মাস্ক পরতেই যত অনীহা

জরিমানায়ও কাজ হচ্ছে না ।। অসচেতনতা নয়, অবহেলা : নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১২ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

মাস্ক পরেন নি কেন? নগরের বিভিন্ন স্পটে মাস্ক না পরে আড্ডারত অন্তত ৩৫ জনকে গত দুইদিনে প্রশ্নটি করা হয়েছিল দৈনিক আজাদীর পক্ষে। উত্তরে তাদের কেউ বলেছেন, মাস্ক ভুলে বাসায় রেখে এসেছি। অল্প সময়ের জন্য বাসা থেকে বের হয়েছেন তাই মাস্ক নিয়ে বের হননিও বলেছেন কয়েকজন। অনেকে আবার পকেটে মাস্ক আছে দাবি করে বলেছেন, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় বলে পরেননি। কারো বক্তব্য ছিল, মাস্ক পরলে গরম লাগে। তবে সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, মাস্ক না পরলে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। মাস্ক নিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে আলাপচারিতায় এটাই স্পষ্ট হয়েছে, মাস্কের কার্যকারিতা নিয়ে সবাই কমবেশি সচেতন। কেবল অবেহলা থেকেই তারা পরছেন না। সাধারণ মানুষের মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। দুই সংস্থার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে গত একমাসে দৈনিক গড়ে ৫০ জনকে মাস্ক না পরার কারণে জারিমানা করা হয়েছে। এর বাইরে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় গণপরিবহন, ॥হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিককেও করা হয়েছে অর্থদণ্ড। গতকালও জেলা প্রশাসন ৫২ হাজার টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন তিন হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করেছে। প্রতিদিন বাড়ছে জরিমানার অংকও। তবু মাস্ক পরতে অনীহা সাধারণ মানুষের!
মাস্ক কেন পরতে হবে : করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, মাস্ক পরলে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমে। গত বছরের জুন মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা জারি করে বলেছিল, ‘মাস্ক পরলে জীবাণু বহনকারী ড্রপলেট থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে গবেষণায় দেখা গেছে। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণ থামাতে পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা উচিত।’
মাস্ক পরা নিশ্চিতে বাংলাদেশে কড়াকাড়ি আরোপ করেছে সরকার। এজন্য ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ও ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের জুন মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘোষণা ছিল, ‘বাড়ির বাইরে চলাচলরত অবস্থায় ব্যক্তিকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কোনো ব্যক্তি এই আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে সংক্রমণ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রধানমন্ত্রীও একাধিকবার মাস্ক পরার আহ্বান করেছেন জনগণকে। বর্তমানে করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করলেও মাস্ক পরার উপর জোর দেয়া হচ্ছে। এরপরও মাস্ক পরতে অনাগ্রহী সাধারণ লোকজন।
অবহেলার কথা বলছেন ম্যাজিস্ট্রেটও : জেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানগুলোতে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওমর ফারুক। তিনি আজাদীকে বলেন, গত এক মাসে মাস্ক না পরার জন্য দুই হাজার জনের বেশি লোককে জরিমানা করা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন তো হবেই। মাস্ক না পরার কারণ হিসেবে দণ্ডিতরা বেশিরভাগ আমাদের কাছে বলেন, ভুলে গেছি, গাড়িতে রেখে এসেছি, নয়তো নিঃশ্বাস নিতে পারি না।
তবে কি জনগণ অসচেতন বলেই মাস্ক পরেন না? এমন প্রশ্নে এ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, নিয়মিত পরিচালিত অভিযানে আমাদের যে অভিজ্ঞতা তাতে বলতে পারি, অসেচতনতার কারণে পরছেন না বলা যাবে না। কারণ একজন রিকশা চালকও স্বীকার করেন, মাস্ক না পরলে সংক্রমিত হতে পারেন। অর্থাৎ নিম্ন শিক্ষিতরাও জানেন মাস্ক পরতে হবে। উচ্চ শিক্ষিতরা তো জানেনই। তাছাড়া মাস্ক পরার গুরুত্ব সেই প্রথম দিন থেকেই বলা হচ্ছে। গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। তাই সবাই কমবেশি মাস্ক পরার গুরুত্ব সম্পর্কে জানেন। এরপরও না পরা কেবল অবজ্ঞা ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাস স্টপেজ, বিপণি বিতান, রেস্টুরেন্টসহ যেখানে জনসমাগম বেশি হয় সেখানেই আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। সরকারের নির্দেশনা হচ্ছে রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া যাবে না। কিন্তু সেটা মানা হচ্ছে না। তাছাড়া যখন খেতে বসে তখন তো মুখে মাস্ক থাকে না।
সাতদিনে ৩ লাখ ২১ হাজার টাকা জরিমানা : মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন গত সাতদিনে তিন লাখ ২১ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা করেছে। জেলা প্রশাসন গতকালও মাস্ক পরিধান, স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউনে সরকারের নির্দেশনা অমান্য করায় ৩৮ মামলায় ৫২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এর আগে ১০ এপ্রিল পৃথক পাঁচ অভিযানে ৩৭ মামলায় ৬৬ হাজার ৬০০ টাকা, ৯ এপ্রিল পৃথক ৬ অভিযানে ৫৮ হাজার ৯০০ টাকা, ৮ এপ্রিল ৯ অভিযানে ৭৯ হাজার ৮০০ টাকা, ৭ এপ্রিল সাত জন ম্যাজিস্ট্রেট নগরের ১১ স্থানে অভিযান চালিয়ে ২৭ হাজার ৬০০ টাকা, ৬ এপ্রিল পৃথক ছয়টি অভিযানে ৫ হাজার ৬৫০ টাকা, ৫ এপ্রিল ১৭ হাজার ৬৫০ টাকা এবং ৪ এপ্রিল পাঁচ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনও নিয়মিত অভিযান চালিয়েছে মাস্ক পরা নিশ্চিতে। সর্বশেষ গতকাল সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে মারুফা বেগম নেলী ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট জাহানারা ফেরদৌসের নেতৃত্বে নগরের মেহেদীবাগ, প্রবর্তক মোড়, ২নং গেট, ষোলশহর ও বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় মাস্ক না পরায় ১০ জনকে তিন হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে ৭ এপ্রিল সিআরবি, লালখান বাজার, কাজির দেউড়ি ও স্টেডিয়াম এলাকায় পরিচালিত অভিযানে আটজন পথচারীকে দেড় হাজার টাকা, ৬ এপ্রিল মেহেদিবাগ, প্রবর্তক মোড়, পাঁচলাইশ থানা মোড়, মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার এলাকায় পরিচালিত অভিযানে ১০ ব্যক্তিকে দেড় হাজার টাকা এবং ৫ এপ্রিল কাজীর দেউড়ি, লাভলেন, জুবিলি রোড, নিউ মার্কেট, রেল স্টেশন ও স্টেশন রোড এলাকায় পরিচালিত অভিযানে মাস্ক না পরায় ৯ জনকে এক হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহেলে পড়া ভবন ভাঙা শুরু
পরবর্তী নিবন্ধচবি ভর্তি পরীক্ষার অনলাইন আবেদন শুরু আজ