শেখ হাসিনা : অদম্য বাংলাদেশের অনিরুদ্ধ অগ্রযাত্রায় মুকুট মনি

ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী | মঙ্গলবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

শেখ হাসিনার কথা দিয়েই শুরু করি, ‘বাইগার নদীর তীর ঘেঁষে ছবির মতো সাজানো সুন্দর একটি গ্রাম। সে গ্রামটির নাম টুংগীপাড়া। বাইগার নদী এঁকে বেঁকে গিয়ে মিশেছে মধুমতি নদীতে। এই মধুমতি নদীরই অসংখ্য শাখা নদীর একটি হলো বাইগার নদী। নদীর দুই পাশে তাল তমাল-হিজল গাছের সবুজ সমারোহ। ভাটিয়ালি গানের সুর ভেসে আসে হাল ধরা মাঝির কণ্ঠে থেকে, পাখির গান আর নদীর কলকল ধ্বনি এক অপূর্ব মনোরম পরিবেশ গড়ে তোলে। প্রায় দুইশ বছর পূর্বে মধুমতি নদী এই গ্রাম ঘেঁষে বয়ে যেত। এই নদীর তীর ঘেঁষেই গড়ে উঠেছিল জনবসতি। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ধীরে ধীরে নদীটি শুকিয়ে যায়। চর জেগে গড়ে উঠে আরও অনেক গ্রাম। আমাদের পূর্বপুরুষরা টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জমিজমা ক্রয় করে বসতি স্থাপন করেন। তারা কলকাতা থেকে কারিগর ও মিস্ত্রি এনে দালান বাড়ি তৈরি করেন। এই বাড়ি শেষ হতে লেগে যায় অনেকদিন’।
প্রায় দুইশত বছরের স্বাধীনতা বিবর্ণ হয়ে যেতে থাকে বাঙালির সত্তা থেকে। পরিবর্তিত ও উত্তাল পারিপার্শ্বিক বাস্তবতার এ প্রেক্ষিতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখের ভোর বেলা মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করে শেখ হাসিনা।
একদিকে পাকিস্তানের শাসকদের বেদনা বিধূর ষড়যন্ত্র, হতাশ মুজিব সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে বাঙালির ভাগ্য নিয়ে দারুণভাবে ব্যথিত ও চিন্তিত। অন্যদিকে বেগম মুজিবের প্রথম সন্তান হারানোর বেদনা পুষিয়ে শেখ হাসিনার এ ধরায় আগমন। সব মিলিয়ে আনন্দের উচ্ছ্বাস, মৃদুমন্দ বাতাসে উল্লাস, আকাশে বাতাসে গুঞ্জরণ। মিশ্র অনুভূতি বিপন্ন বিলাস। বিপন্নতার এই বিভ্রান্ত সময়েও ২৭ বছরের মুজিবকে উজ্জীবিত করে, উল্লসিত করে, স্বপ্নবান করে। একজন শেখ হাসিনার আগমনে।
যদিও এই সন্তানের জন্মের সময় তিনি কাছে ছিলেন না। বেগম মুজিবের ১৭ বছর বয়সে চৌদ্দ বছরের সংসার জীবনে প্রথম প্রস্ফুটিত পুষ্প। শেখ হাসিনা।
শেখ মুজিবুর রহমান তখন জাতিসত্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কলকাতা ঢাকায় বিক্ষিপ্ত বিচরণের ব্যস্ত। ষড়যন্ত্রের পাকিস্তান বাঙালির ভাগ্যাকাশে কালবৈশাখীর নির্মমতা নিয়ে আবির্ভূত হয়। এভাবেই দেশকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে প্রিয় প্রথম সন্তানের জন্মের প্রায় এক মাস পর কলকাতা থেকে তিনি দেশে এসে প্রথম সন্তানের মুখ দর্শন করেন।
একটু পরের দিকে তাকালে দেখা যায়, ছয় দফা আন্দোলন নিয়ে জেলখানায় থাকার কারণে প্রথম এই সন্তানের লেখাপড়ার খোঁজখবর রাখতে পারেননি। বেড়ে উঠাকে মন দিয়ে অবলোকন করতে পারেননি। পারেননি অনেক কিছুই। জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার বিবাহের সময় মুজিব কাছে থাকতে পারেননি। পারেননি থাকতে দ্বিতীয় মেয়ে রেহানার বিয়েতেও। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম বর্বরতা তা হতে দেয়নি। শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান জন্মের সময় বাবা মুজিব ও মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা কাছে থাকতে পারেননি পাকিস্তানিদের বর্বরতার জন্য। এরই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার কন্যা পুতুলের প্রথম সন্তান জন্ম গ্রহণের সময় পুলিশি বাধার কারণে শেখ হাসিনাও পাশে থাকতে পারেননি। এ যেন ধারাবাহিক নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা, ধারাবাহিক অসহযোগিতা। কখনো স্বৈরাচারদের দ্বারা, কখনো প্রকৃতিপ্রদত্ত।
