শিক্ষার্থীদের মনে শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে

তাহেরা বেগম | বুধবার , ৯ নভেম্বর, ২০২২ at ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী তিনটি বিষয়ই একটির সাথে সাথে অন্যটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। শিক্ষা ছাড়া শিক্ষক যেমন মুল্যহীন, শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার্থীও মূল্যহীন। আমরা জানি একটি জাতির গঠন এবং মূল্যায়নের মূলত চাবিকাঠি হল শিক্ষা। আর শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয় হলো শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাদানের স্থান, শিক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষার পরিবেশ। শিক্ষার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রাকশিক্ষিত সমাজ মূলত মৌখিকভাবে এবং অনুকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গল্প বলার মাধ্যমে জ্ঞানদ মূল্যবোধ এবং দক্ষতা এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মের কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে।

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর এই মেরুদণ্ডকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে রাখার কাজটি শিক্ষকরাই করে থাকেন। মহান আল্লাহ তায়ালাই তাদের মর্যাদার মুকুট পরিয়েছন। আমাদের মহানবী (সঃ) বলেন, ‘তোমরা জ্ঞানার্জন কর এবং জ্ঞানার্জনের জন্য আদব শিষ্টাচার শেখো এবং তাকে সম্মান কর যার থেকে তোমরা জ্ঞানার্জন কর’। প্রিয়নবী ছিলেন সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষক, যার ঘোষণা তিনি নিজেই দিয়েছেন। ‘নিশ্চয়ই আমাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে’। শিক্ষক সবসময় মনে রাখবেন দেশের নেতা, রাষ্ট্র প্রধান তথা দেশের ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ সকলেই কোনো না কোনো শিক্ষকের ছাত্র ছিলেন। যিনি শিক্ষাদান করে তিনি আলোকিত মানুষ। কাজটি তার জীবনকে আলো দান করে। শিক্ষকের নিকট সমাজের প্রত্যাশা অনেক।

শিক্ষকগণ সমাজের প্রত্যাশা যতটা পূরণ করতে পারবেন সমাজ ও ন্যূনতম ততভাগ সম্মান শিক্ষকদের দেবেন। ছাত্রের মনের সুপ্ত প্রতিভা জাগানো, জ্ঞানের আলোয় তাদের অন্তর আলোকিত করা, তাদেরকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব শিক্ষকের। আগ্রহী শিক্ষার্থীর কাছে স্বীয় হৃদয় মন উজাড় করে দিতে শিক্ষক কোনো কার্পণ্য করেন না। ইতিহাস বলে অতি অত্যাচারী শাসকও নতশিরে গুরুর সামনে দাঁড়িয়েছে। গুরুকে অসম্মান করেছেন এমন নজির নেই। চাণক্য শ্লোকে আছে,‘এক অক্ষরদাতা গুরুকেও গুরু বলিয়া মান্য করিবে, যে তা করে না, সে শতবার কুকুরের মত জন্মগ্রহণ করিবে এবং চণ্ডালত্ত লাভ করিবে’। অতীতে আর্থিক দীনতা থাকলেও সম্মানের এবং শ্রদ্ধার একটি আলাদা স্থান বরাদ্দ ছিল শিক্ষকদের জন্য। এখন দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে শিক্ষকদের জন্য ননসেন্স নামক একটি বিশেষণ বরাদ্দ হয়েছে।

একজন মানুষের জীবনের পরিপূর্ণতা বলতে বুঝায় জীবনের বিকাশ, ব্যক্তিত্বের জাগরণ ও সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ। এ সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে শিক্ষকের অগ্রণী ভূমিকার কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এক্ষেত্রে শিক্ষক যথেষ্ট পরিশ্রমী, ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ী হয়ে শিক্ষার্থীর মনের খোরাক মেটাতে সচেষ্ট হন।

যে নিয়মিত লেখাপড়া করে এবং শেখার প্রতি আগ্রহী ও যত্নশীল থাকে তাকে শিক্ষার্থী বলা হয়। শিক্ষার্থীরা অনুকরণপ্রিয়। তাই একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যে শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন শিক্ষার্থীরা তাই শিখবে। মানুষের ভেতরের আসল মানুষটিকে পরিচর্যা করে খাঁটি মানুষ বানাবার প্রচেষ্টার নাম শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থী দুর্বার প্রাণশক্তির প্রতীক। তাদের মধ্যে লুকিয়ে আছে শক্তির প্রাচুর্য, সম্ভাবনার সীমাহীন রাজ্য। আর শিক্ষকের অবস্থান শিক্ষাব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে। শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষক হচ্ছেন জ্ঞানের আলো। প্রাচীনকালে শিক্ষার্থীকে গুরুগৃহে একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অবস্থান করে শিক্ষাগ্রহণ করতে হত। শিক্ষককে পরম আন্তরিকতা সহকারে কর্তব্য পালন করতে হবে। শিক্ষকের এই কর্তব্য নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষকের উপর বর্তায় না, সমগ্র সমপ্রদায়ের ভূমিকাকেই নির্দেশ করে। পরিশেষে বলা যায়, অভিভাবকদের সহযোগিতায় শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি জাগিয়ে তোলা যায় তবে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে উপকার পাওয়া যেতে পারে। শিক্ষকদেরও পরম আন্তরিকতার সাথে তাদের কর্তব্য পালন করতে হবে।
লেখক : প্রাক্তন শিক্ষক, সেন্ট মেরিস স্কুল, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বপ্নসৌধ
পরবর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে