র‌্যাম্প নির্মাণে টাইগারপাসে শতবর্ষীসহ শতাধিক গাছ কাটবে সিডিএ

রেল কর্তৃপক্ষ গাছ কাটার অনুমোদন দেয়নি, বন বিভাগ ৪৬টি কাটার অনুমতি দিয়েছে ।। ভিন্ন উপায়ের কথা বললেন নগর পরিকল্পনাবিদরা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য টাইগারপাসে কাটা পড়ছে শতবর্ষীসহ শতাধিক গাছ। টাইগারপাস থেকে কদমতলীমুখী শহরের সুন্দর রাস্তাটির গাছগুলো কাটার জন্য ইতোমধ্যে মার্কিং সম্পন্ন করা হয়েছে। মাটি পরীক্ষার পর র‌্যাম্পের মূল অবকাঠামো নির্মাণের আগেই এসব গাছ কেটে ফেলা হবে বলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সূত্রে জানা যায়, ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন চট্টগ্রামের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বিস্তৃত এঙপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ১৫টি র‌্যাম্প নির্মাণের কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে জিইসি মোড়ে র‌্যাম্প নির্মাণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে টাইগারপাসে র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্ট চলছে। এই র‌্যাম্পটি নির্মাণকাজ শুরু করার আগে সিডিএ শতবর্ষীসহ বিভিন্ন বয়সের শতাধিক গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে। রাস্তার মাঝ বরাবর র‌্যাম্প তুলে এলিভেটেড একপ্রেসওয়েতে যুক্ত করতে গাছগুলো কাটার কোনো বিকল্প নেই বলে সিডিএ জানিয়েছে। তারা জানায়, নগরীর দোতলা রোড হিসেবে খ্যাত রাস্তাটির উপরের রাস্তা থেকে নিচের রাস্তাটি বেশ নিচে। মাঝের খালি জায়গা র‌্যাম্প নির্মাণে ব্যবহৃত হবে। সিআরবি সংযোগ সড়কের উপর থেকে নিচের সড়কে নামার সিঁড়ির গোড়া পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ মিটার দীর্ঘ মাঝের জায়গা ধরে র‌্যাম্প নির্মাণ করা হবে।

তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, র‌্যাম্পটি রাস্তার মাঝের জায়গায় নির্মাণ না করে নিচের রাস্তার বাম পাশে নির্মাণ করলে গাছগুলো রক্ষা পায়। এতে র‌্যাম্পের ডিজাইনে সামান্য পরিবর্তন আনতে হবে। শতবর্ষীসহ শতাধিক গাছ রক্ষা করার জন্য ডিজাইনে পরিবর্তন আনা কঠিন কাজ নয়। শুধুমাত্র একটি গাছ রক্ষার জন্য শত কোটি টাকার প্রজেক্টের ডিজাইন পাল্টানোর অনেক নজির পৃথিবীতে রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার মাঝে থাকা গাছগুলোতে সাদা ও লাল রং দিয়ে মার্কিং করেছে সিডিএ।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গাছ কাটার অনুমোদন না দিলেও বনবিভাগ থেকে অনুমোদন পাওয়া গেছে। বন বিভাগ জানিয়েছে, র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য সিডিএকে ৪৬টি গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে শিরীষ, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া ও পেয়ারা প্রজাতির গাছ। তবে সিডিএ বড় বড় গাছগুলো মার্কিং করে অনুমোদন নিলেও মাঝে থাকা অপেক্ষাকৃত ছোট গাছগুলোও কাটা পড়বে।

টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত সড়কটি নগরবাসীর কাছে ‘দ্বিতল’ সড়ক হিসেবে পরিচিত। সবুজে ঘেরা অনন্য এই সড়কের একটি অংশ গেছে পাহাড় ঘেঁষে উপর দিয়ে। আরেকটি অংশ নিচে। মধ্যবর্তী পাহাড়ি ঢালে রয়েছে ছোটবড় শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব গাছে রয়েছে নানা প্রজাতির পাখির বাসা। এখন র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য গাছ কাটলে সড়কটি সৌন্দর্য হারাবে।

সিডিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গতকাল বলেছেন, ৪৬টি গাছ কাটা পড়বে। এগুলো না কেটে র‌্যাম্প নির্মাণের সুযোগ নেই।

বিডিনিউজ জানায়, এ বিষয়ে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, দেখুন, উন্নয়ন কাজ করতে গেলে কিছু গাছ হয়ত কাটা পড়ে। কিন্তু বিপরীতে আমরা অনেক বেশি সংখ্যায় গাছ রোপণও করি। যেমন আউটার রিং রোডে ২০ হাজার গাছ কাটা পড়েছে। লাগানো হচ্ছে ৫ লাখ গাছ। এই প্রকল্পেও আমরা অনেক গাছ রোপণ করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেল কর্তৃপক্ষ, বন বিভাগ ও পরিবেশবাদীরা কী বলছেন
পরবর্তী নিবন্ধঈদের ছুটি একদিন বাড়ানোর সুপারিশ