যক্ষ্মা নির্মূলে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর আরো জোর দিতে হবে

| মঙ্গলবার , ২৮ মার্চ, ২০২৩ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

হ্যাঁ! আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি!’- প্রতিপাদ্য নিয়ে গত ২৪ মার্চ পালিত হয়েছে বিশ্ব যক্ষা দিবস। ওইদিন দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত এক বছরে (২০২২ সালে) সন্দেহজনক মোট ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৯ জনের কফ পরীক্ষায় ১৫ হাজার ৯৯১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে শিশু রোগী শনাক্তের সংখ্যা ৬৬৬ জন। আক্রান্তদের মাঝে চিকিৎসায় সুস্থতার হার ৯৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তদের মধ্যে ক্যাটাগরি১ যক্ষা রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৩৩ জন এবং পুনরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৮ জন। শনাক্ত মোট যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে ফুসফুসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৫৪৫ জন। যা মোট শনাক্তের ৬৬ শতাংশ। আর ফুসফুসবহির্ভূত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৪৪৬ জন। আক্রান্ত রোগীদের মাঝে এক বছরে ১৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। যদিও যক্ষ্মার পাশাপাশি এসব রোগীর অন্যান্য জটিলতাও ছিল। যার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তদের এখন চিকিৎসায় সুস্থতার হার অনেক বেশি। প্রায় ৯৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রাথমিক ভাবে শনাক্তের মাধ্যমে যথাযথ চিকিৎসায় এ রোগ থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব। আগে ‘ যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই’ এমন একধরনের কথা প্রচলন ছিল। যা গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। বর্তমানে বলা হয়ে থাকেযক্ষ্মা হলে রক্ষা মেলে।

সারা পৃথিবীতেই যক্ষ্মার বিস্তৃতি চরম উদ্বেগজনক। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি এবং প্রতিবছর মারা যায় ১৫ কোটি মানুষ। পৃথিবীতে যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। আমাদের বাংলাদেশেরও যক্ষ্মা এখনো একটি প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। সারা দেশে যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যাপক আয়োজন থাকলেও অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে অনেকেই চিকিৎসার বাইরে থেকে যায়। রোগী কাবু হয়ে গেলে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে রোগের বিস্তৃতি নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যানও মেলে না।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেন, শরীরের নানা অঙ্গেই যক্ষ্মা হতে পারে। তবে ফুসফুসের যক্ষ্মার হারই সবচেয়ে বেশি এবং এটি অত্যন্ত সংক্রামক। রোগীর হাঁচিকাশির সঙ্গে জীবাণু বেরিয়ে এসে অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। রোগীর থালাবাসন বা খাবার ভাগ করে খেলেও জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এ কারণে ঘিঞ্জি ও ঘনবসতিপূর্ণ জীবনযাপনে যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি দেখা যায়। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেও যথেষ্ট সচেতন থাকলে যক্ষ্মার সংক্রমণ অনেকাংশেই কমানো যায়। জ্বর জ্বর ভাব, ওজন কমে যাওয়া, দুই সপ্তাহের বেশি কাশি হলো ফুসফুসের যক্ষ্মার সাধারণ লক্ষণ। এ ছাড়া গলার গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, মেরুদণ্ডে অস্বস্তি, পেটে পানি আসা ও ফুলে যাওয়া ইত্যাদি আরো কিছু যক্ষ্মার লক্ষণ। রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

তবে টিউবারকুলোসিস (টিবি) বা যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসের ব্যাধি নয় উল্লেখ করে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, এটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি, যেটা মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে। সরকারের আন্তরিকতার কারণে দেশের হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে যক্ষ্মা রোগীরা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে যক্ষ্মা রোগের পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসা সামগ্রীও রয়েছে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। পরিবারে যক্ষ্মা রোগী থাকলে শিশুসহ অন্য সবাইকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বিত উদ্যোগের ফলে যক্ষ্মা নির্মূল সম্ভব।

পরিবেশ দূষণ, দরিদ্রতা, মাদকের আসক্তি ও অপুষ্টি যক্ষ্মার হার বাড়ার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ভয় না করে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে এ রোগ পুরোপুরি সেরে যাবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত সচেতনতার অভাবে এ রোগ কমছে না। তাই যক্ষ্মা নির্মূলে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর আরো জোর দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে