রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি : সমন্বয়হীনতা দূর হোক, রেহাই চাই ভোগান্তি থেকে

| রবিবার , ১৫ মে, ২০২২ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর অলিগলিসহ প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির ফলে নাজেহাল অবস্থা নগরবাসীর। নগরীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে দেখা দিয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। চট্টগ্রাম ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরীর বহু সড়কের বেহাল দশা। যখন তখন যত্রতত্র ওয়াসার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এখন নগরবাসীর জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এমন বেপরোয়া খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নগরীর অধিকাংশ সড়কই খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ আছে,একটি রাস্তা খোঁড়া শেষ হতে না হতেই আরেকটি রাস্তা কাটা শুরু হয়ে যায়। একই রাস্তা বারবার কাটারও অভিযোগ করেছেন অনেক নগরবাসী। রাস্তা কাটার মধ্যে কোনো শৃঙ্খলা বা নিয়ম মানছে না এ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। রাস্তার পাশেই রাখা হচ্ছে রাস্তা কাটার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। বলা বাহুল্য যে, নগরীর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও জনদুর্ভোগ লাঘবে ইতোপূর্বে ‘সড়ক খনন নীতিমালা’ প্রণয়ন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সেই নীতিমালায় বলা হয়, বর্ষা মৌসুম হওয়ায় মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত খোঁড়াখুঁড়ি পরিহার করতে হবে। তবে এ নীতিমালার তোয়াক্কা করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সড়কে অবাধে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এতে প্রায় সব এলাকাতেই সড়কে নেমে নাজেহাল হতে হচ্ছে নাগরিকদের। গতকাল দৈনিক আজাদীতে ‘তিন কিলোমিটার সড়কে তিন বছর ভোগান্তি, দায়ী করা হচ্ছে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িকে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন মোড়। হাটহাজারী সড়কের এ অংশের দূরত্ব আনুমানিক তিন কিলোমিটার। তবে গত তিন বছরের অধিক সময় ধরে সড়কটি নিয়ে দুর্ভোগে আছেন নগরবাসী। কারণ, বছরের বেশিরভাগ সময় বেহাল অবস্থায় থাকে সড়কটি। বর্তমানেও সড়কটির বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ হয়ে আছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য সড়কটি প্রথম কাটে চট্টগ্রাম ওয়াসা। সংস্কার না হওয়ায় পরবর্তীতে প্রায় দুই বছর খানাখন্দের জন্য দুর্ভোগ ছিল পথচারীরদের কাছে। এরপর সংস্কার হলেও বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য সেবাসংস্থাও সড়কটির বিভিন্ন অংশে খোঁড়াখুঁড়ি করে। সর্বশেষ গত বছর দেড়েক ধরে আবারও এ সড়কে কোপ পড়ে ওয়াসার। মাঝখানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) প্যাচওয়ার্ক করে মেরামত করলেও খোঁড়াখুঁড়ির জন্য তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। গত সপ্তাহে পরিদর্শনে সড়কটির বেহাল দশা দেখা গেছে। সংস্কারের অভাবে সড়কের বিটুমিন ও ইট-কংক্রিট উঠে গিয়ে সৃষ্ট গর্তগুলোর আকৃতিও বড় হচ্ছে দিন দিন। তার উপর বিভিন্ন জায়গায় ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি সড়কের বেহালদশাকে আরো বেশি শোচনীয় করে তুলছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি। স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, বর্তমানে বিবিরহাট মোড়ে ভাঙা অবস্থায় আছে সড়কটি। রেলক্রসিংয়ের মোড়েও একই অবস্থা। বিবিরহাট থেকে আতুরার ডিপো পর্যন্ত বাম পাশে বিটুমিন উঠে গেছে।
উন্নয়নকাজে ধীরগতি এবং সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই জনদুর্ভোগ বাড়ছে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তাঁরা বলেন, সমন্বয়হীনতার কারণে বিভিন্ন সময় রাস্তা কাটাকাটি হচ্ছে। এ জন্য জাতীয়ভাবে প্রকল্প অনুমোদন এবং অর্থ ছাড়ের সমন্বয়হীনতা মূলত দায়ী। নগর সরকার প্রথা চালু করে সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে এলে এই সমস্যা থাকবে না। ওয়াসা যেভাবে রাস্তা কাটছে তাতে জনদুর্ভোগ কম হচ্ছে। ওয়াসার সঙ্গে বিভিন্ন টেলিফোন কোম্পানিগুলো শহরজুড়ে রাস্তা কাটছে। এ কারণে নগরে ধুলাবালু উড়ছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্প, খোঁড়াখুঁড়ি ও জনভোগান্তি রোধে সড়ক খনন নীতিমালা থাকলেও সেটি উপেক্ষিত। ফলে নগরে জনভোগান্তি কিছুতেই কমছে না। এই দুর্ভোগ লাঘবে এলাকাভিত্তিক কমিউনিটি গ্রুপের সঙ্গে সেবা সংস্থার আলোচনা ও করণীয় নির্ধারণ, সড়ক খনন নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ, নীতিমালা অনুযায়ী ‘ওয়ান স্টপ’ সমন্বয় সেল এবং সিটি করপোরেশনের অঞ্চলভিত্তিক কয়েকটি ‘মনিটরিং সেল’ কার্যকর করার পরামর্শ তাদের।
মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন মোড়- এই সড়কের কাজ শেষ হবে কবে-সে বিষয়ে আজাদীর সংবাদে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। তাতে তাঁরা বলছেন, এ সড়কে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে কতদিন লাগবে তাঁরা নিজেরাই জানেন না। তাঁরা বলেন, ওনারা (চসিক) বার বার বাধা দেয়। তা না হলে তো একটানা কাজ করে ফেলতাম। ঈদের পরেই অনুমতি দিল। ভাঙা সড়কের জন্য মানুষের দুর্ভোগ প্রসঙ্গে বলেন, এবার আমরা সেটা দেখবো। আমাদের কাজ হয়ে গেলেই সিটি কর্পোরেশনকে ঠিক করে দিতো বলবো। খুব বেশি সময় লাগবে না। সিটি কর্পোরেশনকে আমরা বিভিন্ন সময়ে ক্ষতিপূরণের টাকাও পরিশোধ করেছি।
এতে বোঝা যায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাথে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা সীমাহীন। আমরা চাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর হোক। সাধারণ মানুষের দুর্গতি রোধে অতি দ্রুত সড়কটির কাজ শেষ হোক-সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৈদেশিক ঋণ : সতর্ক থাকতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধএকটি শুভ দিন