মার্কিন কংগ্রেস ভবনের ভেতরে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ

| শুক্রবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

জেমি স্টাইম একজন মার্কিন রাজনৈতিক কলামিস্ট যিনি ক্যাপিটাল ভবনে বিক্ষোভকারীরা ঢোকার সময়টাতে উপস্থিত ছিলেন। হাউস অব রেপ্রেসেন্টিটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদের প্রেস গ্যালারিতে থেকে তিনি যা দেখেছেন সেটাই বর্ণনা করেছেন। খবর বিবিসি বাংলার
তিনি বলেন, এর আগে আমি আমার বোনকে বলেছিলাম- আজ খুব খারাপ কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। আমি জানি না সেটা কী, কিন্তু খারাপ কিছু একটা ঘটবে। ক্যাপিটল ভবনের বাইরে আমি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু বেপরোয়া সমর্থকের মুখোমুখি হই, যারা সবাই পতাকা উড়াচ্ছিল এবং তার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছিল। একটা অনুভূতি হচ্ছিল যে, ধীরে ধীরে কোনো একটি সমস্যা তৈরি হতে শুরু করেছে। আমি প্রতিনিধি পরিষদের প্রেস গ্যালারিতে ঢুকে যাই। সেখানে আমাদের বসার ব্যবস্থা ছিল এবং শান্ত একদল মানুষের দিকে মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম আমরা। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তার হাতে থাকা কাঠের ছোট হাতুড়িটি ব্যবহার করে প্রতিনিধিদের পাঁচ মিনিটের সংক্ষিপ্ত কিছু বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দিচ্ছিলেন। অধিবেশন যখন দ্বিতীয় ঘণ্টায় গড়ালো, হঠাৎই আমরা কাঁচ ভাঙার আওয়াজ শুনতে পেলাম। বাতাস ধোয়ায় ভরে যেতে শুরু করলো। ক্যাপিটল ভবনের পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসলো, এক ব্যক্তি ভবনে ঢুকে পড়েছে। সবাই এদিক সেদিক তাকালো, তারপর আবার নিজেদের কাজে মনোযোগ দিল। কিন্তু এর পর একের পর এক ঘোষণা আসতে থাকলো। তারা ঘোষণায় বললো যে, প্রবেশকারীরা রোটুন্ডা বা গোলাকার যে হল ঘরটি রয়েছে সেখানে পৌঁছে গেছে। এই হল ঘরটি বাইরে থেকে যে সাদা গম্বুজটি দেখা যায় সেটির নিচে অবস্থিত। গণতন্ত্রের পবিত্র ঘরটিতে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে গেলো। আমাদের অনেকেই বেশ অভিজ্ঞ সাংবাদিক ছিলেন- বাল্টিমোরে সহিংসতার খবর সংগ্রহ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার নিজেরও। কিন্তু সেগুলো থেকে এই ঘটনা অনেক আলাদা ছিল। মনে হচ্ছিল যে পুলিশ জানেই না কী হতে যাচ্ছে। তারা সংঘবদ্ধ ছিল না। তারা চেম্বারের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল, আবার তারাই আমাদেরকে বলছিল যে, আমাদেরকে বের হয়ে যেতে হবে। বোঝাই যাচ্ছিল যে, এক ধরণের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। আমার ভয় করছিল। আমি আপনাকে সেটাই বলবো। আর আমি অন্য সাংবাদিকদের সাথেও কথা বলেছি, যারা আমাকে বলছিল যে ভীত হয়ে পড়ায় তারা কিছুটা লজ্জিতও হয়েছিল।
মনে হচ্ছিল যে, কারো হাতে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, ক্যাপিটলের পুলিশ ভবনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, যেকোন কিছু ঘটে যেতে পারে। একটি গুলি হল। চেম্বারের ভেতরে তখন বিক্ষোভকারী আর পুলিশের মুখোমুখি একটা অবস্থান। দরজায় পাঁচজন লোক বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়ানক একটা অবস্থা চলছিল। মানুষজন জানালার ভাঙা কাঁচের মধ্য দিয়ে উঁকি দিচ্ছিল এবং মনে হচ্ছিল যেন যেকোন মুহূর্তে তারা গুলি ছোড়া শুরু করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডানা ভাঙা পাখির মতো চলছে সব পায়ে পায়ে
পরবর্তী নিবন্ধফুটনোট