যেভাবে পাওয়া গেল শিশুটিকে

তিন বছর আগে অপহরণ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৪ আগস্ট, ২০২২ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে ‘কাকতালীয়ভাবে’ পাওয়া গেছে বাকলিয়া থেকে অপহৃত শিশু সিয়ামকে। তিন বছর আগে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। তারপর বহু ঘটনা ঘটে গেছে। সিয়ামের মা-বাবা কিন্তু আশা ছাড়েননি সন্তানকে ফিরে পাওয়ার। কোনো কিছুর মাধ্যমে যখন তার খোঁজ মিলছিল না, তখন সিয়ামের স্বজনরা সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে এই ভেবে দিন যাপন করছিলেন যে, ‘তিনি চাইলে সব কিছুই সম্ভব’। সেটাই সত্য হলো। অপহরণের তিন বছর পর সিয়ামকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নিয়ে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

প্রসঙ্গত, অপহরণের পর জড়িত ব্যক্তিকে পিবিআই গ্রেপ্তার করতে পারলেও এতদিন ধরে সিয়ামের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত নগরীতে পোস্টারে শিশুর ছবি দেখে এক প্রত্যক্ষদর্শী সিয়ামের খোঁজ দেয় তার পরিবারকে। পরিবারের থেকে তথ্য পেয়ে পিবিআই অবশেষে শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়। গত মঙ্গলবার শিশুটিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উত্তর পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনাল এলাকা থেকে উদ্ধারের পর গতকাল দুপুরে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া সিয়াম (১১) নগরীর বাকলিয়া থানার বগারবিল সংলগ্ন বাদামতল এলাকার কাতার প্রবাসী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। নগরীর বাকলিয়া এলাকায় দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তিন বছর ধরে বসবাস করছেন সিয়ামের মা। ২০১৯ সালের ২৫ জুন আট বছর বয়সী মাদ্রাসা ছাত্র সিয়াম অপহরণের শিকার হয়েছিল। এ ঘটনায় তার মা ইয়াছমিন বেগম বাদি হয়ে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে পিবিআই মামলার তদন্ত শুরু করে।

তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, বয়সের তুলনায় সিয়ামের মানসিক পরিপক্কতা কম। নাছির নামে এক প্রতিবেশী মার্বেল কিনে দেওয়ার কথা বলে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে নিয়ে আসে তাকে। এরপর ট্রেনে করে প্রথমে কুমিল্লা এবং সেখান থেকে নারায়নগঞ্জ হয়ে ঢাকায় কেরানীগঞ্জে নিয়ে যায়। সেখানে ঘোরাঘুরির একপর্যায়ে সিয়াম নাছিরের হাত থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়। সিয়ামকে হারিয়ে নাছির চট্টগ্রামে ফেরত আসে। সিয়ামের মাকে ফোন করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অন্যথায় ছেলেকে খুনের হুমকি দেয়। সিয়ামের মা ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। সেই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ নাছিরকে গ্রেপ্তার করে। তবে সিয়ামের বিষয়ে সে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। ফলে সিয়ামকে উদ্ধার করা যায়নি।

জিজ্ঞাসাবাদে তখন নাছির জানিয়েছিল, ঋণ পরিশোধের জন্য সিয়ামকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা ছিল তার। ওই মামলায় নাছির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল। আড়াই বছর কারাভোগ করে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে নাছির ছাড়া পায় বলে জানান পিবিআই পরিদর্শক মোজাম্মেল।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা জানান, নাছিরের হাত থেকে পালিয়ে সিয়াম কেরানীগঞ্জ পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনাল এলাকায় ‘আল আমিন রেস্টুরেন্ট’ নামে একটি দোকানের সামনে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। দেখতে পেয়ে দোকান মালিক তার পরিচয় ও অভিভাবকের ফোন নম্বর জানতে চান। কিন্তু সিয়াম কিছুই জানাতে পারেনি। তখন মালিক তাকে দোকানে আশ্রয় দেন।

এদিকে সিয়ামের খোঁজে দেশের প্রত্যেকটি থানা, রেল স্টেশন, আদালত ভবনে পোস্টার লাগিয়ে প্রচারণা চালানো হয়। গত কোরবানির ঈদে আল আমিন রেস্টুরেন্টের মালিক সিয়ামকে তার নিজের বাড়ি চাঁদপুরে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। মালিকের প্রতিবেশী এক মেয়ের শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় সিয়ামদের বাসার কাছে। তার মা সিয়ামকে দেখেন।

সম্প্রতি ওই মহিলা চট্টগ্রামে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। পোস্টারে সিয়ামের ছবি দেখে চিনতে পারেন। তখন তিনি স্থানীয়দের জানান যে, সিয়ামকে তিনি চাঁদপুরে দেখেছেন। এর সূত্র ধরে কেরানীগঞ্জে আল আমিন রেস্টুরেন্টের সন্ধান পাওয়া যায়। তখন সিয়ামের পরিবারের সদস্যদের সেখানে পাঠানো হয় বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করতে। তারা কেরানীগঞ্জে গিয়ে সিয়ামের সেখানে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে। পরে পিবিআই টিম গিয়ে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে।
পিবিআই কার্যালয়ে সিয়ামের সাথে মা ও ভাই-বোনদের দেখা হওয়ার পর এক আবেগ ঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রশাসন করল বহিষ্কার বিভাগ নিল পরীক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধকম্বোডিয়া যাওয়ার পথে চট্টগ্রামে বিলাওয়ালের যাত্রাবিরতি