শেকড়ের কাছে

রিতু পারভী | শনিবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২২ at ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

উন্মুক্ত বিশ্বগ্রাম আর মুক্ত সংস্কৃতির এই সময়ে শেকড়ের পরিচয়ে দ্বিধাগ্রস্ত মানুষ। বহু সংস্কৃতির মিলনে দ্রুতই পরিবর্তন হচ্ছে প্রেক্ষাপট। অবাধ তথ্যপ্রবাহে মানুষ চরমভাবে ভুগছে শেকড়ের পরিচয়ে। সংকট প্রকট হয় যখন ধর্মের সাথে জাতীয়তাবাদ-এর সংঘর্ষে নাজুক অবস্থায় পড়ে প্রবহমান ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি। বিশেষ করে যখন পরস্পরের উপর জোর প্রভাব তৈরির শক্তি প্রয়োগ করা হয়।

ধর্ম মানুষের জীবনে বেশ শক্ত একটা প্রভাব ফেলতে সমর্থ্য। ধর্মীয় সংস্কৃতি নির্দিষ্ট কোন এলাকার বহুকাল ধরে চলে আসা সংস্কৃতির উপর প্রভাব ফেলে এবং বেশীর ভাগ সময় এই সংস্কৃতির সাথে মিশে গিয়ে একটা মিশ্র সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়। সহমর্মিতার সহাবস্থানে এই দ্বন্দ্ব কখনো কঠিন আকার ধারণ করে না।

সমস্যা হয় তখনই যখন পারস্পরিক সহনশীলতা ভুলে এর চর্চাটা প্রকট আকার ধারণ করে। অতি সমপ্রতি বাংলা নববর্ষ পালন নিয়ে আমাদের দেশে বাঙালি সংস্কৃতি আর মুসলিম ধর্মের সংস্কৃতির মধ্যে দ্বন্দ্ব যখন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়, তখনই ব্যাপারটা সামনে আসে আর এর খারাপ প্রভাবগুলো আলোচনায় উঠে আসে।
অবস্থানগত কারণেই বাঙালি সংস্কৃতির সাথে সনাতনী ধর্মের সংস্কৃতির মিল রয়েছে। এখানে ধর্মের চেয়ে ভৌগলিক অবস্থান বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে কারণ একই ধর্ম অবস্থানগত কারণে এর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি পাল্টে গেছে অন্যকোন স্থানে। এভাবেই ধর্ম যখন এর জন্মভূমি থেকে বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন ভৌগলিক অবস্থানে প্রবাহিত হয়েছে সেই নির্দিষ্ট এলাকার সংস্কৃতির সাথে মিলেমিশেই তা লালিত হয়েছে। সেই এলাকার যে শেকড়ের সংস্কৃতি তার সাথে মিলেই ধর্মীয় সংস্কৃতি তার জায়গা করে নেয় সবসময়। তাকে বাদ দিলে মানুষ শেকড়ের যে বন্ধন তা হারিয়ে যাযাবরে পরিণত হয়।

বাঙালি সংস্কৃতির রয়েছে অতি পুরানা ইতিহাস, এর মূল প্রোথিত অনেক গভীরে। এই এলাকার মানুষের নিত্য জীবনের অনুতে-অনুতে বাঙালির সংস্কৃতি অনুরণিত হয়। এদের বাদ দিলে মানুষ অবশ্যই অস্তিত্বর সংকটে ভুগবে। এর পরের প্রজন্ম হবে শেকড়হীন আর শেকড় বিহীন প্রজন্মের কাছে কখনোই ভালো কিছু আশা করা যায় না। অর্থাৎ সমগ্র জাতি পড়বে এক চরম জটিলতায়।

এই যে ধর্ম এবং সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব তা জিইয়ে রাখে একটা গোষ্ঠী। তাদের কাছে ধর্ম মূল ব্যাপার না, একটা দ্বন্দ্ব তৈরি করে সমাজে অসহিষ্ণুতার চর্চাটাই তাদের কাছে মুখ্য। মানুষে মানুষে ভালোবাসার বন্ধনটা জরুরী যার মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব জটিলতম সমস্যা। ধর্ম যদি বিভেদ তৈরি করে তাহলে আর তার উপযোগিতা থাকে না। ভালোবাসা, পরম সহিষ্ণুতার চর্চাটা আসে শেকড় দৃঢ হলে, হালকা বাতাসে তা ভেসে না গেলে। অস্থিরতার এই চরম সময়ে সকল ভেদ বিভেদের মধ্য থেকেই জেগে উঠুক শুভ বুদ্ধি, শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হোক মানুষ। নিজ নিজ শেকড়ের যে টান তা’ সুরক্ষিত হোক, সংরক্ষিত হোক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদায় বার্মা
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে ১১ হাজার ইয়াবা জব্দ, আটক ৭