নিঃসঙ্গতার এ শিক্ষা থেকেই দেশপ্রেমের বোধ এবং ব্যাপ্তি ছড়িয়ে যায় বাঙালি মননে। যা নিঃস্বার্থ রাজনীতির প্রতিভূ হয়ে ফিরে আসে, ছড়িয়ে যায় দেশময়।
এভাবেই একজন শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের সকলকেই তিল তিল করে রাজনৈতিক আবর্তে আবর্তিত করেছেন, কষ্ট পেয়েছেন, কষ্ট দিয়েছেন পরিবারকে, সন্তানদের। দেশের জন্য, জাতিসত্তার মুক্তির জন্য, একটি বাংলাদেশের জন্য, যা বিশ্বের অনন্য বিস্ময়। রাজনীতির আচারিক প্রেক্ষিত ব্যবহারিক জীবন দিয়ে শিক্ষা দিয়েছেন তিনি। প্রথাগত নিয়মে সন্তান জন্মের সময় বাবার পাশে থাকা, বিবাহের সময় সন্তানকে আশীর্বাদ করা- কোন প্রক্রিয়ার সাথেই বাঙালির মুজিব যুক্ত থাকতে পারেননি।
এই আচারিক শিক্ষাই একজন শেখ হাসিনাকে অতিদ্রুত আদর্শিক রাজনীতিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। যার ফলাফল বাংলাদেশ পাচ্ছে। বিশ্বের মানুষ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে। পিতা মুজিবের রক্তের প্রবাহ, আদর্শের আঙ্গিক, চেতনার ফসল, বিবেকের বিকাশ, দেশপ্রেমের মশাল একজন হাসিনাকে পোক্ত করে তুলেছে, বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছে। তিল তিল করে তিনি রাষ্ট্রনায়ক হয়েছেন। হয়েছেন বিশ্ব বিবেকও। এই কষ্টার্জিত জীবনই আজ এদেশের মানুষের জন্য অলংকার , অহংকার।
১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে অক্টোবর মাসের ১ তারিখে ৩২ নম্বরের অসম্পূর্ণ বাড়িতে উঠেন চার সন্তানসহ বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিল তিল করে গড়া তাঁর এই বাড়িটি। প্রতিটি ইট কংক্রিটে তাঁর হাতের ছোঁয়া। ইতিহাসের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হলো, মুজিব এ বাড়িতে থাকতে পেরেছিলেন সব মিলিয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছর।
এখানে উল্লেখ করা যায়, শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কোন সন্তানের জন্মের সময় বেগম মুজিবের কাছে থাকতে পারেননি। এ নিয়ে বাঙালি জাতি গোষ্ঠীর সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত বেগম মুজিব, আমাদের জাতিসত্তার মাতা-বঙ্গমাতার কোন দুঃখবোধ কিংবা বেদনাবোধ ছিল না। অন্তত তিনি তা কখনো প্রকাশ করেননি। এখানেই তিনি মহিমান্বিত, সার্বজনীন, জাতিগোষ্ঠীর মমতাময়ী মাতা। শেখ হাসিনার জন্য সেটি ছিল আরও কঠিন।
ভারত বিভক্তির সন্ধিক্ষণে জাতিসত্তার অন্তর্দ্বন্দ্ব, চিহ্নিত নেতৃত্বের প্রতারণা, হঠাৎ ধর্মবোধ নেতৃত্বকে আবিষ্ট করে ফেলা প্রভৃতি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়াগুলো দেশাত্মবোধ সম্পন্ন নেতাদের বিমর্ষ করে তুলেছিল।
বয়সে তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন না। বাবার অহঙ্কারের রাজনৈতিক স্মৃতি, বাংলাদেশের জন্মের আলোকিত অধ্যায়, মায়ের স্নেহভরা মমতাময়ী অতীত, কঠিন জীবনাচার, নিয়ম করে জেলখানায় আসা যাওয়া, রাজনৈতিক নেতাদের সাথে মত বিনিময়ের সময়ে সাথে থাকা, রাজনীতির ব্যবহারিক পাঠ, অবর্জনীয় আচার-আচরণ, শেখ হাসিনাকে নিজের অজান্তেই পোক্ত করে তোলে। যার পুরস্কার বাংলাদেশ পাচ্ছে।
স্কুল-কলেজে রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া তাঁর নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হয়ে যায়। তারপর অল্প বয়সে অনেকটাই অপ্রত্যাশিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। অপ্রত্যাশিত এজন্যে যে, বাবা জেলখানায়। মা একা সংসারের ঘানি টানছেন। ছোট ভাই বোন স্কুলগামী। মায়ের সংসারে টানাটানি। পরিবেশ সম্পূর্ণ প্রতিকূল। মায়ের ইচ্ছায়, বাবার সম্মতিতে, পরিবেশ পরিস্থিতির ধোঁয়াশাচ্ছন্নতা শেখ হাসিনাকে বধুতে বরণ করে নেয়।
সময়টি ছিল ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর। হাসিনা সবেমাত্র এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করেছেন। বয়স ২০ বছর। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উজান স্রোতে চলে, অসহিষ্ণুতাকে বরণ করে, অস্বাভাবিকতাকে গ্রহণ করে, অনাচারকে চ্যালেঞ্জ করে একজন শেখ হাসিনা তাঁর যুবতী জীবনকে চর্চা করেছেন। বাবার আদর্শ, মায়ের আচারিক রীতিনীতি, বোধ ভাবনা, রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ের প্ররোচনা শেখ হাসিনাকে তাঁর অজান্তেই রাজনীতিক করে গড়ে তোলে।
জার্মানিতে স্বামীর কর্মস্থলে গিয়ে ১৫ দিনের মাথায় পরিবারের সকলকে হারিয়ে নিঃস্ব, রিক্ত
হৃদয় ভাঙ্গা শেখ হাসিনা ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে জীবনের কঠিন সময়ের মুখোমুখি হন। প্রয়াত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, তাঁর মমতাময়ী সহধর্মিনী এবং ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মহামতি ইন্দিরা গান্ধীর অন্তরময় সহযোগিতা ও পরামর্শে ভারতের দিল্লিতে কিছুদিন বসবাস করেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পর ভাঙ্গা মন, ভাঙ্গা দেহ বুক ভরা হতাশ নিয়ে দেশে আসেন শেখ হাসিনা। জনগণের অগাধ, অবাধ ভালোবাসাকে সঙ্গী করে ব্যবহারিক রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।
১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে ৩৩ বছর বয়সি শেখ হাসিনা যখন দেশে ফেরেন, তখন সব হারানোর অসহায়ত্ব ও নিঃসঙ্গতা শেখ হাসিনার বুকফাটা কান্নার বিস্ফোরণে বিকশিত হয়। তাঁর সাথে প্রকৃতির কান্না যুক্ত হয়ে প্রবল বর্ষণ আকারে আকাশ ভেঙে পড়ে।
দৃঢ়ভাবে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। ক্রমেই এ হাত শক্ত থেকে দৃঢ় হতে থাকে। দুঃখ ও হতাশার সাগরে ডুবে থেকেও দেশাত্মবোধ ও কর্তব্যবোধকে ধারণ করে বাংলাদেশের জন্য মুক্তির পথ খুঁজতে থাকেন তিনি। এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন থেকে নেয়া শিক্ষার অংশ।
দীর্ঘ ২১ বছরের বৈপরীত্যকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে। পাহাড় সমান জঞ্জালকে পরিশুদ্ধ করে চেতনার পথে বাংলাদেশকে পরিচালিত করার
জন্য জীবন বাজি রাখেন। বারবার মৃত্যুর পথ তাঁকে ফিরিয়ে দেয়। এভাবেই তিনি হয়ে যান অকুতোভয়, মৃত্যুঞ্জয়ী।
২০০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের বৈপরীত্যকে বিভ্রান্তির ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের নেতৃত্বের হাল ধরেন দ্বিতীয়বার। বঙ্গবন্ধুর এই কন্যা তাঁর জীবনে চড়াই-উতরাইয়ের সাথে নিবিড় ভাবে নিবিষ্ট ছিলেন। বাবা মায়ের থেকে নেয়া পাঠ তাঁকে দৃঢ় প্রত্যয়ী করে তুলে। শেখ হাসিনা মাকে বুঝতেন। মায়ের অনুভূতি, অনুশোচনা, বেদনাগুলোকে শোষণ করে মায়ের সাথে একাত্ম থাকার চেষ্টা করতেন। মায়ের অভাব অনটনে মাকে সান্তনা সহানুভূতি দিতেন।
