মারিয়ানা ট্রেঞ্চ

পানির তলায় সবচেয়ে গভীরে

রিয়াজুল হক | বুধবার , ১ মার্চ, ২০২৩ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

কল্পনা করো যে তুমি একটি ছোট সাবমেরিনে চেপে বসেছো। সাবমেরিনটি তোমাকে ধীরে ধীরে সমুদ্রের নিচে নিয়ে যাচ্ছে। হাঙর, জেলি ফিশ, সামুদ্রিক সাপসহ হরেক প্রজাতির বর্ণিল মাছ ও প্রাণী তোমার সাবমেরিন ঘিরে ধরেছে। তুমি ক্রমশ গভীরে যাচ্ছো। সূর্যের আলো ক্রমশ আবছা হয়ে আসছে। একসময় সূর্যের আলো হারিয়ে গেল। সাবমেরিনের সার্চলাইটের আলোই এখন তোমার ভরসা। সামুদ্রিক প্রাণীর সংখ্যাও ক্রমশ কমে এসেছে। একসময় কোনো প্রাণীরও হয়তো আর দেখা মিলবে না। তোমার হয়তো একটু ভয় ভয় লাগছে। লাগারই তো কথা কারণ তুমি ততক্ষণে পৃথিবীর সর্বনিম্ন স্থানে পৌঁছে গেছো। এটিই হচ্ছে মারিয়ানা ট্রেঞ্চ বা মারিয়ানা খাত। তোমরা এর নাম হয়তো শুনেছো। এটি হলো প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে অবস্থিত একটি খাত বা পরিখা। এটি বিশ্বের গভীরতম সমুদ্র খাতও। প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের ঠিক পূর্বে এর অবস্থান। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ একটি বৃত্তচাপের আকারে উত্তরপূর্ব থেকে দক্ষিণপশ্চিমে প্রায় ২,৫৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃৃত।

তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে সমুদ্রের সব গভীরতায় সকল প্রাণীর দেখা মিলে না। সমুদ্রের ৬৫ ফুট গভীরতায় প্রবাল দেখতে পাবে। এখানে স্কুবা ডাইভারের দেখাও পেতে পারো। তবে ১৩০ ফুটের গভীরে তাদেরও আর দেখা পাবে না। ২০০ ফুট গভীরতায় অর্কার দেখা পাবে। ডলফিন পরিবারের সবচেয়ে বড় এই সদস্যরা দাঁতযুক্ত। এরা কিন্তু অগভীর সমুদ্রেই বসবাস করে। এরা খুবই দক্ষ শিকারী হয়। তাই এদের কোনো শত্রু নেই। এরা কিলার হোয়েল নামেও পরিচিত।

২৩০ ফুট গভীরতায় তুমি হোয়েল শার্কেরও দেখা পাবে। এরা মাছের প্রজাতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। এদের ওজন কত হতে পারে বলতে পারবে? প্রায় ৬০ টন। কী বিশাল মাছ তাই না? এদের আয়ু কিন্তু আমাদের চেয়ে বেশি, প্রায় ১৩০ বছর। তোমারও কী এদের মতো আয়ু পেতে ইচ্ছে করছে?

৩০০ ফুট নিচে জায়ান্ট অক্টোপাসের দেখা পেতে পারো। এগুলো ৬,৬০০ ফুট গভীরতায় পর্যন্ত বসবাস করে। এরপর তুমি অন্ধকার জগতে প্রবেশ করবে। ৪৯০ ফুটের নিচে সূর্যের আলোর শুধু ১ শতাংশ প্রবেশ করতে পারে। ৬৬০ ফুট গভীরতায় বিশাল ওর মাছের দেখা মিলতে পারে। এগুলো অনেকটা সাপের মতো। এগুলো কতটা লম্বা হতে পারে ধারণা করতে পারো? প্রায় ৩৬ ফুট। কী বিশাল তাই না?

৯৮০ ফুট গভীরতায় বিশাল পা যুক্ত জাপানী স্পাইডার কাঁকড়ার দেখা পেতে পারো। এগুলো পা সর্বস্ব কাঁকড়া কারণ এদের শরীর মাত্র দেড় ফুট। ১,৬৪০ ফুট নিচে সর্বশেষ নীল তিমির দেখা পেতে পারো কারণ এর বেশি গভীরতায় নীল তিমি বসবাস করে না। তোমরা কী বলতে পারো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাণী কোনটি? ঠিকই ধরেছো। নীল তিমি। ২,৭২৩ ফুট গভীরতায় পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং বুর্জ খলিফাও কিন্তু ডুবে যাবে। এর বেশি গভীরতায় সূর্যের আলো আর প্রবেশ করতে পারে না। এখানেও কিন্তু প্রাণীর দেখা পাবে। ২,৯৫০ ফুট গভীরতায় দেখা পাবে বিশাল স্কুইডের। এগুলোর চোখের ব্যাস প্রায় ১০ ইঞ্চি। স্পার্ম তিমিরা এদেরকেই শিকার করে। তবে এরাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। উল্টো আঘাত হানে। ৩,৬০০ ফুট গভীরতায় ওয়েস্ট মাটার দেখা পাবে।

এটি পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরে অবস্থিত আগ্নেয়গিরি। ২০০৯ সালে এখানে সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাত হয়। ৪,২০০ ফুট গভীরতায় ভয়ঙ্কর শিকারী প্রাণী সাদা হাঙরের দেখা মিলবে। এদের দৃষ্টিশক্তি কিন্তু খুবই কম। এরা ঘ্রাণ শুঁকে যাতায়াত ও শিকার করে। এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কচ্ছপ লেদারব্যাক কচ্ছপের দেখা পাওয়া যাবে। ৬,৬০০ ফুট গভীরতায় কালো ড্রাগন মাছের দেখা মিলবে। আর ৭,৪০০ ফুট গভীরতায় দেখা মিলবে স্পার্ম তিমির। এগুলো ৬২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ৯,৯০০ ফুট গভীরতায় গভীর সমুদ্রের প্রবালের দেখা মিলবে। ১২,১০০ ফুট হচ্ছে সমুদ্রের গড় গভীরতা। এর পর হচ্ছে অতল সমুদ্র। ১৫,০০০ ফুট গভীরতায় বিশাল মনস্টার এনংগলার মাছের দেখা মিলবে। এদের দীর্ঘ বাঁকানো দাঁত এবং মাথার সামনের এন্টেনার মতো আলোকিত অংশ যেকোনো প্রাণীর জন্য ভয়ের কারণ হতে পারে। এর গভীরেও কিন্তু ভয়ঙ্কর প্রাণী থাকে। সামুদ্রিক ঈলের মতো দেখতে কাল সোয়ালোয়ারের দেখা মিলবে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার কী জানো? এগুলো দেহের দ্বিগুণ আকারের প্রাণী গিলে ফেলতে পারে। কী ভয়ঙ্কর প্রাণী তাই না? ১৯,৭০০ ফুট গভীরে গেলে তুমি সবচেয়ে গভীর স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চে পৌঁছে গেছো। ২৬,০০০ ফুট গভীরেও কিছু মাছের দেখা পাবে। এগুলো হচ্ছে স্নেইল ফিশ। এদের শরীর স্বচ্ছ। তাই এদের শরীরের ভিতর দিয়ে অপর পাশে কী আছে দেখা যায়। এর বেশি গভীরতায় কোনো মাছ বা মেরুদণ্ডী প্রাণির দেখা মিলবে না। এখানে পানির চাপ এত বেশি যে খুবই কম প্রাণী এই চাপ সহ্য করতে পারে। এখানে কিছু চিংড়ি, অমেরুদণ্ডী প্রাণী এবং জীবাণু বাস করতে পারে। এতক্ষণে তুমি পৃথিবীর সর্বনিম্ন স্থানে পৌঁছে গেছো। কী রোমাঞ্চকর অভিযান তাই না?

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমাদের দেশ
পরবর্তী নিবন্ধচান্দগাঁওয়ে যুবলীগের শান্তি সমাবেশ