে। এ জন্য আমরা নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে বিবাদমান সকল পক্ষের সাথে নিয়মিত বৈঠক করে জাহাজ বুকিং এর জন্য সকল পক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটির নেতৃত্বে আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন সিরিয়াল দেয়া হবে এবং পূর্বের বিষয়গুলো মীমাংসার জন্য নৌবাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একই সাথে জাহাজের সিরিয়াল নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে সে জন্য আমরা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ও অনলাইনভিত্তিক সফটওয়্যার ডেভেলাপ করেছি।

নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেনকমিটি গঠনের পূর্বে সকলপক্ষকে নিয়ে সভা করেছি আমরা। উক্ত সভার আলোকে সকল সমস্যা সমাধানে নতুন কমিটি আগামী সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করবে। এখন থেকে জাহাজ বুকিংয়ের সময় নির্ধারিত ভাড়ার ৬০ শতাংশ এবং পণ্য খালাসের পূর্বে অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও বিবাদমান বিভিন্ন সমস্যা আপোষ মীমাংসার মাধ্যমে নিরসন সম্ভব না হলে তা আরবিট্রেশনের মাধ্যমে সমাধান করা হবে এবং ন্যায্য পাওনা আদায়ে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

চিটাগাং চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও পণ্য পরিবহন নিয়ে এ ধরণের জিম্মি দশা তৈরি করা কোনভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকে চিটাগাং চেম্বার আমদানিকারক, সাধারণ ব্যবসায়ী এবং দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি বিবেচনা করে সোচ্চার ছিল। তিনি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নৌপরিবহন কর্তৃক গঠিত কমিটিতে এফবিসিসিআই এবং চিটাগাং চেম্বারের একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তিকরণের আহ্বান জানান। এছাড়াও সভায় ডব্লিউটিসি’র নেতৃবৃন্দ জাহাজ বুকিং ব্যবস্থা এবং বকেয়ার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেশনজট নিরসনের দাবিতে চবির মূল ফটকে তালা
পরবর্তী নিবন্ধবান্দরবানে মোটরসাইকেলে বগালেক-কেওক্রাডং যেতে নিষেধাজ্ঞা