ফল উৎপাদনে বিস্ময়

এক বছরে প্রায় ৭২ প্রজাতির ১ কোটি ২৫ লাখ টন উৎপাদন ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো রোধ করা গেলে মিলবে সুফল

হাসান আকবর | শনিবার , ২৫ মে, ২০২৪ at ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ

ফল উৎপাদনে বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশে স্বল্প পরিমাণ জমি ব্যবহার করে বছরে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টন ফল উৎপাদন করে বাংলাদেশ এই বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। এতে দেশের কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে। দেশে ফলের যোগান জনস্বাস্থ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো এবং দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বাংলাদেশের ফলের বৈশ্বিক বাজার গড়ে উঠার দারুণ এক সম্ভাবনা রয়েছে। ফল উৎপাদনের এই মহাযজ্ঞ হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। যা দেশের স্থানীয় অর্থনীতিতেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিশ্বের ৮ম জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু আয়তনের দিকে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৪ তম। কিন্তু গত ২০ বছরে বাংলাদেশ ফল ফলাদির উৎপাদনে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের উদাহরণ হয়ে উঠার পেছনে কৃষি বিজ্ঞানী এবং দেশের সাধারণ মানুষের বড় কৃতিত্ব রয়েছে। তারা বলেন, ২০ বছর আগে এই দেশের প্রধান ফল ছিল আম আর কাঁঠাল। ৫৬ প্রজাতির ফল চাষ হতো দেশে। এখন দেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে। আগে কোনোদিন হয়নি এমন বহু ফলের চাষ হচ্ছে এখন। উন্নত প্রজাতি, বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদ, কৃষি খামার গড়ে উঠা এবং সচেতনতাসহ নানা কারণে বেড়েছে উৎপাদন। অনাবাদী হাজার হাজার একর পাহাড়ি জমিতে নানা প্রজাতির মৌসুমি ফল চাষ হচ্ছে। গত বছর বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টন নানা প্রজাতির ফল উৎপাদন হয়েছে। ২০ বছর আগে যা ছিল কল্পনারও অতীত।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রকাশিত তথ্যের উদ্বৃতি দিয়ে চট্টগ্রাম কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিগত দেড় যুগ ধরে দেশে ফল উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি গড়ে সাড়ে ১১ শতাংশ। যা বিশ্বের সর্বোচ্চ।

তিনি বলেন, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ চারটি ফলের মোট উৎপাদনেও বাংলাদেশ শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। এরমধ্যে কাঁঠাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম স্থানে অবস্থান করছে। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১০ম। দেশে আম, কাঁঠালের বাইরে জাম, লিচু, বরই, (কুল), কামরাঙা, পেঁপে, বেল, লেবু, আনারস, আতা, সফেদা, লটকন, তরমুজ মৌসুমী ফলের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, কলা, বরই, পেপে, লেবু ইত্যাদি আগে বাড়িতে বা ঘরের আঙ্গিনায় সীমিত পরিসরে হতো। এখন এসব ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। গড়ে উঠেছে বড় বড় কৃষি খামার। বিদেশ থেকে উন্নত প্রজাতি এবং প্রযুক্তি এনে করা হচ্ছে চাষাবাদ। যা দেশে নীরব বিপ্লব সাধন করেছে বলেও ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, একসময় বহু বিদেশী ফল আমদানি করতে হতো। এখন বাণিজ্যিকভাবে সেসব ফলেরও চাষ হচ্ছে। তিনি ড্রাগন, মাল্টা, স্ট্রবেরিসহ নানা প্রজাতির নাম উল্লেখ করেন।

ফল উৎপাদন বাড়লেও বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানোর ফলে সাধারণ জনস্বাস্থ্য অনেকটা হুমকির মুখে বলে মন্তব্য করে একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ বলেন, ফল উৎপাদনে সফলতার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলকেন্দ্রিক আর্থিক কর্মকাণ্ড বাড়লেও ক্ষতিকর কেমিক্যাল আমাদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি করছে। নানা ধরনের রোগবালাই বেড়ে যাচ্ছে। চিকিৎসার পেছনে সর্বস্বান্ত হচ্ছে মানুষ। ফলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো রোধ করা গেলেই কেবল এই নীরব বিপ্লবের সুফল পাওয়া যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশের ফল রপ্তানি পণ্য হয়ে উঠতে পারে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে ফল রপ্তানি করা গেলে আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকা আয় হতো। এখন তো উল্টো আমরা বহু টাকার ফল আমদানি করি। তবে আশার কথা হচ্ছে, দেশে ফলের উৎপাদন বাড়ায় বিদেশ থেকে আমদানির প্রবণতা কমে আসবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ
পরবর্তী নিবন্ধবন্দরের পণ্যবাহী গাড়ি থেকে টোল চায় চসিক