দোষীদের শাস্তি কার্যকর করে সড়কে নিরাপদ জীবন চাই

সুলতানা নুরজাহান রোজী | শনিবার , ২৭ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ

আর কতো জীবন নিলে চালকরা রক্ষা দিবে এই জীবন নেওয়া আর কতো টাটকা রক্ত দিয়ে গোসল করলে তোমাদের মনে মায়া মমতা জায়গা পাবে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো বন্ধ করবে বলতে পারো? কলেজ যাওয়ার পথে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোডে চার চাকা গাড়ির নিচে পিষ্ট হয়ে সুন্দর পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে একজন শিক্ষার্থী। সে ও তো স্বপ্ন দেখে ছিল লেখা পড়া করে একজন সুন্দর ও ভালো মানুষ হবার, সেও অন্য দশ জনের মতো জীবন যাপনে স্বাদ নিবে। সমাজের সেবা, মানুষের সেবা করবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, সাংবাদিক, প্রফেসর, স্কুল শিক্ষক কিম্বা বড় কোনো অফিসিয়াল চাকরি করবে। মা বাবার মনের আশা পূরণ করবে, ভাইবোনের দায়িত্ব পালন করবে। সে তো বাঁচতে চেয়েছিল এই সুন্দর পৃথিবীতে। তার হারিয়ে যাওয়া একটা ফুলকে ফুটতে দেওয়া হলো না। অকালেই ঝরে গেলো। থমকে গেছে একটা নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা।
আর কতোদিন দেখতে হবে? আর কতো টাটকা জীবন মুহূর্তে শেষ হবে? শুধু শোকাহত, ইন্নালিল্লাহ পড়ে, মানববন্ধন করে, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে কি শোক করলেই সব দায়িত্ব শেষ?
কেন আমরা শোক সংবাদ ও শোক প্রকাশ করে ঐ গাড়ি চালকের শাস্তি দাবি করি না? হয়তো করি কিন্তু এটা সংশ্লিষ্ট কারো আমলে নেওয়া হয় না। চালকদের নেশায় ও শরীরের শিরায় শিরায় আসক্ত বর্বরদের- এই প্রেতাত্মাদের এই নরপশুদের শাস্তি দেওয়া হোক। আমাদের প্রত্যাশা গাড়ির চালকের লাইসেন্স বাতিল করা যাবৎজীবন সাজা দেওয়া মৃত্যুদণ্ড দেওয়া তাহলেই সে অন্য একটা জীবনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া ও জীবনের মূল্য বুঝতে পারবে।
আমরা কেন কোনো চালককে গাড়ি দেবার আগে তার জামানত হিসেবে কিছু রাখি না? আমরা অর্থের লোভে বিবেক কে মেরে ফেলছি আমরা কিন্তু সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় নিরাপদ জীবন চাই বলি ও নিরাপদ সড়ক চাই বলি অথচ আমরাই লাইসেন্স প্রদান করি অদক্ষ চালকের হাতে কোনো পরীক্ষা ছাড়া শুধুমাত্র টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে লাইসেন্স নিয়ে থাকি এই ভাবে এক একটা জীবন বলিদান দিতে হচ্ছে বেপরোয়া চালকের হাতে। ফিটনেস বিহীন গাড়ি রাস্তায় নামে কেমন করে? মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করি মাদক মুক্ত সমাজ চাই কিন্তু এই মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক লাইসেন্স বাতিল করা হয় না নেশার ঘুরে ঘুমের মধ্যে গাড়ির চালক গাড়ি চালায়। অনেক চালক চোখে কম দেখে এখন থেকে লাইসেন্স প্রদান করার সময় চক্ষু পরীক্ষা করা উচিত এবং এদের কে নিয়মের আওতায় আনা হোক। ফিটনেস বিহীন গাড়ি রাস্তায় নামে কী করে? ট্রাফিক জনগণের সেবা করে খুব সত্যি আবার এই ট্রাফিকের হাতে টাকা গুঁজে দিলে গাড়ি ছাড়া পায়।
একটা রাস্তা থেকে চার লাইন রাস্তায় পরিণত হয়েছে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে কিন্তু কোন সড়কে কোন গাড়ি চলাচল করতে পারবে তা ঠিক করে দেওয়া হয়নি এখনো। ভারী যানবাহন চলাচল দিনের বেলায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তবুও কিভাবে এই সব যানবাহন চলাচল করছে? আমরা কি এই ভাবে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবো? এক্সিডেন্ট হওয়ার পর গাড়ির চালক রাস্তার মাঝখানে গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়। গাড়ির মালিক সমিতি কেন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না? এই প্রশ্নের জবাব এবং উত্তর কী? শুধু জীবন কেড়ে নেওয়াই কি সমাধান শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা ও কয়েক হাজার টাকা জরিমানা বা কয়েক লাখ টাকা জরিমানা। এই কয়েক হাজার টাকা কি একটা মানুষের প্রাণের মূল্যে? তবে কি আমরা এটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছি? প্রাণ চলে যাওয়ার পর কয়েক টা টাকা পেলেই ক্ষমা পাওয়া যাবে এই ভেবে গাড়ির চালক ও হেলপার আটক করি না তাহলে এই দায়ভার প্রত্যেক গাড়ির মালিককে নিতে হবে। তাহলেই মালিক পক্ষ ড্রাইভারের লাইসেন্স ভালো করে চেক করে দেখবেন ওদের কাছ থেকে জামানত হিসেবে সব কিছু সিস্টেম অনুযায়ী দক্ষতার সাটিফিকেট জমা রাখবেন। ওদের শাস্তি দাবি করবেন জনগণের সাথে সাথে মালিক পক্ষরাও। গাড়ির সব চালকদের জন্য রাস্তায় কিভাবে গাড়ি চালাতে হয় তার প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা উচিত। কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়া বড় গাড়ি চালাতে পারবে না এবং বয়স সীমা নির্ধারণ করা উচিত। বিআরটিসি তেও অভিযান চালিয়ে জব্দ করা উচিত এখানে দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করা উচিত। না হয় এভাবে চলতে থাকবে সময়ের পর সময়, বছরের পর বছর, প্রতিটি মানুষের জীবন কেড়ে নিবে। এর পরিবর্তনে সবাই এগিয়ে আসুন। নিরাপদ জীবন হোক আমাদের সবার কাম্য।

লেখক : কবি, নারী উদ্যোক্তা

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানবতা হৃদয়ে আঁকড়ে থাকুক মুখ থুবড়ে নয়
পরবর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে