দ্রুত কমছে পানি ধারণ ক্ষমতা

জেগে উঠছে অসংখ্য চর, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল নিয়ে সংশয়

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩১ মার্চ, ২০২২ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা দ্রুত কমছে। অসংখ্য চর জেগে উঠছে নদীতে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর মাধ্যমে বন্দর চ্যানেল ঠিকঠাক রাখার কার্যক্রম পরিচালিত হলেও নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা ক্রমে কমে যাওয়ায় দশ হাজার কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল পুরোপুরি পাওয়া নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, কর্ণফুলী নদীর প্রধান চরিত্র হচ্ছে ভরাট হয়ে যাওয়া। জোয়ার ভাটা থাকলেও এই নদীতে প্রচন্ড ‘সিলটেশান’ হয়। ছোট্ট একটি খুঁটি পুঁতে রাখলেও তা ঘিরে তৈরি হতে থাকে বালুচর। নদীর এই চরিত্রের কারণেই প্রতি দশ বছর পর এখানে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প পরিচালনার পরামর্শ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু নানা ধরনের জটিলতায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে ‘সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর’ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৫০ মিটার চওড়া এলাকায় ড্রেজিং পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদী থেকে ৫১ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। ৩০২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে একদিকে নদী থেকে প্রচুর বালি ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। একই সাথে নদীর বিভিন্ন অংশে অসংখ্য চর গড়ে উঠছে। নদীর উপকূল এবং প্রতিটি খালের মুখে বড় বড় চর তৈরি হয়েছে। এসব চরের কারণে নদীর পানি ধারণক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে।
কর্ণফুলী নদীর ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় দশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে কিনা সংশয় দেখা দিয়েছে। চরগুলো কেটে পুরো মাটি উত্তোলন করা না হলে শহরের পানি ঠিকঠাকভাবে সরতে পারবে না বলে মন্তব্য করে বলা হয়েছে খালের মুখে নদীতে যেভাবে বড় বড় চর তৈরি হয়েছে তাতে পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হবে।
সূত্র জানিয়েছে, নদীতে চর জেগে উঠার পেছনে অবৈধ দখলদারিত্বকে দায়ী করা হচ্ছে। নদীর মোহনা থেকে উপরের দিকে অন্তত দশ কিলোমিটার এলাকায় উভয় তীরে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের চিহ্নিত করা এসব স্থাপনার মধ্যে বড় বড় কারখানা, ডক ইয়ার্ডও রয়েছে। কিন্তু অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ এবং দখলদারদের কবল থেকে নদী উদ্ধার সম্ভব হয়নি। অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছিল প্রশাসন। কিন্তু এই অভিযান নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
দখলে দূষণে বিপর্যস্ত কর্ণফুলীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত করছে। কর্ণফুলীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার উপর মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। একের পর এক চর জেগে উঠায় নদীর ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
কর্ণফুলী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেন, কর্ণফুলীর স্বাভাবিক চরিত্র হচ্ছে ভরাট হওয়া। অবৈধ দখলদারদের অপতৎপরতায় নদী ভরাটের এই চরিত্র প্রকট হয়ে উঠছে। কর্ণফুলীর অবস্থা খুবই নাজুক বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অসাধু শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং ভূমিদস্যু মিলে চট্টগ্রামের প্রাণ এই কর্ণফুলী নদীকে হত্যা করে ফেলছে। মানুষের লোভের বলি হচ্ছে খরস্রোতা এই নদী। নদীর সরু হয়ে গেছে। বহু জায়গা ভূমিদস্যু এবং দুর্নীতিবাজরা গিলে খেয়েছে। নদীর ধারণ ক্ষমতা যেভাবে কমছে তা সামনের দিনগুলোতে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার উপর মারাত্মক রকমের প্রভাব ফেলবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাশিয়ার বিরুদ্ধে কেন ভোট দেয়নি বাংলাদেশ, জানালেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