২০০৯ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে বাংলাদেশ যে ঠিকানায় পথ চলছে, তা শেখ হাসিনার ঠিকানা। যে চেতনাকে ধারণ করছে, তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। যে প্রত্যয় নিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তা মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের স্বনির্ভর বাংলাদেশের কাঙ্খিত প্রত্যয়। যে বাংলাদেশ ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ৮৮ ভাগ বিদেশি ঋণ নিয়ে মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট প্রদান করেছিল, সেই বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট এখন ছয় লাখ কোটি টাকার উপরে। যার শতকরা ৮৮ ভাগ দেশীয় সম্পদ নির্ভর। এটি শেখ হাসিনার অর্জন। যে বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বসহ বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর চক্ষুশূল ছিল, সেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বে বন্ধুর ভারে আপ্লুত, উচ্ছ্বসিত, সমৃদ্ধ।
আজ শেখ হাসিনার বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উল্লেখযোগ্য ৭২.৮ বছর । প্রশংসনীয় শিক্ষার হার শতকরা ৭৪.৭ । আজকের বাংলাদেশ রকমারি পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে ১৯৫ দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। খাদ্যশস্য উৎপাদনের পৃথিবীতে গর্বিত আদর্শিক অবস্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর জীবনের ৭৫ তম বর্ষে পদার্পণ করছেন। এটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য যেমন অহংকারের, তেমনি গর্বের।
বাংলাদেশ থেকে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ২৫ প্রকার পণ্য পৃথিবীর ৬৫ দেশে রপ্তানি হতো। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ থেকে এখন ৭৮০ প্রকার পণ্য পৃথিবীর ২০০ দেশে রপ্তানি হয়। বর্তমানে প্রবাসী-আয় ২৫ বিলিয়ন ডলার। এ বছরের রপ্তানি আয় ৩৯ বিলিয়ন ডলার। দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ২২২৭ ডলার। বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার মেগাওয়াট। ১৯৭২ এর দুই কোটি ডলারের রিজার্ভ এখন ৪৮ বিলিয়ন ডলার। বেকারত্ব দূর করা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করার জন্য দেশে অঞ্চলভিত্তিক শিল্প জোন স্থাপন স্থাপিত হচ্ছে। শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা বাংলাদেশ দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় অবিরত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কভিড- ১৯ এ প্রচেষ্টাকে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করলও পৃথিবীর অপরাপর দেশ থেকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও সার্বিক অগ্রগতি আশাপ্রদ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে, আঞ্চলিক শক্তি ও প্রভাব সংরক্ষণের দেশটি অদ্বিতীয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটকে ধারণ করে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে মানবিক নেত্রী হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন এবং শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তৈরি পোশাক, সবজি, মিঠা পানির মাছ, ধান, ফলমূল, কাঁঠাল, আলু , আম, ইলিশ উৎপাদনে দেশটি পৃথিবীর ২০০ দেশের ভিতরে ১ থেকে ১০ এ অবস্থান করছে।
