মাত্র ১৪ মাসে পবিত্র কোরআনের ক্যালিগ্রাফি

| রবিবার , ৭ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

আমার খুব শখ ছিল ক্যালিগ্রাফি ব্যবহার করে আমার প্রিয় কোরআনের নকল তৈরি করব। গত বছর কোরআনের একটি অধ্যায় ক্যালিগ্রাফি করে বাবা-মা ও বন্ধু-বান্ধবদের দেখাই। তারা খুব খুশি হন। তাদের বলেছিলাম, ক্যালিগ্রাফি ব্যবহার করে পুরো কোরআন নকল করতে চাই। তারা আমাকে খুব উৎসাহ দেন। তবে বলেন কাজটা সহজ হবে না।
উনিশ বছর বয়সী ব্যাডমিন্টন-প্রিয় লাজুক ফাতিমা সাহাবা তার সাফল্যের গল্পটি এভাবেই বলছিলেন। মাত্র ১৪ মাসের মধ্যে পবিত্র কোরআনের ক্যালিগ্রাফি করে তিনি সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। শুধু আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব না, তার এই সাফল্যের কথা শুনে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অপরিচিতজনেরাও।
ফাতিমা থাকেন দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরালার কান্নুর জেলায়। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা ও ক্যালিগ্রাফির প্রতি ছিল বিশেষ ঝোঁক। প্রায়ই তিনি ছবি এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। তারাও তাকে উৎসাহ দিতেন। নাইনে পড়ার সময় তিনি লিপিবিদ্যা বা ক্যালিগ্রাফির দিকে বেশি মনোযোগ দিতে থাকেন। এই বিশেষ বিদ্যার প্রতি ভালোবাসার টানে তিনি প্রায় প্রতিদিন ক্যালিগ্রাফিতে হাত পাকাতেন। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়েই শুরু করতেন আঁকার কাজ।
তিনি জানান, কোরআন শরীফ এবং তার আয়াতগুলো তাকে বরাবরই মুগ্ধ করত। তাই সেরা ক্যালিগ্রাফ লিপি দিয়ে তিনি কোরআন নকল করতে চাইছিলেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে একটা বা দুটো আয়াত নকল করতাম। মা-বাবা প্রশংসা করতেন। আয়াতগুলো ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতাম। কিছুদিন পর দেখা গেল আমার পরিচিতজনেরা সেসব ফ্রেম কিনে নিচ্ছেন। আর আমি মনের আনন্দে তাদের জন্য আঁকতে থাকলাম। এতে করে আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। আমিও যে কিছু একটা করতে পারি, কিছু একটা আমার জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আমি এটা বিশ্বাস করতে শুরু করি।
ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়ার সময় ফাতিমা সাহাবা তার পরিবারের সাথে ওমানে থাকতেন। ছোট বোন ও ছোট ভাই আর মা-বাবা নিয়েই তার পরিবার। এক সময় তার পরিবার ভারতে ফিরে আসে। কান্নুর জেলার কোডাপারমবা শহরে তাদের বাস।
স্কুল শেষ করার পর ফাতিমা কলেজে ছবি আঁকা শিখতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি ইন্টেরিয়ার ডিজাইন পড়া শুরু করেন। এখন কান্নুরের কলেজেই তিনি ইন্টেরিয়ার ডিজাইন পড়ছেন। তিনি বলেন, সুযোগ থাকলে প্রতিটি মানুষেরই উচিত তিনি যে পেশা পছন্দ করেন তা বেছে নেয়া এবং তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা।
ফাতিমা জানান, তিনি গত বছর আগস্টে ক্যালিগ্রাফির কাজ শুরু করেন এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কাজ শেষ করেন। তিনি মোট ৬০৪টি পাতা তৈরি করেন।
মা নাদিয়া রউফ বলেন, আল্লাহর রহমতে ফাতিমা তার সব কাজ শেষ করতে পেরেছে। আমরা সবাই খুবই গর্বিত তার জন্য। সে খুবই পরিশ্রমী এক মেয়ে। সে যাই করুক খুব মন দিয়ে করে।
ফাতিমার বাবা আবদুর রউফ বলেন, আল্লাহর কাছে হাজার শোকর গুজার যে, এ রকম একটি মিষ্টি আর ধর্মভীরু একটি মেয়ে তিনি আমাদের দিয়েছেন। ফাতিমার স্বপ্ন তিনি ক্যালিগ্রাফির শিক্ষক হতে চান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজপথে নামার বিকল্প নেই : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা