হেলে পড়া ভবন ভাঙা শুরু

সিডিএ বলছে- অনুমোদন নেই ।। মালিকপক্ষ দেখালো অনুমোদনের নথি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১২ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর এনায়েত বাজার গোয়ালপাড়ায় হেলে পড়া ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে গতকাল রোববার (১১ এপ্রিল)। দুপুর ৩ টা থেকে ভবনটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেন শ্রমিকরা। মালিকপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করেছে। রোববার সকালে ভবনটি পরিদর্শনে গিয়ে তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় সেখানে সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান, নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান গতকাল ভবনের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটি নির্মাণে সিডিএর কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ রেলওয়ের স্থাপনা যেগুলো হেরিটেজ আছে, এর সংলগ্ন এলাকা গোয়ালপাড়া। আমরা এখানে কোনো ধরনের ভবন নির্মাণের অনুমতি সাধারণত দিই না। সিডিএর অনুমোদন ছাড়াই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এখানে মাটির ভিত্তি দুর্বল। ভবন নির্মাণে কোনো বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর মতামত বা নকশা করা হয়নি। মিস্ত্রি দিয়ে মালিক নিজের ইচ্ছেমতো করে ভবনটি নির্মাণ করেছেন। নির্মাণ ত্রুটির কারণে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তবে ভবন মালিক কার্তিক ঘোষের সন্তান রাজু ঘোষ ও রূপা ঘোষ সাংবাদিকদের ১৯৯৬ সালে নেওয়া সিডিএর অনুমোদনের নথি দেখান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে ২০০০ সালে, আমরা যতদূর দেখছি। মাত্র তিন কড়া জায়গার ওপর কোনো ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমাদের নথিপত্রে এই ভবনের অনুমোদন সংক্রান্ত কিছুই নেই। এরপরও তারা যেহেতু কাগজ দেখাচ্ছেন, আমরা সেটা ভেরিফাই করে দেখব।
সিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক আজাদীকে বলেন, ঘটনা জেনে আমরা দ্রুত এখানে আসি। প্রথমেই আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে গ্যাস, পানি, বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করি। বাসিন্দাদের সরিয়ে নিই। এখন ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। যে কোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সেজন্য যত দ্রুত সম্ভব ভবনটি ভেঙে ফেলা প্রয়োজন।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে ভবনটির চারপাশে যেন কেউ প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য বাঁশের ঘেরাও দেওয়া হয়। এসময় ঝুঁকি এড়াতে এমনকি সংবাদকর্মীদেরও ওই ভবনটির পাশে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। পরে দুপুর ৩টায় শ্রমিকদের একটি দল ভবনটির উপরের দিক থেকে ভাঙা শুরু করে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, ভবনটির ঝুঁকিপূর্ণ অংশ না ভাঙা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আজিজুল ইসলাম বলেন, আমরা ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছি। দুপুর থেকে মালিক পক্ষের উদ্যোগেই ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ৩৫ বছরের পুরনো এ ভবনটির সামনে কোনও ধরনের অনুমোদন না নিয়েই দুটি পিলার বসানোর কাজ করছিল মালিকপক্ষ। সন্ধ্যার পর পাইলিং করতে গেলে ভবনটি সামনের দিকে হেলে পড়ে। এ খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এসে ভবনের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে নির্দেশ দেয়। রাত ১১টার মধ্যে পুরো ভবন খালি করে ফেলে। একই সাথে পাশের ৮ তলা ভবনটিও খালি করতে নির্দেশ দেয় ফায়ার সার্ভিস। বাড়িটির মালিক কার্তিক ঘোষ। ২০১২ সালে তিনি মারা গেছেন। তার সন্তানরা ভবনটিতে থাকেন।
কার্তিক ঘোষের ছেলে রাজু ঘোষ আজাদীকে বলেন, আমরা ভবনের নিচে গোয়ালঘরের কন্সট্রাকশনের কাজ শুরু করি গত বৃহস্পতিবার থেকে। এর আগে তিন-চারজন ইঞ্জিনিয়ার ডেকে দেখিয়েছি। তারা বলেছেন কোনো সমস্যা হবে না। তারপর কাজে হাত দিয়েছি। আজ সন্ধ্যায় পর দেখেছি ভবনটি ৪ ইঞ্চি হেলে পড়েছে। এখানে আমাদের কিছু শত্রু আছে যারা চায় না এই ভবনটি থাকুক। তারাই পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসকে ডেকে এনে ভবনটি দেখিয়েছে। আসলে তারা যতটা বলছেন ততটা সত্যি না। তারপরও আমরা বলেছি, ভবনটি আমরাই আমাদের নিরাপত্তাজনিত কারণে ভেঙে ফেলবো। তিনি বলেন, ভবনটি পুরোনো ছিল। এই ভবনে তাদের সাত ভাইয়ের পরিবার বসবাস করতো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যাংক লেনদেনের সময় বাড়ল দুদিন
পরবর্তী নিবন্ধমাস্ক পরতেই যত অনীহা