শিশির থেকে শবনম

মোহছেনা ঝর্ণা | শনিবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

ইতিহাস নিয়ে কাজ করার আনন্দ হচ্ছে ইতিহাসের কোনো উপসংহার নেই। আপনি যেখানে শেষ করছেন, সেখান থেকেই হয়তো অন্য কেউ শুরু করবে। অন্তহীন এক যাত্রাই হলো ইতিহাস।

 

ইতিহাসের পাতায় পাতায় কত অজানা কথা কতভাবে যে লুকিয়ে থাকে! সেই ইতিহাসে থাকে গৌরবময় অধ্যায়। থাকে বিষাদ ভরা অধ্যায়। সুখ, দুঃখ, হাসিকান্নার এইসব ইতিহাস উন্মোচনের আনন্দ যে কী তীব্র! এই তীব্র আনন্দ পাওয়ার নেপথ্যের কষ্টটুকু সেইসব ইতিহাসপ্রেমীদের জন্যই না হয় তোলা থাক।

আজ ইতিহাসের সেরকমই গৌরবোজ্জ্বল এক বীরকন্যার কথা বলতেই কলম ধরেছি। বীরকন্যা শিশিরকণা গুহ কিংবা শবনম খানম শেরওয়ানী।

অগ্নিযুগের অগ্নিকন্যা, বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্তের সাথে একসাথে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন শিশির কণাগুহ। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’এর কর্মী শিশির কণার জন্মস্থান চট্টগ্রাম না বিক্রমপুরে তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে চট্টগ্রামের লালখান বাজারে নিজস্ব বাড়িতেই কেটেছে তার শৈশব, কৈশোর।

শিশিরকণার বাবা রজনীকান্ত গুহ আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ডাঃ খাস্তগীর স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন। ছিলেন চট্টগ্রাম আর্য্য সঙ্গীত একাডেমির ছাত্রী। বিপ্লবী কন্যা কল্পনা দত্ত স্কুলে শিশিরকণার সিনিয়র ছিলেন। কল্পনা দত্তের সাথেই বিভিন্ন গোপন সভায় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই পরিচয় হয় ইতিহাসের আরেক নিভৃতচারী কিন্তু আলোকিত মানুষ লোকমান খান শেরওয়ানীর সঙ্গে। জেলখানায় বিয়ে হয় তাদের। শিশিরকণা ধর্মান্তরিত হন।

লোকমান খান তার নতুন নাম রাখলেন শবনম খানম শেরওয়ানী। শিশিরকণা গান করতেন, কবিতা লিখতেন, প্রবন্ধ লিখতেন, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সম্পর্কেও ছিল তার জ্ঞান, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কোহিনূর পত্রিকায়, বান্ধবী পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। রেডিওতে কথক হিসেবে কাজ করতেন। শিক্ষকতা পেশায় নিবেদিত ছিলেন।

ভিন্ন সমাজ, ধর্ম সব পেরিয়ে তিনি তার কাজ আর অমায়িক ব্যবহার দিয়ে নিজগুণেই অন্যতম হয়ে উঠেছিলেন সকলের কাছে। লোকমান খানের ব্যবসায়ে ছন্দ পতন, ভারত থেকে কপর্দকহীন অবস্থায় দেশে ফেরার পর আবার সড়ক দুর্ঘটনায় লোকমান খানের মারাত্মক আহত অবস্থায় অনেক বেশি দুরাবস্থার মধ্যে খাবি খাচ্ছিলেন শবনম খানম শেরওয়ানী। কিন্তু বিপদে ধৈর্য ধরে একের পর এক প্রতিকূল অবস্থা ডিঙিয়ে গেছেন এই মহান মানুষটি। চট্টগ্রামের পাঠানটুলীর খান

বাড়িতে বউ হয়ে এসে খুব দ্রুতই কাজে, কর্মে, মেধায় মননে হয়ে উঠেছিলেন অনেকেরই আস্থাভাজন জায়গা। অর্জন করেছেন রত্নগর্ভা মায়ের স্বীকৃতিও। তার কনিষ্ঠ পুত্র ডঃ বদরুল হুদা খান, একজন বিশ্ববিখ্যাত ইলার্নিং বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, লেখক, প্রাবন্ধিক। 2015 সালে United States Distance Learning Association (USDLA)( বিশ্বব্যাপী ইলার্নিংয়ের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব) হিসেবে সম্মানে ভূষিত করে। এই কনিষ্ঠ পুত্রের কাছে লেখা মায়ের চিঠিটা পড়ে মনে হলো শেষ বেলায় এসে কোথাও কি কোনো অভিমান জমেছিল শবনম খানম শেরওয়ানীর মনে! তা না হলে কেন ছেলেকে লিখলেন, ‘আমি বড়ো অসহায়।’

আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ডঃ আনোয়ারা আলমের অনেক পরিশ্রমলব্ধ একটি কাজ এই ‘শিশির থেকে শবনম’ বইটি। করোনার মহামারিতে পারিবারিক জীবনে অনেক প্রিয়জন হারিয়ে মুষড়ে যাওয়া মানুষটি শঙ্কায় ছিলেন তার কাজটি শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন করতে পারবেন কি না। কিন্তু শিল্পের মানুষ তিনি। সাহিত্যের

মানুষ। যত দুঃখ বেদনাই আসুক, শিল্পের দায় শোধ করার তাড়না থেকেই আমরা পেয়ে যাই লেখকের অসাধারণ কিছু কর্ম। এই বইটিও আমার কাছে সেই অসাধারণ কর্ম হিসেবেই গ্রহণযোগ্য হলো। তিনি অনেকটা সিন্ধু সেচে মুক্ত সংগ্রহের মতো দুষ্প্রাপ্য তথ্য সংগ্রহ করেছেন বলা যায়। তাঁর হাতের কাছে ছিল না

তেমন বিশদ আকারে কোনো তথ্য উপাত্ত। নেই শবনম খানম সম্পর্কে তার শৈশব, কৈশোর সম্পর্কে বলার মতো কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী, প্রমাণ। তবু যেখানে যা পেয়েছেন, সেখান থেকেই নির্যাসটুকু ঠিকই নিংড়ে নিয়েছেন লেখক তার অদম্য মনোবল দিয়ে। আর তা দিয়েই আমরা পেয়ে যাই বীরকন্যা শিশিরকণা গুহ কিংবা শবনম খানম শেরওয়ানীর মতো আলোকিত মানুষকে জানার সুযোগ।

বান্ধবী পত্রিকায় শবনম খানমের সাহিত্য কর্মগুলো পাঠকের জন্য বড় এক প্রাপ্তি। ১৯৫৩ সালে রচিত তাঁর ভাবনাগুলো এখনো সময়োপযোগী।

একটা কবিতা তুলে দিলাম।

কবিতার নাম ‘মুখে সাম্যের গান গায়’

ভন্ডের যুগ আজি

সাধু সেজে যত পাজী

এই দুনিয়ার চালক সাজিয়া ভুলাতে চায়

কাজে বিভেদের সৃষ্টি করিয়া সাম্যের গান গায়।

কবিতার লাইনগুলো কয়েকবার পড়তে হলো। চমৎকার লাগলো।

অগ্নিযুগের বিপ্লবী নারী শিশির তথা শবনম খানম শেরওয়ানীকে আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য লেখক আনোয়ারা আলমকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। তিনি শুরুটা করলেন। কিন্তু শবনম খানম শেরওয়ানীর জীবন এত বিস্তৃত তাকে নিয়ে আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়েছে।

উত্তম সেনের প্রচ্ছদে পরিণত বয়সের শবনম খানম শেরওয়ানীর চোখ দুটির ঔজ্জ্বল্য দৃষ্টি এড়ায় না। বইটি প্রকাশ করেছে শৈলী প্রকাশন।

হাটহাজারীতে পাহাড় কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

হাটহাজারী প্রতিনিধি ম

হাটহাজারীর ১নং ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ছোট কাঞ্চনপুর এলাকায় অবৈধভাবে পাহাড় কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

হাটহাজারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবু রায়হান বলেন, গভীর জঙ্গলের পাহাড়গুলোতে এ ধরনের অবৈধভাবে মাটিকাটা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। যেহেতু এই এলাকাগুলোতে সরাসরি গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই গাড়ি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে পায়ে হেঁটে এই গভীর জঙ্গলের পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে। যখনই তারা প্রশাসন বা পুলিশের গাড়ি দেখে তখনই তারা মোবাইলের মাধ্যমে সকলকেই অবহিত করে। মাটি ভর্তি গাড়ি রেখেই ড্রাইভার পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে মালিক ও ড্রাইভারকে সেই স্থানে ডেকে আনা হয়। তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করবে না মর্মে অঙ্গীকার করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআলো আর অন্ধকারের গল্প
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে পাহাড় কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা