মাতারবাড়িতে এবার ইপিজেড গড়ার প্রস্তাব জাপানের

কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হবে বিপুল কর্মসংস্থান

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ৮ জুন, ২০২৩ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর এবার সেখানে একটি ইপিজেড গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরকে কাজে লাগিয়ে জাপান এক্সক্লুসিভলি নিজেদের জন্য একটি ইপিজেড করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এজন্য সড়ক যোগাযোগসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণেও জাপান সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে। জাপানি ইপিজেড গড়ে উঠলে এখানে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঘটবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়ে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগজি) ইনিশিয়েটিভ ঘোষণা করেন। ওই ঘোষণার প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এখানে ৬০০ মেগাওয়াট করে দুইটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। জাপানি সহায়তায় কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় আমদানিকৃত কয়লাবাহী জাহাজ বার্থিং এর জন্য ২৫০ মিটার প্রস্থ এবং ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। ১৬ মিটার গভীল এই চ্যানেলটিকে পাশে ১০০ মিটার সম্প্রসারিত করলে গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজন মিটবে বলে জাপানি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের পরই মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে এই চ্যানেলে সাড়ে ১২ মিটার ড্রাফটের ৬৫ হাজার টনেরও বেশি কয়লাবাহী জাহাজ চলাচল করেছে। এই চ্যানেলে অনায়াসে এক লাখ টন ধারণক্ষমতার জাহাজ চলাচল করতে পারবে বলেও বন্দর সূত্র জানিয়েছে।

জাপানি সহায়তা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং বন্দর উন্নয়নের পর জাপান নিজস্ব একটি ইপিজেড প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে। ইতোমধ্যে জাপানের পক্ষ থেকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই ইপিজেডের কারখানাগুলোতে তারা ভারত, নেপাল এবং ভূটানে রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন করতে চায়। বর্তমানে জাপানের কারখানায় এসব দেশে রপ্তানির জন্য প্রচুর পণ্য উৎপাদিত হয়।

মাতারবাড়িতে ইপিজেড করে এসব পণ্য উৎপাদন করা গেলে তা সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে বলে মন্তব্য করে জাপানি একটি সূত্র জানিয়েছে, তিন পক্ষের জন্যই মূলতঃ উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি করতে জাপান এই প্রস্তাব দিয়েছে। এখানে উৎপাদিত ইকুইমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম হবে। যা অপেক্ষাকৃত কমে ভারতের ত্রিপুরাসহ সেভেন সিস্টারখ্যাত প্রদেশগুলোতে সহজে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। ফলে ভারত তুলনামূলকভাবে কম দামে এসব পণ্য পাবে। অপরদিকে এই শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরাসরি কয়েক হাজার কোটি টাকার জাপানি বিনিয়োগ পাবে। ব্যাপক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ লাভবান হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠা এবং বন্দর উন্নয়নের পর মাতারবাড়ি বিনিয়োগের জন্য চমৎকার একটি স্থানে পরিণত হচ্ছে। জাপান যেহেতু এলাকাটির উন্নয়নে শুরু থেকে এককভাবে ভূমিকা রেখেছে তাই ওখানে জাপানের বিনিয়োগ প্রস্তাবের ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। এখন তাদের প্রস্তাবটি নিয়ে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি এবং চট্টগ্রামস্থ জাপানের অনারারী কনসাল মাহবুবুল আলম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকে আমরা সবসময় স্বাগত জানাই। জাপান দেশ হিসেবে খুবই ভালো, আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। ঢাকায় তারা একটি ইপিজেড করেছে। সেটি ভালো চলছে। এখন তারা যদি মাতারবাড়িতে ইপিজেড করতে চায় তাহলে অবশ্যই সেটি নিয়ে আমাদেরকে পজেটিভ চিন্তা করতে হবে। তিনি দেশের উন্নয়নে যে কোন বিদেশি বিনিয়োগই গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকলেজছাত্র দুই বন্ধুর সঙ্গে প্রাণ গেল হোটেল কর্মচারীরও
পরবর্তী নিবন্ধদুই একদিনে যোগ হচ্ছে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ : প্রধানমন্ত্রী