মামলা এখন ১৫,৮৪২

চট্টগ্রামের সাত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ।। সাক্ষীর সমস্যা, কখনো কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না বাদীকে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৪ মে, ২০২২ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের সাতটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা এখন ১৫,৮৪২টি। এর মধ্যে গত বছর যুক্ত হয়েছে ৪ হাজারের বেশি মামলা। গত বছর নারী ও শিশু মামলা এবং শিশু মামলা মিলে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র আড়াই হাজার। ট্রাইব্যুনালগুলো থেকে প্রাপ্ত বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণে উঠে আসে এসব তথ্য।
বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারাধীন পূর্বের মামলার জের ছিল ৩৩৯২টি। নতুন দায়ের ও অন্যান্য কোর্ট থেকে বদলি হয়ে আসে ৮১১টি। এর মধ্যে ৩২৬টি নারী ও শিশু মামলা এবং ৯টি শিশু মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বদলি করা হয়েছে ৬টি মামলা। এসব বাদে বছর শেষে এই ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮৬২টি।

ট্রাইব্যুনাল-২ এ গত বছর বিচারাধীন পূর্বের মামলার জের ছিল ২৫৪৮টি। নতুন দায়ের ও বদলি হয়ে আসে ৬৯৪টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ১৮৫টি। বছর শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০৫৭টি। ট্রাইব্যুনাল-৩ এ গত বছর বিচারাধীন পূর্বের মামলার জের ছিল ২১৮৭টি। নতুন দায়ের ও বদলি হয়ে আসে ৩৮৪টি মামলা। নিষ্পত্তি হয়েছে ২৮৭টি। বদলি করা হয়েছে ৩টি। বছর শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২২৮১টি। ট্রাইব্যুনাল-৪ এ গত বছর বিচারাধীন পূর্বের মামলার জের ছিল ২৩৯৪টি। নতুন দায়ের ও বদলি হয়ে আসে ৭৫৩টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৭৮টি মামলা। বছর শেষে এ আদালতে বিচারাধীন মামলা দাঁড়িয়েছে ২৭৬৯টি।

ট্রাইব্যুনাল-৫ এ গত বছর বিচারাধীন পূর্বের মামলার জের ছিল ১৭৫৭টি। নতুন দায়ের ও বদলি হয়ে আসে ৪৯৫টি। নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৩১০টি মামলা। বছর শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯৪২টি। ট্রাইব্যুনাল-৬ এ গত বছর বিচারাধীন মামলার জের ছিল ১১২০টি। নতুন করে দায়ের হয় ও বদলি হয়ে আসে ৩৪৭টি। নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৬৩৭টি। বছর শেষে এ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩০টি। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল-৭ এ গত বছর বিচারাধীন পূর্বের মামলার জের ছিল ১০৪৭টি। নতুন করে দায়ের হয় এবং বদলি হয়ে আসে ৪৬৪টি মামলা। বছর জুড়ে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৪০৪টি। বছর শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১০১টি।

ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, সব মিলে উক্ত সাতটি ট্রাইব্যুনালে গত বছর নতুন দায়ের ও বদলি হয়ে আসে ৩৯৪৮টি মামলা। বিপরীতে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৫৩৬টি। বছর শেষে মোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫,৮৪২টি। ট্রাইব্যুনাল সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রামের সাতটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন থাকা ১৫ হাজার মামলার মধ্যে ৫ বছরের অধিক পুরনো মামলা রয়েছে প্রায় তিন হাজার। সাক্ষীর অনুপস্থিতিসহ নানা কারণে মামলাগুলো শেষ করা যাচ্ছে না। এছাড়া এসব ট্রাইব্যুনালে উচ্চ আদালত কর্তৃক স্থগিত থাকা মামলাও রয়েছে। সবক’টি ট্রাইব্যুনাল মিলে ৮০ থেকে ৯০টি নারী ও শিশু মামলা এবং শিশু মামলা স্থগিত রয়েছে। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের মামলার বিচারকাজ বন্ধ থাকে। দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও কেন বছরের পর বছর গুরুত্বপূর্ণ এসব ট্রাইব্যুনালে মামলা ঝুলে থাকে? এমন প্রশ্নে ট্রাইব্যুনালের পিপি এম এ নাছের আজাদীকে বলেন, সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে হাজির হন না। কখনো কখনো তাদের খুঁজেও পাওয়া যায় না। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তারা আন্তরিক হলে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম গতি পাবে। এছাড়া কখনো কখনো মামলার বাদীকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ভয় পাওয়াসহ নানা কারণে তারা আত্মগোপনে থাকে। আমাদের চেষ্টার কমতি থাকে না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত দুই বছর করোনা মহামারি ছিল, যার কারণে আদালতের কার্যক্রম তেমন একটা ছিল না। যতটুকু সম্ভব মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বর্তমানে বিচারক সংকট নেই। সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে বিচারকদের একটি টিম এসে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম পরিদর্শন করে গেছে। মামলা নিষ্পত্তিতে গতি বাড়াতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। এখন নিয়মিত শুনানি হচ্ছে। আমরাও আন্তরিক। আশা করছি মামলার বিচারে গতি পাবে।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামের জন্য সাতটা কোর্ট পর্যাপ্ত। সবগুলো কোর্টে বিচারকও রয়েছেন। এরপরও মামলা ঝুলে থাকাটা অপ্রত্যাশিত। বিচারক, রাষ্ট্রপক্ষে যারা আছেন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিক হলে মামলার জট খুলবে। নিষ্পত্তির হারও বাড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার পাচ্ছেন ফজলে করিমসহ ৭ ব্যক্তি ও ১৬ প্রতিষ্ঠান
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে বিজিবির অভিযানে ১০ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার