মেয়াদ শেষে অগ্রগতি মাত্র ৩৫ ভাগ

আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব ।। সিজিএস কলোনিতে ৪৮৩ কোটি টাকার সরকারি আবাসন প্রকল্প

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৬ জুন, ২০২১ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৪৮৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প অর্থাভাবে ধীরগতিতে চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ের মেয়াদ শেষ হলেও ভৌত কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে গত দুই বছরে প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দ আসে মাত্র ২৪ শতাংশ। ইতোমধ্যে আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ বলছে, পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় সঠিক নিয়মে প্রকল্পের কাজ এগুচ্ছে না।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৪৮২ কোটি ৯৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকায় ‘চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনিতে জরাজীর্ণ ১১টি ভবনের স্থলে ৯টি বহুতল আবাসিক ভবনে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য ৬৮৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ২০১৮ সালের ২৬ জুন একনেকে প্রকল্পটির অনুমোদন হয়। ১১ জুলাই ৩ প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করে চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ। ১৩ আগস্ট দরপত্র উন্মুক্তকরণ করা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন গৃহায়ণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিন প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রকল্পে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, গভীর নলকূপ, ভূগর্ভস্থ জলাধার, পাম্প হাউজ, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা, সিকিউরিটি লাইট, লাইটেনিং এরেস্টর, কম্পাউন্ড ড্রেন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও কমিউনিটি ভবন থাকবে। প্রত্যেকটি ভবনে ৩টি করে লিফট থাকবে। কমিউনিটি ভবনেও থাকবে দুটি লিফট। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে ভবনগুলোতে।
সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ৯টি ২০ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। একেকটি ভবনে ৭৬টি করে ফ্ল্যাট থাকবে। তিনটি আলাদা প্যাকেজে এসব ভবনে ৬৫০ বর্গফুট, ৮৫০ বর্গফুট এবং ১০০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট নির্মিত হবে। ভবনগুলোর প্রত্যেকটি ফ্লোরে ৪টি করে ফ্ল্যাট থাকবে। ভবনগুলোর মধ্যে ২টিতে ৬৫০ বর্গফুটের ১৫২টি, ৪টিতে ৮৫০ বর্গফুটের ৩০৪টি ফ্ল্যাট এবং ৩টিতে এক হাজার বর্গফুটের ২২৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। ফ্ল্যাট নির্মাণের পূর্ত কাজের জন্য পৃথক তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে ৩৯৫ কোটি ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৭ টাকায় চুক্তি করেছে গণপূর্ত বিভাগ। অবশিষ্ট অর্থ অন্যান্য কাজের জন্য ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পের একটি প্যাকেজে ১১০ কোটি ৮৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৯৫ টাকায় ৮৫০ বর্গফুটের ১টি ও ৬৫০ বর্গফুটের দুটি, আরেক প্যাকেজে ১৬০ কোটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৮১২ টাকায় ১০০০ বর্গফুটের ৩টি এবং অন্য প্যাকেজে ১২৪ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৭২০ টাকায় ৮৫০ বর্গফুটের ৩টি ২০ তলা ভবন নির্মাণ করছে পৃথক তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সিজিএস কলোনিতে ৯ ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে কয়েকটি ১৫ তলা, কয়েকটি ১০ তলা, কয়েকটি ৫-৬ তলার কাজ চলছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৯টি ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ নেই। কিন্তু যেভাবে চলার কথা সেভাবে চলছে না। বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে প্রকল্পের কাজ নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা বলছেন তারা। ৪৮৩ কোটি টাকার প্রকল্পে পুরো মেয়াদে বরাদ্দ এসেছে ১০৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৮০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের শেষেও পুরো প্রকল্পের অর্ধেক বিলও পাওয়া যাবে না।
প্রকল্পে একটি প্যাকেজের ঠিকাদার ফ্রেন্ডস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শাহজাহান চৌধুরী আজাদীকে বলেন, গত জানুয়ারিতে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু পুরো মেয়াদে তিন দফায় বরাদ্দ এসেছে মাত্র ১০৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের বরাদ্দ না আসার কারণে কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বরাদ্দের নিশ্চয়তা না পেলে প্রকল্পটি কখন শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি বলেন, বরাদ্দ না থাকলেও দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হলে আমরা (ঠিকাদার) আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। কারণ ব্যাংক ঋণ নিয়ে প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। করোনার মধ্যেও কাজ চলমান রেখেছি। কিন্তু কাজ করে বিল পাওয়া না গেলে ক্ষতির মুখে পড়ব।

এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত চট্টগ্রাম ডিভিশন-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন আহমদ আজাদীকে বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে ঠিকাদার কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করছে। তারপরও তাদের বুঝিয়ে কাজ চলমান রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, পরিশোধিত বিলের চেয়ে কাজ অনেক বেশি হয়েছে। ইতোমধ্যে পুরো প্রকল্পের ভৌত কাজের ৩৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া গেছে ২৪ শতাংশ। আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য ১৫০ কোটি টাকার চাহিদা ছিল। কিন্তু বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি সুন্দরভাবে শেষ করার জন্য নিয়মিত বরাদ্দ প্রয়োজন। এখন মেয়াদ শেষ হওয়ায় আরও দুই বছর সময় বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হলে চট্টগ্রামে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সংকট অনেকটা ঘুচবে বলে মনে করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচাক্তাই-খাতুনগঞ্জে নৌ বাণিজ্যে ধস
পরবর্তী নিবন্ধনির্বাচন কর্মকর্তা ও সাবেক কাউন্সিলরসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা