চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে নৌ বাণিজ্যে ধস

স্লুইচ গেট নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৬ জুন, ২০২১ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

চাক্তাই খালের কর্ণফুলী মোহনায় স্লুইচ গেট নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা এবং খাল ভরাট করে বাঁধ দেয়ার প্রভাবে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে নৌপথে পণ্য পরিবহন আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ থেকে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর হাতিয়াতে নৌপথে পণ্য পরিবহন হয়ে থাকে। কিন্তু চাক্তাই খালে এখন নৌকা প্রবেশ করতে না পারার কারণে পণ্য উঠানামা করতে হচ্ছে কর্ণফুলী মোহনায়। ফলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ থেকে আলাদা পরিবহন ভাড়া করে নৌকাতে বোঝাই করতে হচ্ছে। এতে প্রতি বস্তা পণ্য পরিবহনে দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, একটা সময় চাক্তাই খাতুনগঞ্জের সিংহভাগ বাণিজ্য হতো নৌপথে। বর্তমানে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় নৌ পথে বাণিজ্য নেমে আসে মাত্র ১০ শতাংশে। গত ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) স্লুইচ গেট নির্মাণের জন্য চাক্তাই খালের একাংশ ভরাট করে ফেলে। যার ফলে পণ্য পরিবহণে নৌকা ঘাটে ভিড়তে পারছে না। আবার পণ্য পাঠাতে হলে চাক্তাই খালের মোহনা পেরিয়ে পণ্য লোড আনলোড করতে হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে চাক্তাই খাল ‘চীনের দুঃখ হোয়াংহো’ নদীর মতো ব্যবসায়ীদের দুঃখে পরিণত হয়েছে। গত দুই দশকে চাক্তাই খালে দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পলি জমে খাল ভরাট হয়ে যাওয়া এবং তলা পাকাকরণের কারণে স্থায়ীভাবে নাব্যতা হারায় খালটি। এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে কার্যকর ড্রেজিং না হওয়ার কারণে পানির ধারণক্ষমতা কমে গেছে। ফলে বৃষ্টি ছাড়াই চাক্তাই খাতুনগঞ্জের নিচু এলাকার দোকান গুদামে পানি প্রবেশ করছে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সিডিএর স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় গত দুই বছর ধরে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীদের নৌকায় বিভিন্ন অঞ্চলে মালামাল পাঠাতে বেগ পেতে হচ্ছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সন্দ্বীপ এবং হাতিয়াতে পণ্য পাঠাতে হয়।
চট্টগ্রাম চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর আজম দৈনিক আজাদীকে বলেন, চাক্তাই খাল দিয়ে শত বছর ধরে নৌপথে সারাদেশের সাথে বাণিজ্য হতো। সময়ের সাথে সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় সেটি কমে আসে। তবে এখন মূলত সিডিএর স্লুইচ গেট নির্মাণের চাক্তাই খালের মোহনায় বাঁধ দেয়ার কারণে ঘাটে নৌকা আসতে পারছে না। অথচ আমাদেরকে সিডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, স্লুইচ গেট নির্মাণের সময় নৌপথে পণ্য পরিবহণে কোনো সমস্যা হবে না। অথচ এখন আমাদেরকে চাক্তাই খালের কর্ণফুলী মোহনার ঘাটে পণ্য উঠানামা করতে হচ্ছে। আগে আমাদের আড়তের সামনে চাক্তাই খালে ৮-১০ দশটি নৌকা দাঁড়িয়ে থাকত।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিক উল্ল্যাহ বলেন, চাক্তাইয়ে হাতিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণ ধান আসে। কিন্তু চাক্তাই খালের ঘাটে নৌকা ভিড়তে না পারার কারণে ধান আনতে সমস্যা হচ্ছে। ধান পরিবহনে এখন আমাদের বাড়তি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এমনিতে প্রতি বর্ষাকালে আমদের জলাবদ্ধতার যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে নৌপথে পরিবহন সংকট।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, একসময় চট্টগ্রাম নগরীর আশপাশের উপজেলাগুলোতে নৌপথে পণ্য পরিবহন হতো। তবে এখনো কিছু এলাকায নৌপথ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। নৌপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধাও অনেক। এতে সড়কে যানবাহনের চাপ কমে। আবার নৌপথে পরিবহন খরচও কম।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ পারভেজ বলেন, চাক্তাই খাতুনগঞ্জে এক সময় ৭০ শতাংশ পণ্য পরিবহন হতো নৌপথে। কিন্তু বর্তমানে সেটি ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এখন তো নৌপথে পরিবহনে প্রতি পদে পদে ভোগান্তি পড়তে হচ্ছে। আলাদা গাড়ি ভাড়া করে কর্ণফুলী মোহনায় পণ্য পাঠিয়ে তারপর নৌকায় তুলতে হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে এক ডোজের জনসনের টিকা অনুমোদন
পরবর্তী নিবন্ধমেয়াদ শেষে অগ্রগতি মাত্র ৩৫ ভাগ