মোড়ায় দিন বদলের স্বপ্ন শতাধিক নারীর

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | সোমবার , ২২ মে, ২০২৩ at ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার নিভৃত পল্লী কাজীপাড়াহাতিয়াপাড়া। পিছিয়ে পড়া এ জনপদে নেই কোনো ফসলি জমি। এখানকার বেশিরভাগ মানুষের সামাজিক অবস্থান দারিদ্রসীমার নিচে। সেখানে মোড়া তৈরি করে সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা এনেছেন নারীরা।

এই গ্রামের শতাধিক নারী সংসারের কাজ শেষে বাড়তি রোজগারের আশায় মোড়া তৈরি করছেন। অর্থ সংকটে মোড়া তৈরির উপকরণ কিনতে হিমশিম খেতে হতো তাদের। এমন পরিস্থিতিতে পাঁচ মাস আগে কাজীপাড়ার ২০ জন স্বামীহারা ও সুবিধাবঞ্চিত নারীর প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন। মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত এসব নারীর প্রত্যেককে ১০ জোড়া মোড়া তৈরির উপকরণ হিসেবে দেয়া হয় প্লাস্টিকের বেত (রগ) ও টায়ার। প্রফেসর ফেরদৌসীর মানবিক সহায়তার পাঁচ মাসের মাথায় কাজীপাড়ার বিশ নারী ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। মোড়া তৈরি করে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন তারা। তাদের পরিবারে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা। সম্প্রতি মাটিরাঙ্গার কাজীপাড়ায় ঘুরে দেখা গেছে, বাড়ির উঠানে মোড়া তৈরি করছেন আয়েশা আক্তার। মায়ের সাথে বসে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় বাঁশবেতের সমন্বয়ে মোড়া তৈরি করছেন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী আঁখি। শুধু আঁখি নন, স্কুলকলেজ পড়ুয়া এমন অনেকেই লেখাপড়ার ফাঁকে মোড়া তৈরির কাজ করছেন।

এ সময় কথা হয় আয়শা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, স্বামীর পাশাপাশি আমিও আয় করছি। সন্তানের লেখাপড়া আর সংসারের খরচের পর বাড়তি কিছু টাকাও জমিয়েছি।

একটু দূরে পাশের বাড়িতে মোড়া তৈরি করছিলেন দুই জা আকলিমা বেগম ও আমেনা বেগম। তারা বলেন, এখানকার প্রতিটি বাড়িতেই মোড়া তৈরি করা হয়। সংসারের কাজ শেষে সবাই মোড়া তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। কারোরই যেন অবসর নেই। ফেরদৌসী পারভীনের মানবিক সহায়তায় মোড়া তৈরি করে সব পরিবারে কমবেশি আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে বলে জানান আকলিমা।

শত নারীর মোড়া তৈরির ফলে পাহাড়ি জনপদের কাজীপাড়াহাতিয়াপাড়ার প্রতিটি বাড়িই পাল্টে গেছে। নারীদের তৈরি মোড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করেন স্থানীয় পাইকাররা। বিপণন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় প্রায় প্রতিটি ঘরেই বাড়ছে মোড়া তৈরির কাজ। সপ্তাহে একজন নারী দুই থেকে তিন জোড়া মোড়া তৈরি করতে পারেন। আকারভেদে এসব মোড়া প্রতি জোড়া সাড়ে তিনশ টাকা থেকে ছয়শ টাকায় বিক্রি হয়ক। এ থেকে একেকজন সপ্তাহে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা আয় করেন।

এসব নারীর তৈরি মোড়া জায়গা করে নিয়েছে সমতলের জেলাগুলোতে। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে এসব মোড়া সমতলের জেলাগুলোতে বাজারজাত করার কাজটি করেন স্থানীয় পাইকার মো. দেলোয়ার হোসেন। চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর বাজারে পাহাড়ের মোড়ার ব্যাপক চাহিদার কথা জানিয়েছেন তিনি।

মোড়া তৈরিতে নিয়োজিত নারীদের সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হলে মোড়া শিল্প পাহাড়ের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে বলে মনে করেন মাটিরাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর মো. আলাউদ্দিন লিটন।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. ওবাদুল হক বলেন, পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতায় ভূমিকা রাখা এসব নারীকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। পিছিয়ে পড়া জনপদের নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এ সংগ্রাম প্রশংসনীয় বলেও মনে করেন তিনি।

গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন বলেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে নারীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এর আগে নারীদের থামি বুননের উপকরণ ও মোড়া তৈরির উপকরণ দিয়েছি। চলতি মাসে মোড়া বানানোর সাথে সম্পৃক্ত আরো ৫০ নারীকে দশটি মোড়া তৈরির উপকরণ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রী কাতার যাচ্ছেন আজ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