মায়ের বুকে থেকেই চিকিৎসা পাবে অসুস্থ শিশু

নবজাতক ওয়ার্ডে ৩০ শয্যার ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে (স্ক্যানু) স্থাপন হচ্ছে ৩০ শয্যার ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার। এর সেবা চালু হলে এখানে মায়ের বুকে থেকেই চিকিৎসার সুযোগ পাবে অসুস্থ শিশুরা। বর্তমানে মায়ের কাছ থেকে আলাদা রেখে স্ক্যানুর ভিতরে নবজাতককে চিকিৎসা দেয়া হয়। আর মায়েদের অপেক্ষায় থাকতে হয় বাইরে। নির্দিষ্ট সময় পর পর ডাক এলে ভিতরে গিয়ে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সুযোগটুকু পান মায়েরা। তবে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার চালু হলে মায়েরা সন্তানদের বুকে রাখার সুযোগ পাবেন বলে জানান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ।
ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ারে ১০টি শয্যা ও ২০টি চেয়ার স্থাপন হচ্ছে। যেখানে অনেকটা ক্যাঙ্গারুর মতো সন্তানকে বুকে আগলে থাকতে পারবেন মায়েরা। ক্যাঙ্গারুর মতো সন্তানকে বুকে আগলে রাখা যায় বলেই এটিকে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার বলা হয়ে থাকে বলে জানান বিভাগীয় প্রধান ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ। স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে ৫০ ভাগ শেষ হয়েছে জানিয়ে বিভাগীয় প্রধান বলেন, আমরা কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিচ্ছি। কারণ, এই সংস্কার কাজের কারণে স্বাভাবিক শয্যাও কমাতে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জন্মের পরপর বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত নবজাতকের চিকিৎসায় যেন ভরসার অপর নাম চমেক হাসপাতালের এ নবজাতক ওয়ার্ড। যদিও এটি স্ক্যানু (স্পেশাল কেয়ার নিউনেটাল ইউনিট) হিসেবেই পরিচিত। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোর নবজাতকের চিকিৎসায় এটিই একমাত্র ভরসাস্থল। যার কারণে দুর্গম ও প্রত্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত নবজাতককে নিয়ে এখানে ছুটে আসেন মা-বাবারা। এক দিনের বয়স থেকে ২৮ দিন বয়সী শিশুদের ভর্তি করা হয় নবজাতক ওয়ার্ডের (৩২নং) বিশেষ এ ইউনিটে। বিশেষ করে জন্মের পরপর শ্বাস নিতে না পারা বা কান্না না করা, জীবাণুর সংক্রমণ (ইনফেকশন) এবং অপরিণত ও স্বল্প ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা নবজাতকদের ভর্তি করা হয় এ ইউনিটে।
নবজাতক ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্ডে অনুমোদিত শয্যা সংখ্যা মাত্র ৩২টি। তবে স্থানীয় ভাবে বৃদ্ধি করে ২য় দফায় এর শয্যা সংখ্যা ৫৬টি করা হয়। পরে আবারো বাড়িয়ে একশটি শয্যা স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে একশটি শয্যায় এখানে নবজাতক ভর্তি করা হয়। তবে একশটি শয্যাতেই প্রতিদিন গড়ে দেড়শ থেকে দুইশ নবজাতক ভর্তি থাকে এখানে। শয্যা সংকটে এক শয্যায় একাধিক শিশুকে রেখে চিকিৎসা দিতে হয় এখানে। পার্বত্য অঞ্চল ও কঙবাজার নিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ কুমিল্লা অঞ্চলের মা-বাবাদের কাছেও নবজাতকদের চিকিৎসায় এই স্ক্যানু একমাত্র ভরসাস্থল বলে মনে করেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা।
সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেয়া হয়েছে জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর আজাদীকে বলেন, বিশেষ করে গরীব পরিবারের শিশুদের জন্য এই স্ক্যানু আর্শীবাদ স্বরুপ। এখানকার চিকিৎসক-নার্সরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার এ ওয়ার্ডে নতুন মাত্রা যোগ করবে জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, এখন ওয়ার্ডের সামনে সব মায়েরা জড়ো হয়ে থাকেন। ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার চালু হলে সে ভিড় কমে আসবে বলে আমরা আশা করি। কারণ, ওই অংশে অন্তত ৩০ জন মা তার সন্তানসহ থাকতে পারবেন।
ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের প্রস্তুত করা এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা নবজাতকের ৭২ শতাংশই শহরের বাইরের বা দূর অঞ্চলের। আর চমেক হাসপাতালে জন্ম নেয়ার পরপর চিকিৎসার জন্য এই ইউনিটে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা ৩৪ শতাংশ। বাকি ৬৬ শতাংশ শিশুই চমেক হাসপাতালের বাইরে জন্ম নেয়া। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এ পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করেন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা।
চিকিৎসার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে শিশুদের এখানে নিয়ে আসার কারণ হিসেবে ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ বলেন, স্ক্যানুতে বিশেষ কেয়ারের মাধ্যমে নবজাতকদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়ে থাকে। বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সরাই এই সেবা দিয়ে থাকেন। তাছাড়া নবজাতকদের জন্য এখানে এনআইসিইউ সুবিধা রয়েছে। রয়েছে কৃত্রিম শ্বাস প্রদানের সুবিধাও। অনেকটা বিনা খরচেই এখানকার রোগীরা এসব সুবিধা পেয়ে থাকে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে তো এই সুবিধা পাওয়া যায়না। এমনকি শহরের অনেক হাসপাতালেও এসব সুবিধা নেই। তবে প্রাইভেট কিছু হাসপাতালে এই সুবিধা থাকলেও সব পরিবারের পক্ষে এর খরচ বহন করা সম্ভব না। যার কারণে এটি (স্ক্যানু) গরীব পরিবারের শিশুদের চিকিৎসায় ভরসাস্থল হিসেবে পরিণত হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের স্ক্যানুতেই শয্যা সংখ্যা সবচেয়ে বেশি জানিয়ে বিভাগীয় প্রধান ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের স্ক্যানুতে ৩২টি এবং মিটফোর্ডে ২৮টি শয্যা আছে। সে হিসেবে আমাদের এখানেই শয্যা সংখ্যা বেশি। তবে রোগীর চাপও বেশি। আর রোগীর চাপ বেশি থাকার কারণেই একাধিকবার উদ্যোগ নিয়ে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপকেট কমিটি নয়, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের পরামর্শ
পরবর্তী নিবন্ধবন্দর ও আইসিডিতে অচলাবস্থার অবসান