বন্দর ও আইসিডিতে অচলাবস্থার অবসান

৭২ ঘণ্টার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ধর্মঘট ৩৪ ঘণ্টা পর প্রত্যাহার

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

১৫ দফা দাবিতে ডাকা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট ৩৪ ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতাদের বৈঠক শেষে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। আর এরই সাথে চট্টগ্রাম বন্দর এবং ১৯টি আইসিডিতে পণ্য পরিবহনের অচলাবস্থার অবসান হয়েছে। বন্দর এবং আইসিডি থেকে পণ্য পরিবহন গতকাল বিকেল থেকে শুরু হয়েছে। ধর্মঘট প্রত্যাহার এবং বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে উঠায় আমদানি রপ্তানিকারকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে।
সূত্র জানিয়েছে, ১৫ দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার ভোর ৬ টা থেকে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটের কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। প্রাইমমুভার মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দর এবং ১৯টি বেসরকারি আইসিডি থেকে পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে কার্যতঃ অচল হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম বন্দর। করোনাকালের ধকল সামলে ব্যবসা বাণিজ্যে যখন কিছুটা গতিশীলতা তৈরি হচ্ছে তখন বন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দেয়।
বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকায় বৈঠক হলেও কোন সুরাহা হয়নি। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মোহাম্মদ মনির এবং বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান- ট্রাক- প্রাইম মুভার পণ্যপরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মুকবুল আহমদ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পর বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে বন্দরে পণ্যবাহী গাড়ি আসা-যাওয়া শুরু হয়। এনসিটি ও সিসিটিতে প্রাইম মুভার চলাচল শুরু হয় বিকেল ৫টা নাগাদ।
তবে গত মঙ্গলবার থেকে বন্দরের ভিতরে পণ্যবোঝাই করে আটকে থাকা প্রায় এক হাজার ট্রাক বের হওয়ার পর সন্ধ্যার পর খালি ট্রাক বন্দরে ঢোকানো হয়। বিপুল সংখ্যক ট্রাকের আনাগোনা বন্দর এবং সন্নিহিত এলাকায় ভয়াবহ রকমের যানজট সৃষ্টি করে। বন্দর এবং আইসিডিতে পণ্য পরিবহন শুরু হওয়ায় আমদানিকারক, পোশাক রফতানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, বার্থ অপারেটরসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের মাঝে স্বস্তি নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ১৫ দফা দাবি হচ্ছে, মোটরযান মালিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বর্ধিত আয়কর অবিলম্বে প্রত্যাহার করা, যেসব চালক ভারী মোটরযান চালাচ্ছেন তাদের সবাইকে সহজ শর্তে এবং সরকারি ফি’র বিনিময়ে লাইসেন্স দেওয়া, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে পুনরায় হয়রানিমূলক ফিটনেস ও পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল, সব শ্রেণির মোটরযানে নিয়োজিত শ্রমিকদের রাষ্ট্রীয় রেশন-সুবিধার আওতায় আনা, সব বন্দরে অবস্থিত ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মনোনীত প্রতিনিধি এবং সব ড্রাইভার ও সহকারীকে বন্দরে হয়রানিমুক্ত প্রবেশের সুবিধার্থে বার্ষিক নবায়নযোগ্য বায়োমেট্রিক স্মার্টকার্ড দেওয়া, গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা, যেখানে-সেখানে গাড়ি চেকিং না করা, পুলিশের ঘুষ বাণিজ্যসহ সব ধরনের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ, প্রতি ৫০ কিলোমিটার পরপর পণ্য পরিবহনে শ্রমিকদের জন্য দেশের সড়ক ও মহাসড়কে বিশ্রামাগার ও টার্মিনাল নির্মাণ, সড়ক দুর্ঘটনায় অথবা আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুবরণকারী সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে এককালীন ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া। দাবিগুলো মেনে নেয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন বলেও একাধিক নেতা দৈনিক আজাদীকে জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমায়ের বুকে থেকেই চিকিৎসা পাবে অসুস্থ শিশু
পরবর্তী নিবন্ধকোভিড টিকা সর্বজনীন হোক : শেখ হাসিনা