মানুষ পাখির গান

নাজমুস সাকিব রহমান | শুক্রবার , ১১ মার্চ, ২০২২ at ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলা সাহিত্যে প্রেম ধীরে মুছে যেতে পারে। জীবনানন্দ দাশ সম্ভব করেছেন। জাহেদ মোতালেবের প্রথম আত্মজৈবনিক রচনার বই ‘চালতা পোড়া গদ্য।’ সেক্ষেত্রে তিনি গদ্যকে লিরিক্যাল এপ্রোচ নিয়ে জ্বালিয়ে দিতেই পারেন। ‘রক্তরেখা’, ‘অন্যজন’ এবং ‘ধানশি’―এখন পর্যন্ত তিনটা উপন্যাস লিখেছেন তিনি। এবার পাওয়া গেল তার আত্মজৈবনিক রচনা। অর্থাৎ বিভিন্ন সময়ে লেখা এক ডজন গদ্য এক মলাটে। এসব লেখায় ভাষা, ধর্ম, ব্যক্তি, রাজনীতি, সমাজ, দেশ-বিদেশ, সামপ্রদায়িকতাসহ বিবিধ বিষয় উঠে এসেছে।
সাধারণত সুখপাঠ্য গদ্য মানেই রবি ঠাকুরের ‘ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা।’ কিন্তু চালতা পোড়া গদ্যের লেখাগুলো একরৈখিক নয়। এটা কখনো কখনো হাঁস চলার পথ। অথবা অনেকদিন পর বুঝতে পারা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’র দীর্ঘ বাক্যতে লেগে থাকা ক্লান্তির অনুভূতি। কতকিছুর মধ্য দিয়ে একজন লেখক প্রস্তুতি নেয়। এগিয়ে যায় এক একটা উপন্যাসের দিকে। এর মধ্যে আয়ু ফুরায়, শব্দ বেড়াতে যায়, রেডিওতে মান্না দে গাইতে থাকেন ‘যদি কাগজে লেখো নাম, কাগজ ছিড়ে যাবে।’
চালতা পোড়া গদ্যের হৃদয়ে অনেকের নাম লেখা আছে। একজন হলেন লেখক-সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ। দৈনিক আজাদীর সহকারী সম্পাদক ছিলেন একসময়। চট্টগ্রাম শহরে তিনি একজনই ছিলেন, মাদক না দিয়ে বই ধরিয়ে দিতেন। মেতে উঠতেন বিপ্লবী রণেশ দাশগুপ্তকে নিয়ে। যেতেন স্টেশন রোডে, পুরোনো বইয়ের দোকানে। তখন কখনো কখনো সঙ্গে থাকতেন জাহেদ মোতালেব। কে না জানে চট্টগ্রাম শহরের ‘স্টেশন রোড’ মানে আবু মুসা চৌধুরীর কলমে ফিলিংসের সেই শিরোনাম গান: ‘ভীষণ জ্বরে ঘুম আসে না/ ভাতের আশায় দিচ্ছে শরীর/ যেন ত্রিমাত্রিক জীবন্ত ছবি।’
সিদ্দিক আহমেদ মৃত্যুর আগে ‘সাইলেন্স’ নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে, ব্যক্তিগত পরিসরে বলেছিলেন সে কথা। কিন্তু রবি ঠাকুরের চরিত্র নন বলে শেষ পর্যন্ত তার ‘ইচ্ছাপূরণ’ হয়নি। জাহেদ মোতালেব তাকে নিয়ে একটা লেখা লিখেছেন, নাম দিয়েছেন ‘চুপকথা।’ এছাড়াও বিভিন্ন লেখায় প্রসঙ্গ হয়েছে তার পারিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব, আনন্দবেদনার কাব্য অথবা গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের সেই চিত্রনাট্যের কর্মশালা: কেমন করে গল্প হয়?
আসলে গল্প-উপন্যাসের চেয়েও একজন লেখককে বেশি পাওয়া যায় তার আত্মজৈবনিক রচনায়। এই প্লাটফর্মে সহজে অনেক দিকে নিরাপদ যাতায়াত করা যায়। ফলে দেখা মেলে ২০০৪ সালের আগস্টের সেই দিনের, যেদিন জাহেদ মোতালেব জড়িয়ে পড়েন সাংবাদিকতার সঙ্গে। আর কয়েকদিন পরেই নিউজরুমের টিভিতে তিনি মুখোমুখি হন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনাটির। এটা সত্যি চালতা পোড়া গদ্যের রাজনৈতিক দিক রয়েছে। আবার এটি জাহেদ মোতালেবের দ্বিতীয় উপন্যাস অন্যজনের সেই শুরুর বিপরীত: ‘আমার ছোটকাল ছিল পুকুরের পুবপাড়ের আমগাছের আমের মতো মধুর।’
কাজেই পাঠক আপনিই ঠিক করুন জাহেদ মোতালেবের গদ্য কতটুকু পুড়েছে, কতটুকু হয়েছে জোবায়ের হোসেন ইমনের ‘মানুষ পাখির গান।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবু মুসা চৌধুরীর দুটি সাব-অলটার্ন কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজে পিঠা উৎসব