এসব কৃতিত্ব ও অর্জন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের অদম্য নেত্রী শেখ হাসিনার। উন্নয়নের রোল মডেল, অনিরুদ্ধ নেত্রী, বৈশ্বিক বহুমাত্রিক রাজনৈতিক, সমজিক, মানবিক গুণধরি নেত্রী শেখ হাসিনা। শুধুই কি তাই! আইসিটি খাতে ষাটটি দেশে বাংলাদেশ এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করছে চলতি বছরে। লক্ষ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দের ভিতর এ খাতকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা।
বাংলাদেশ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দ্রুততম অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশ। ২০২৬ খ্রিস্টাব্দে দেশটি এলডিসি থেকে উঠে আসবে। এডিবির পূর্বাভাসে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ২০২১-২২ এ ধরা হয়েছে ৬.৮%। পোশাক রপ্তানি থেকে দেশের জাতীয় আয় ৮৫%। বর্তমানে দেশজ উৎপাদনের আকার ৩০ লাখ কোটি টাকা। এ অর্থ বিশ্বের ৪৭ টি দেশের মোট আয়ের ২০%। অর্থনৈতিক আকারের দিক থেকে দেশটি বিশ্বের ৪৩ তম। লক্ষ, ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এ সক্ষমতা ছাব্বিশে তুলে আনা। নারীর ক্ষমতায়নে দেশটি এশিয়ায় শীর্ষে। বিশ্বের সপ্তম।
বিশ্বের দেশে দেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করে চলেছে। ভ্যাকসিন হিরো, ইউনিসেফের চ্যাম্পিয়ন অফ দা ডেভেলপমেন্ট ফর ইউথ, এশিয়াটিক সোসাইটির ঠাকুর শান্তি পুরস্কার-২০১৮, রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মানবিক সহায়তা প্রদান করার জন্য ইন্টার্নেশনাল এচিভম্যান্ট আওয়ার্ড, গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড, লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে জন্য ইউএন উইমেন এর পক্ষে প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন, বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ, ইউনেস্কোর ট্রি অফ পিস, জাতিসংঘ কর্তৃক আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে সাউথ সাউথ পুরস্কার, এবং সর্বশেষ এসডিএসএন আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কারের সাথে ‘মুকুট মণি’ আখ্যা বাংলাদেশের সম্মানকে অনেক উপরে নিয়ে গেছে।
উন্নয়নের ক্যারিশমেটিক কারিগর শেখ হাসিনা নতুন বাংলাদেশের স্থপতি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করে তিনি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের নেত্রী। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশকে তিনি তিলে তিলে, ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। নতুন প্রজন্মের স্লোগান, ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ তাই যথার্থ।
তাঁর ৭৫ তম জন্মদিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাই তাঁকে। অদম্য বাংলাদেশের অনিরুদ্ধ অগ্রযাত্রায় মুকুট মণি শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক, কর্ণফুলী গবেষক, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ অধ্যয়ন কেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়ক ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকসই গ্রীন স্থাপত্যের খোঁজে!
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার