চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায় নির্বাহীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে ‘ম্যানেজমেন্ট ডেভেলাপমেন্ট প্রোগ্রাম’ নামের প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)। চট্টগ্রাম চেম্বার এবং আইবিএ’র যৌথ উদ্যোগে ‘এক্সিকিউটিভ লার্নিং প্রজেক্ট ফর চট্টগ্রামের অধীনে শুরু হতে যাওয়া প্রোগ্রামটি গতকাল বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন সম্পন্ন হয়। চট্টগ্রাম চেম্বারের ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ সেন্টার অব এক্সিলেন্স (বিসিই) এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশীদার হিসেবে কাজ করবে। ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে যাচ্ছে বলে জানান চেম্বারের কর্মকর্তারা।
ভার্চুয়াল এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার ও আইবিএ একটি অত্যন্ত চমৎকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যা নিসন্দেহে একটি দৃষ্টান্তমূলক মাইলফলক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্য সংগঠনের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ যার মাধ্যমে জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবার কাছে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর এবং এ ধরনের উদ্যোগ দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। দক্ষতার অভাবে আমাদের দেশে সেবা আমদানি হয়ে থাকে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের সফ্ট স্কিলের অভাব এবং মানসিক অনমনীয়তা পেশাগত দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্তরায়। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বৈষয়িক গুরুত্বের চেয়ে শিল্পভিত্তিক ও কারিগরি দক্ষতার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। একই সাথে চট্টগ্রাম চেম্বারকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র মত দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সকল স্তরের শিল্পের জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও সাথে নিয়ে নীড বেইজড প্রশিক্ষণ আয়োজনেরও আহবান জানান তিনি। এছাড়া সব ধরণের ব্যবস্থাপকদের জন্য সহজে ভর্তিযোগ্য এবং মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজনের ওপর গুরত্বারোপ করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, মিড লেভেল ও টপ লেভেল ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিংয়ের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম চেম্বার ও আইবিএ’র এই কর্মসূচির মাধ্যমে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বেশি উপকৃত হবে। বিশ্ব মহামারীর কারণে পুরো পৃথিবীর মানুষ থমকে গেলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সারা দেশে ১০০টি এসইজেড এর পাশাপাশি মাতারবাড়ী এলাকায় গভীর সমুদ্র বন্দরসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রায় এক ডজন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কাজেই নির্বাহীদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা চট্টগ্রাম চেম্বারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ। আগামী দিনে আরো নতুন নতুন কোর্সের মাধ্যমে নির্বাহীদের যোগ্য করে গড়ে তোলে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি আরো ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে।
আইবিএ’র পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, সরকারের ভিশন ২০২১ এবং ২০৩০ এর এসডিজি লক্ষ্যপূরণ এবং ২০৪১ এর উন্নত বাংলাদেশ গঠনসহ ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য মানবসম্পদের দক্ষতার উন্নয়ন অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক উপাদান। এক্ষেত্রে জাতীয় লক্ষ্যপূরণে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সকল স্তরের ব্যবস্থাপকদের দক্ষ করে গড়ে তোলা আইবিএ’র অন্যতম দায়িত্ব। দেশের বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম চেম্বারের সাথে যৌথভাবে কাজ করতে পেরে আমি আনন্দিত। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাথে এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে চট্টগ্রামে মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রথমবারের মত আইবিএ’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ আয়োজনের যে শুভ সূচনা হতে যাচ্ছে তা দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে সক্ষম হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আজকের এই দিনটি চট্টগ্রামের জন্য ঐতিহাসিক একটি দিন। আইবিএ বাংলাদেশের খ্যাতনামা বিজনেস এবং ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মধ্যম ও উচ্চ সারির নির্বাহীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন এবং জাতীয় অর্থনীতিতে আরো বেশি উৎপাদনশীল ও কার্যকর ভূমিকা পালনে এই কর্মসূচি অনেক বেশী সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি। এ ধরণের উদ্যোগ আমাদের নিজস্ব মানবসম্পদ তৈরীতে সাহায্য করবে যাতে করে স্থানীয় পেশাদার টপ লেভেল নির্বাহী সৃষ্টি করা যায়। এই কর্মসূচী মানসম্পন্ন এবং টেকসই হবে বলে চেম্বার সভাপতি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, কনফিডেন্স সিমেন্ট’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ এবং প্রান্তিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার গোলাম সরওয়ার। এছাড়া চেম্বারের পরিচালকদের মধ্যে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন একেএম আক্তার হোসেন, মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, এস এম আবু তৈয়ব, অঞ্জন শেখর দাশ, বেনাজির চৌধুরী নিশান, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর ও শাহজাদা মো. ফৌজুল আলেফ খান, চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক, বিকেএমইএ’র সাবেক পরিচালক শওকত ওসমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও চেম্বারের পলিসি বিষয়ক সাব–কমিটির আহবায়ক ড. মো. সেলিম উদ্দিন, উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র পরিচালক লুৎমিলা ফরিদ এবং বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ।
এদিকে চেম্বারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম চেম্বার এবং আইবিএ’র এই যৌথ উদ্যোগের আওতায় ব্যবস্থাপনা ডিগ্রীধারী, নির্বাহী এবং ব্যবসায়ী সমাজকে শিল্পমূখী প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদানের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে আরো বেশী উৎপাদনমূখী ও কার্যকর অবদান রাখার লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হবে। ২০২০ এর নভেম্বর মাস থেকে শর্ট কোর্সের মাধ্যমে এই প্রোগ্রাম চালু এবং পর্যায়ক্রমে লং কোর্স চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই কর্মসূচীতে ভর্তি প্রক্রিয়া, কারিকুলাম, শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সনদ প্রদান ইত্যাদি সরাসরি আইবিএ’র মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এর বিশেষত্ব হচ্ছে চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী, নির্বাহী এবং শিক্ষার্থীদেরকে এই প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তবে ভর্তি পরীক্ষায় আইবিএ’র মান অনুসরন করা হবে। যার ফলে কেবলমাত্র যোগ্য প্রার্থীরাই এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ প্রকল্পের আওতায় যারা ভর্তি হবেন তাদের কোন ক্লাসের জন্যই ঢাকায় যেতে হবে না। কেবলমাত্র প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে সনদপত্র সংগ্রহ করতে হবে।