মানবতা হৃদয়ে আঁকড়ে থাকুক মুখ থুবড়ে নয়

তানজিলা খানম আনিসা | শনিবার , ২৭ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ

চারপাশে নদীবেষ্টিত সৌন্দর্যের অপরূপে ঘেরা আসলে আসবে সাগর কন্যা দ্বীপের কথা অর্থাৎ সন্দ্বীপের কথা। যেমনটি তার সৌন্দর্য তেমনটি তার মুগ্ধতা। কিন্তু কি বলুনতো এই অপরূপ সৌন্দর্যের মধ্যেও কিছু দুর্ভোগ পোহাতে হয় এই দ্বীপের মানুষগুলোকে। তার মধ্যে একটি দুর্ভোগ হলো নৌ যাতায়াত। এই নৌ যাতায়াতের কথা বলতে গেলে চোখে ভেসে উঠে লাশের সারি। ২০১৮তে ২ এপ্রিলে ১৮টি লাশ গুণতে হয়েছিল যাদের পরিবারগুলো আজও নিঃস্বতার ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেনি, তখন ছোট দ্বীপের মানুষগুলো ভেবেছিল এই নৌ-যাতায়াতের পরিবর্তন হবে। আসলে তাদের ধারনা ভুল বলে প্রমাণিত হলো। ২০২২ এর এপ্রিলে এক মা কে গুনতে হয়েছিলো তিন সন্তানের লাশ। অপর এক মা কে হারাতে হয়েছিলো আদরের ছেলেটিকে, হয়েছিলো অনেক মিটিং মিছিল অনেক আন্দোলন। তার কিছুদিন পরই এক গর্ভবতী এক মা সন্তান জন্ম দিতে না পেরেই নদীর পারেই মারা যায়, দ্বীপবাসি ভেবেছিল এইবার হয়তো পরিবর্তন আসবে, অদৌ কি পরিবর্তন এসেছে? ফের ১৯ আগস্ট আবারো দ্বীপবাসির আশা ভুল বলে প্রমাণিত হলো। সন্তানহারা মায়েরা সন্তানের জীবনের বিনিময়ে পেয়েছে কিছু টাকা। আচ্ছা একটি সন্তানকে দশমাস দশদিন গর্ভে ধারন করে প্রসব ব্যথার চিৎকারে পৃথিবীর আলো দেখানো, সন্তানকে দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়ে ৮-১০ বছর লালন পালন করে লাশ হিসেবে চোখে দেখার মূল্য কি এত সোজা? বাদ দিলাম তার কথা, হাসপাতালের বেডে শুয়ে সন্তান জন্ম দিতে যাওয়ার মুহূর্তে প্রয়োজন হলো শহরের হাসপাতালের কিন্তু সে কী করবে? তাকে তো নদী পাড়ি দিতে হবে না হয় তার আর কোনোভাবেই শহরে যাওয়া হবে না। অবশেষ গর্ভের সন্তানকে নিয়েই চিরবিদায় নিলো সে নদীর পাড়ে। কী দোষ ছিলো ঐ নিষ্পাপ বাচ্চাটার? ডেলিভারি রোগী, অন্যান্য ইমার্জেন্সি রোগী, প্রবাসীদের টিকেট করা থাকে নির্দিষ্ট সময়ের। কিন্তু সামান্য একটু আবহাওয়া খারাপ হলেই নদীর ধারে বসে এসমস্ত রোগী এবং বিদেশযাত্রীদের নদীর পাড়ে বসে সময় পার করতে হয় কবে আবহাওয়া ভালো হবে কবে সে তার সুচিকিৎসা পাবে। অবশেষ পরিনাম হয় কেউ চিকিৎসাহীনতায় চিরবিদায় নেয় আর কাউকে রেখে তার গন্তব্যের প্লেন টি চলে যায়। পরে স্বজন হারানো শোক ভুলতে পারেনা আর কেউ দ্বিগুণ অর্থ বহন করে আবার টিকেট কাটতে হয়। এ দায়গুলো কার, কোনো উত্তর কি আমাদের কাছে আছে? প্রতিটা নৌ-দুর্ঘটনার পর ১/২মাস ফেইসবুক প্রতিবাদ, মিটিং মিছিল হয়। নির্দিষ্ট সময় পর এদিকে সান্ত্বনা দেয়া হয় সব ঠিক হবে বলে। আর নিঃস্ব পরিবারগুলোকে শান্তনাস্বরূপ কিছু অর্থ দেয়া হয় এরপর সব স্বাভাবিক। বারবার হৃদয় ভাঙ্গে সারে না সেই ব্যথা।
প্রতিবারই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে মানবতা। তৈরি করে দিন নৌ-পথ, তৈরি করে দিন যাতায়াতের সু ব্যবস্থা দেখবেন ছোট দ্বীপের মানুষগুলো মাথায় করে রাখবে।
যাতে ছোট্ট দ্বীপের মানুষগুলো গর্ব করে বলতে পারে আমাদের নিরাপদ নৌ -পথ আছে। যেনো বলতে পারে মানবতা মুখ থুবড়ে নয় হৃদয়ে আঁকড়ে আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতারুণ্যের আক্ষেপ ও প্রত্যাশা
পরবর্তী নিবন্ধদোষীদের শাস্তি কার্যকর করে সড়কে নিরাপদ জীবন চাই