সমন্বিত ও বাস্তবসম্মত মাস্টারপ্ল্যান চান নগর পরিকল্পনাবিদরা

অংশীজন সভায় চট্টগ্রামে উন্মুক্ত স্থান রাখারও দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীকে বাসযোগ্য একটি নগর হিসেবে গড়ে তুলতে দরকার নিরাপদ, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর মহাপরিকল্পনা। এই নগরীর দুর্ভাগ্য হচ্ছে মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়া। যে যেভাবে পারছে, নিজেদের মতো উন্নয়ন পরিচালনা করায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে। নগরবাসীকে এর নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে সব সেবা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। শুধু মহাপরিকল্পনা করলেই চলবে না, তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নও করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনাবিদেরা। তারা বাস্তবসম্মত ও সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান করে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম নগর গড়ার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, পরিকল্পিত নগরায়ন ছাড়া বিশ্বমানের শহর গড়া অসম্ভব।
গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘নিরাপদ, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর মহাপরিকল্পনা’ শীর্ষক অংশীজন সভায় উপরোক্ত মন্তব্য করেন পরিকল্পনাবিদেরা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার জোট চট্টগ্রাম আরবান নেটওয়ার্কের উদ্যোগে আয়োজিত নগর বিশেষজ্ঞ, ৯ম পৃষ্ঠার ১ম কলাম
পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি এবং প্রকৌশলী, সুশীল সমাজ প্রতিনিধি, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, শিশু-নারী-যুব এবং গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ গ্রহণের উদ্দেশ্যে এই সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, নগরের বিগত মাস্টারপ্ল্যানগুলোর ভুলত্রুটি চিহ্নিত করে একটি নতুন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আবার এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু গাইডলাইনও পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যানে বে-টার্মিনাল ও বিভিন্ন ফ্লাইওভারের কথা উল্লেখ না থাকলেও যোগাযোগ খাত উন্নয়নের খাতিরে এসব প্রকল্প নেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাই সিডিএর মাস্টারপ্ল্যানের সফল বাস্তবায়ন করতে হলে সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, চট্টগ্রাম আগে খেলার মাঠ, উন্মুক্ত ময়দান ও বিভিন্ন পার্কের সমন্বয়ে একটি পরিপূর্ণ নগর ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও প্রভাবশালীর প্রভাবে চট্টগ্রাম দিন দিন বদ্ধ নগরে পরিণত হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ২ দশমিক ৫ মিটারের কমে যেকোনো রাস্তার পাশে তিন তলার বেশি উঁচু ভবন নির্মাণ করাকে নিরুৎসাহিত করেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানারসের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থপতি আশিক ইমরান। এছাড়া বিশেষজ্ঞ মতামত দেন ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ রাশিদুল হাসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান, সিনিয়র সাংবাদিক ওমর কায়সার, ঘাসফুলের চেয়ারম্যান ড. মনজুর উল আলম চৌধুরী, আইইবির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল আলম।
অংশীজন সভায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান সম্পর্কিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিডিএর উপ-নগর পরিকল্পনাবিদ এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যানের প্রকল্প পরিচালক মো. আবু ঈসা আনছারী এবং চট্টগ্রাম নগরের আপদকালীন পরিকল্পনা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চুয়েটের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহজালাল মিশুক।
সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী, কাউন্সিলর মো. জহিরুল আলম জসিম, ইপসার পরিচালক পলাশ চৌধুরী, ইলমার নির্বাহী পরিচালক জেসমিন সুলতানা পারু, সেভ দ্য চিলড্রেনের ম্যানেজার সায়মন রহমান, ইউএনডিপির টাউন ম্যানেজার মো. সারোয়ার হোসেন খান, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের প্রধান নির্বাহী উৎপল বড়ুয়া, ডিএসকের প্রজেক্ট ম্যানেজার আরেফাতুল জান্নাত, মমতার সিনিয়র ডিরেক্টর স্বপ্না তালুকদার প্রমুখ। সভা আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেন করে সেভ দ্য চিলড্রেন, ইপসা ও ইউএনডিপি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকুতুবদিয়ার অদূরে ১২ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী
পরবর্তী নিবন্ধমহেশখালীর গহীন পাহাড়ে মদের কারখানা