মাদরাসা মাঠে নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ!

বিটুমিন পোড়ার গন্ধ ও ধোঁয়ায় বন্ধ শিক্ষা কার্যক্রম

চকরিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ৬ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ দখল করে সড়ক নির্মাণে বিভিন্ন সামগ্রী স্তূপ করায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এমনকি ভবন লাগোয়া স্থানে প্রতিদিন বিটুমিন পোড়ানোর ধোঁয়া ও গন্ধে বিষিয়ে উঠেছে পরিবেশ। কালো ধোয়ায় প্রতিষ্ঠান ভবনের সিংহভাগ দেয়াল এর মধ্যে কালচে রং ধারণ করেছে। এই অবস্থা অব্যাহতভাবে চলছে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের খদিজাতুল কুবরা (রা.) ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসায়। গত একমাস আগে থেকে শুরু হওয়া এই পরিস্থিতির কারণে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও তা কোনো কাজে আসেনি।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল মেম্বারের যোগসাজশে জোরপূর্বক মাদরাসা মাঠ দখলে নেয়া হয়। এরপর সেখানে এলজিইডির সড়ক নির্মাণ কাজের কংকর, পাথর, বালি, ঝুট ও বিটুমিন স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে পোড়ানো হয় বিটুমিন। এতে মাদ্রাসার পরিবেশের পাশাপাশি ভবনের ক্ষতি হচ্ছে।
মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি মুফতি এনামুল হক অভিযোগ করে বলেন, দিগরপানখালী-ঘুনিয়া সড়কটি এলজিইডির নিয়ন্ত্রণাধীন। এই সড়কটির নির্মাণকাজ পায় কক্সবাজারের সাদিয়া কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে সেই ঠিকাদার থেকে সাব ঠিকাদারি নেয় গিয়াস উদ্দিন এবং কামাল উদ্দিন। তারা কমিটির কাছ থেকে কোনোপ্রকার অনুমতি না নিয়ে মাদরাসা মাঠ দখলে নেয় একমাস আগে। সেখানে নির্মাণসামগ্রীর স্তূপের কারণে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের পথটি বন্ধ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। এ নিয়ে মৌখিকভাবে আপত্তি জানানো হলেও তারা তা গ্রাহ্য করছেন না। তিনি জানান, একইভাবে দখলে নেওয়া হয়েছে মাদরাসার পাশের পুকপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের নিচতলাটিও। সেখানে সাব ঠিকাদার গিয়াস ও কামালের নিয়োজিত শ্রমিকেরা আবাসস্থল হিসেবে দখলে রেখেছে।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বলেন, ওই মাদরাসার মাঠটি একেবারে ছোট। এরপরও সেটি দখলে নিয়ে তারা মালামাল স্তূপ করে রেখেছে। মালামাল সরিয়ে নিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা গায়ের জোরে মাঠ দখল করে রেখেছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কাজের জন্য এতদিন ধরে একটি মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, তা হতে পারে না। এটি একেবারে অন্যায়। তাই এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে মালামাল স্তূপ করে রাখাসহ বিটুমিন পোড়ানোর কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জেনেছি। এই ঘটনায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি দেখতে উপজেলা প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একইসাথে মাদরাসার অবকাঠামোগত কোনো ক্ষতি হলে তা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।
তবে সড়ক নির্মাণকাজের সাব ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিন ও কামাল উদ্দিন দাবি করেছেন, তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের ক্ষতি করছেন না। এরপরও কাজ শেষ হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানের কোথায় কি ক্ষতি হয়েছে তা সমাধান করে দেবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাইডেনের চিঠি এসেছে, তারা চুপসে যাবে : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধমার্কেট ও ব্যাংক ঘিরে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা