রাশিয়ার বিরুদ্ধে কেন ভোট দেয়নি বাংলাদেশ, জানালেন প্রধানমন্ত্রী

আমেরিকার পরামর্শে র‌্যাব সৃষ্টি করেছিল বিএনপি ।। রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকবে

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৩১ মার্চ, ২০২২ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘে তোলা প্রস্তাবে বাংলাদেশ কেন ভোটদানে বিরত ছিল, পরে ইউক্রেনে মানবিক সংকট নিরসনের দাবিতে কেন ভোট দিল, সেই ব্যাখ্যা সংসদে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধের পেছনে উসকানি ছিল, সে কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যখন প্রস্তাব তোলা হল, বাংলাদেশ তাতে ভোট দেয়নি। তবে দ্বিতীয় প্রস্তাবটি ইউক্রেনের মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে হওয়ায় বাংলাদেশ পক্ষে ভোট দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে রাশিয়ার অবদানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে দেশের এই অবস্থান তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু জানতে চেয়েছিলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘে ভোটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আসলে কী ছিল। প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সারাদেশে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেছে। নিম্নবিত্তদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্যে দেয়া হচ্ছে। রমজানেও জিনিসপত্রের দাম সহনীয় থাকবে। জাতিসংঘের প্রথম প্রস্তাবে বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে যখন প্রথম প্রস্তাবটি এল, আমরা দেখলাম সেই প্রস্তাবে কোনো মানবাধিকারের কথা নেই। যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা নেই। একটা দেশের বিরুদ্ধে ভোট, সেটা হল রাশিয়া। তখন আমি বললাম, না, এখানে তো আমরা ভোট দেব না। কারণ যুদ্ধ তো একা একা বাঁধে না। উসকানি তো কেউ না কেউ দিচ্ছে। দিয়ে তো বাঁধাল যুদ্ধটা। তাহলে একটা দেশকে নিন্দা করা হবে কেন? সেইজন্য আমরা ভোটদানে বিরত ছিলাম।
রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ বন্ধুত্বের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে যখন পাকিস্তানের পক্ষে; রাশিয়া তখন আমাদের পক্ষে দাঁড়াল। কাজেই দুঃসময়ে যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে আমরা নিশ্চয় তাদের পাশে থাকব। কিন্তু তারা যদি কোনো অন্যায় করে, নিশ্চয় সেটা আমরা মানব না। আর আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু যুদ্ধটা বাঁধাল কারা, সেটাও আমাদের দেখতে হবে। সেজন্য আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। যেহেতু একটি দেশের বিরুদ্ধে, এজন্য সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা ভোট দেব না।
দ্বিতীয় প্রস্তাবের প্রসঙ্গ ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ভোট দেওয়ার এখন যে প্রস্তাবটা এসেছে, এই যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সবাই কষ্ট পাচ্ছে, সেখানে মানবাধিকারের বিষয়টি ছিল। দ্বিতীয় প্রস্তাবে যেহেতু মানবাধিকারের বিষয়টি রয়েছে, সেজন্য আমরা ভোট দিয়েছি। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, যখন একটি দেশের বিরুদ্ধে প্রস্তাব- আমরা ভোট দিইনি। যখন মানবতার বিষয়টি সামনে এসেছে, আমরা ভোট দিয়েছি। আমার মনে হয় এটা একেবারে স্পষ্ট। এটা নিয়ে আর কারও কোনও দ্বিধা থাকা উচিত নয়।
র‌্যাব প্রসঙ্গ : র‌্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে সেখানকার বাংলাদেশি দূতাবাস কেন জানতে পারলো না, সে প্রশ্ন সংসদে তোলেন জাতীয় পার্টির মুজিববুল হক চুন্নুর। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাইন-ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে সন্ত্রাস দমনে তখনকার বিএনপি সরকার র‌্যাব সৃষ্টি করেছিল। তবে তারা র‌্যাবকে যথেচ্ছা ব্যবহার করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ আসার পর র‌্যাব জঙ্গি, সন্ত্রাস দমন, হত্যার তদন্তসহ মানবিক কাজই করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, তারা মানবাধিকার রক্ষায়ই কাজ করছে।
র‌্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে। এদের কাজটি হচ্ছে বাংলাদেশে যখন একটি অস্বাভাবিক সরকার থাকে অথবা অবৈধ দখলকারী কেউ যদি থাকল- তখন তারা খুব ভালো থাকে। তাদের খুব গুরুত্ব থাকে। যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলমান থাকে তারা ভালো থাকে না। এজন্য তারা সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে লেগেই থাকে। যতই ভালো কাজ করুক, তারা তার পেছনে লেগেই থাকে, কারণ তারা ভালো দেখতে চায় না।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাস সব সময় সক্রিয় ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন এই ব্যাপার নিয়ে তারা আলোচনা করেছে, তখন দূতাবাসের কাউকে ঢুকতে দেয়নি। এটা আরো দুই বছর-তিন বছর আগের কথা। এটার প্রক্রিয়া বহুদিন থেকেই চলছে। আমরা বার বার তাদের জানাচ্ছি।
যারা মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কিছু কিছু লোক আছে, তারা একটু বুদ্ধিজীবী, ইন্টেলেকচুয়াল, অমুক-তমুক নানা ধরনের সংগঠন তারা করে। এই সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারলে তারা পয়সা যোগাতে পারে। তা না হলে তারা পয়সা যোগাতে পারে না। আমরা দেখেছি ব্যাপারটা সেখানেই। এখান থেকে তাদের একটা প্রতিনিধি গেল। সেখানে একটি সম্মেলন হল। সেখানে আমাদের দূতাবাস বা কাউকে তারা থাকতে দেয়নি। উপস্থিত হতে দেয়নি। সেখানে আপত্তিটা আমাদের দেশের লোক করেছে। আজকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে যে বদনাম, এজন্য অন্যদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের দেশের লোক বদনামটা করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই র‌্যাবের বিরুদ্ধে বদনামতো আমার দেশের মানুষ করে যাচ্ছে। এজন্য বলার কিছু নেই। আর সেই জন্য এই স্যাংশনটা এসেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাধীন গণমাধ্যমের প্রসারে গণতন্ত্র সুসংহত হয় : স্পিকার
পরবর্তী নিবন্ধদ্রুত কমছে পানি ধারণ ক্ষমতা