মোবাইল গেম খেলতে নিষেধ করায় ৫ মাস আত্মগোপন

শিক্ষার্থীকে যেভাবে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিল র‌্যাব

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৮ মে, ২০২২ at ১০:১২ পূর্বাহ্ণ

মোবাইল গেম খেলতে নিষেধ করায় ৫ মাস ধরে আত্মগোপনে ছিল দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে রেস্টুরেন্টে চাকরিও নিয়েছিল ওই কিশোর। ফেসবুকে বন্ধুত্বের ফাঁদ পেতে র‌্যাব সদস্যরা অবস্থান শনাক্ত করে তাকে উদ্ধার করে অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

র‌্যাব জানিয়েছে, ইন্টারনেটে ফ্রি ফায়ার, পাবজিসহ বিভিন্ন গেম ও নিষিদ্ধ পর্নোগ্রাফিতে অস্বাভাবিক আসক্ত হয়ে পড়েছিল ওই কিশোর। গত ৬ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর চান্দগাঁও থানার মোড় থেকে তাকে উদ্ধার করেন র‌্যাব সদস্যরা। ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরের বাসা নগরীর চকবাজার থানার ডিসি রোডের গনি কলোনি। সে স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র।

র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ আজাদীকে জানান, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর দুপুরে বাসায় বসে মোবাইলে ফ্রি ফায়ার গেম খেলছিল ওই কিশোর। তার বাবা-মা দেখতে পেয়ে তাকে শাসন করেন। বকাবকির একপর্যায়ে তার বাবা বলেন, পড়ালেখা না করলে নিজে রোজগার করে খাও। এতে অভিমান করে বাসায় মোবাইল রেখে স্বাধীন জীবনযাপনের চেষ্টায় ওই কিশোর দুপুরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। রাতেও বাসায় না ফেরায় পরদিন তার মা চকবাজার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

পরে ২৬ মার্চ তার মা বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ছেলেকে অপহরণের অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অভিযুক্ত হান্নান, লিও দাস, ও জয় ওই কিশোরের বন্ধু। তার বাবা-মা পরবর্তীতে মামলা ও জিডির কপিসহ র‌্যাবকে জানান। র‌্যাব তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কিশোরের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে উদ্ধার করে।

এম এ ইউসুফ বলেন, উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোর জানিয়েছে, বাসা থেকে বেরিয়ে সে নগরীর অলংকার মোড়ে একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি নেয়। এক মাস ২২ দিন সেখানে চাকরি করে। এরপর চান্দগাঁও থানার মোড়ে এসে আরেকটি রেস্টুরেন্টে চাকরি নেয় গত ১ ফেব্রুয়ারি। ১৫ দিন পর একজন কর্মচারীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরে চাকরি ছেড়ে দেয়। এরপর একই এলাকায় নিউ চান্দগাঁও রেস্ট হাউজ নামে একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি নেয়। সেখান থেকেই তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই কিশোরকে উদ্ধার করে র‌্যাবের চান্দগাঁও ক্যাম্পে আনার পর সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা-মা।
জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোর র‌্যাবকে জানিয়েছে, সে গোপনে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক একাউন্ট ও বেনামি ৫/৬টি সিম ব্যবহার করত। তার হদিস কেউ যেন না পায় এজন্য সে তার ব্যবহৃত মোবাইলটিও ঘরে রেখে গিয়েছিল। আত্মগোপনে থাকার সময় নিজের নাম পাল্টে ফেসবুকে আইডি খোলে। কর্মস্থলেও আসল নাম-পরিচয় গোপন করে। ভিন্ন নামের ফেসবুক আইডি থেকে আত্মীয়স্বজনের আইডিতে গিয়ে কমেন্ট করত।
র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক বলেন, কয়েকটি কমেন্ট দেখে সন্দেহ হলে ফেসবুকে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানো হয়। এভাবেই তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে কিশোর জানিয়েছে, ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেমের পাশাপাশি তারা চার বন্ধু ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির কয়েকটি গ্রুপে যুক্ত ছিল। তিন বন্ধুর মধ্যে দুজন দেশে থাকে। একজন পোল্যান্ডে ও একজন কাতারে থাকে। কিশোর নিজেই নামে-বেনামে ফেসবুকে একাধিক অ্যাকাউন্ট অপারেট করত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধচলন্ত ইজিবাইকে ওড়না পেঁচিয়ে শিক্ষিকার মৃত্যু