যেমন চলছে কঠোর লকডাউন

প্রথমদিন কম থাকলেও দ্বিতীয় দিনে নগরীর সড়কে বেড়েছে রিকশা ও প্রাইভেট গাড়ি

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৬ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

কঠোর লকডাউনের প্রথমদিন নগরীর মূল সড়কগুলোয় প্রাইভেট গাড়ি ও রিকশার চলাচল কম থাকলেও গতকাল দ্বিতীয় দিন ছিল চোখে পড়ার মত। পাশাপাশি সড়কে প্রথম দিনের তুলনায় গতকাল জনসমাগমও ছিল বেশি। নগরীর কিছু মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ তল্লাশি চালালেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তদারকি চোখে পড়েনি। কর্ণফুলী নদীর ঘাটগুলোতে পণ্য খালাস ছিল স্বাভাবিক। তাছাড়া রাজধানীতে পুলিশের মুভমেন্ট পাস নিয়ে সমালোচনা তৈরি হলেও চট্টগ্রামে তেমনটা চোখে পড়েনি। তবে মূল সড়কে না থাকলেও নগরীর অলিগলিতে ছিল মানুষের জটলা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালে শ্রমিকবাহী বাস, মিনিবাস, টেম্পু ও স্বল্প সংখ্যাক সিএনজি অটোরিকশা দেখা গেছে। এছাড়া শ্রমিক পরিবহনের নামে কয়েকটি রুটের বাস ও হিউম্যান হলারও চলেছে। তবে সকাল ১০টার পর এসব যানবাহন চলাচল করতে দেখা না গেলেও প্রাইভেট কার ও রিকশা চলাচল করেছে অবাধে। সকালের চেয়ে বিকেলে প্রায় প্রত্যেকটি সড়কে বেশির গাড়ির উপস্থিতি দেখা গেছে। বিশেষ করে বিকেলে বাজার ও মার্কেটকেন্দ্রিক এলাকায় লোকজনের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বিকেলে ইফতার কেনার জন্যও অনেক স্থানে লোকজনের উপস্থিতি ছিল বেশি।
এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যাংকে কর্মরতরা। অন্যদিকে বন্দরকেন্দ্রিক সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্টে কর্মরত লোকজনকেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কর্মকর্তারা গাড়ি ম্যানেজ করে আসা যাওয়া করলেও অপেক্ষাকৃত নিম্মপদের কর্মচারীরা অফিসে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বেশি। আগ্রাবাদের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে কর্মরত সাকিব আহমেদ। আতুরার ডিপো এলাকায় নিজের বাড়ি হওয়াতে বাসা থেকেই নিয়মিত অফিস করেন তিনি। তিনি বলেন, লকডাউনে সকাল থেকে কোনো গাড়ি পাওয়া যায় না। যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে তাদের সুবিধা রয়েছে। রিকশা করে অফিসে আসতে হয়েছে। এজন্য ভাড়া গুণতে হয়েছে ১৭০ টাকা। আবার দুপুরে অফিস শেষ করে একটি বাইক রাইডে ফেরার সময় টাইগার পাস এলাকায় পুলিশ বাইকটি আটকে দেয়। পরে বাধ্য হয়ে আবার রিকশা নিয়ে বাসায় ফিরেছি।
এদিকে কাঁচা বাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান খোলা থাকায় সকাল থেকে মানুষ প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে বেরিয়েছে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, সকাল ৯টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত খোলা জায়গায় কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্য বেচাকেনার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। সকাল সাড়ে আটটায় নগরীর জামালখান এলাকায় দেখা গেছে, এখানে স্বাভাবিক সময়ের মতো কাঁচাবাজার বসেছে। এছাড়া বিকেল তিনটার পরেও প্রায় সব কাঁচাবাজারে স্বাভাবিক কেনাকাটা চলেছে। সড়কে ভাসমান সবজি ও ফল বিক্রেতারাও স্বাভাবিক সময়ের মতো কেনাবেচা করেছেন।
অন্যদিকে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে নগরীর মাঝিরঘাট, স্ট্যান্ড রোড, মাদারবাড়ি, বাংলাবাজার, সদরঘাট এলাকায় দেখা গেছে পণ্যবাহী ট্রাকের সারি। এখানকার কর্ণফুলী নদীতে প্রায় সবগুলো ঘাটে পণ্য খালাস হয়েছে। পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকার জসিম উদ্দিন বলেন, এখানে কম হলেও প্রায় সব গুদাম থেকে পণ্য সরবরাহ হয়েছে। ট্রাকগুলো পণ্য নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া আসা করছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম। তিনি বলেন, পরিবহন ও গুদাম শ্রমিকদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার আগ্রহ কম। তাই বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। ব্যবসায়িক এলাকা হওয়ায় এখানে লকডাউনের প্রভাব চোখে পড়ে না।
কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, লকডাউন কার্যকরে পুলিশ কাজ করছে। চারিদিকে বিশেষ টিম টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না সেখানে সতর্ক করা হচ্ছে। এখানকার মার্কেটগুলোতেও নজরদারি রয়েছে। তাছাড়া ডাক্তার, নার্স, মেডিক্যাল স্টাফ, কোভিড টিকা ও চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, ব্যাংকার, ব্যাংকের অন্যান্য স্টাফ, সাংবাদিক ও গণমাধ্যম অফিসে কর্মরতরা, টেলিফোন, ইন্টারনেট সেবাকর্মী, বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, জরুরি সেবায় জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিল্প কারখানা-গার্মেন্টস উৎপাদনে জড়িত কর্মী-কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিস, ডাকসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, কর্মকর্তা, বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র দেখিয়ে চলাচল করতে পেরেছেন।
লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে বন্দরে অভিযান : করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বন্দর এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়েছেন বন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম। কাস্টম মোড়, বন্দর ভবন, বন্দর হাসপাতাল, কাস্টম হাউসসহ আশপাশের এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় মাস্ক না পড়ায় দুজনকে ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘোরাফেরা না করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং মাস্ক বিতরণ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১১ দিন পর মৃত্যুশূন্য চট্টগ্রাম
পরবর্তী নিবন্ধইঞ্জিন বিকল হয়ে জেটি ও জাহাজের মাঝে নৌকা