মাটির প্রলেপে ঢাকা বিটুমিনের সড়ক

চকরিয়ায় আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি

চকরিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ৪ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ইউনিয়নে ইউনিয়নে চলছে মাটি খেকোদের দৌরাত্ম্য। প্রতিদিনই এস্কেভেটর দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল কাটা হচ্ছে। ডাম্পার ট্রাকযোগে সেই মাটি পরিবহনের সময় ঝরে ঝরে পড়ে আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর। এতে কয়েক ইঞ্চি
পুরুত্বের মাটির প্রলেপে ঢাকা পড়ে গেছে বিটুমিনের
পুরো সড়ক। লবণবাহী গাড়ি থেকে নিঃসৃত পানি বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতেই মারাত্মক পিচ্ছিল হয়ে উঠছে সড়ক। এই অবস্থায় যানবাহন চলাচলে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সড়কে।
অভিযোগ উঠেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, কৃষিবিভাগ, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এ সব বিষয় দেখভালের কথা থাকলেও তারা এই বিষয়ে একেবারেই উদাসীন। সড়কের এ ধরনের বেহাল অবস্থা রোধে তাদের কোনো তৎপরতাই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সরজমিন দেখা গেছে, উপকূলীয় চকরিয়া-বদরখালী-মহেশখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক ও আনোয়ারা-বাঁশখালী-চকরিয়া (এবিসি) আঞ্চলিক মহাসড়কের চকরিয়া অংশে দীর্ঘদিন ধরে এই নৈরাজ্য চলছে। চকরিয়া-বদরখালী-মহেশখালী সড়কের চকরিয়ার সাহারবিল থেকে পশ্চিম বড় ভেওলা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এবং এবিসি সড়কের চকরিয়ার লালব্রিজ থেকে পেকুয়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়ক ঢাকা পড়েছে মাটির প্রলেপে। এতে সামান্য বৃষ্টি শুরু হওয়ার সাথে সাথে সংঘটিত হতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। উপকূলীয় এলাকার আঞ্চলিক এই মহাসড়ক দুটিতে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালক এবং যাত্রীরা দৈনিক আজাদীকে বলেন, এ সব নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের একেবারেই নজরদারি নেই। যে যার ইচ্ছেমতোই সড়কের ওপর দিয়ে মাটি পরিবহন করে যাচ্ছে। ডাম্পার ট্রাকে করে পরিবহনের সময় পথে পথে মাটি পড়ে আঞ্চলিক মহাসড়ক দুটির বিশাল এলাকা কয়েক ইঞ্চি করে মাটির প্রলেপে ঢাকা পড়ে গেছে। এই অবস্থায় সামান্য বৃষ্টি শুরুর সাথে সাথে ভয়াবহ দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চকরিয়া-মহেশখালী সড়কের চকরিয়ার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের লালব্রিজ স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী কলিম উল্লাহ, মোহাম্মদ সাকের দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সম্প্রতি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার পরই মারাত্মকভাবে পিচ্ছিল হয়ে উঠে সড়কটি। এতে যাত্রীবাহী বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। এমনকি যাত্রীবাহী একটি বাস সড়ক থেকে অপেক্ষাকৃত সামান্য উঁচু সেতুর ওপর উঠতে গিয়েই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সড়কের পাশে খাদে আটকে যায়। যদিওবা চালকের দক্ষতায় সেই দুর্ঘটনায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এই রকম অসংখ্য দুর্ঘটনার সাক্ষী ওই স্টেশনের ব্যবসায়ীরা।
সড়ক দুটির এই করুণ অবস্থায় বেশি সমস্যায় নিপতিত হচ্ছেন মোটর সাইকেল আরোহীরা। সর্বশেষ গত শুক্রবার দিবাগত রাতে চকরিয়া-মহেশখালী সড়কের ইলিশিয়া এলাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন চকরিয়া পৌরশহরের ব্যবসায়ী রুস্তম আলী। চলন্ত অবস্থায় পিচ্ছিল সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। নিহত রুস্তম আলী চকরিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মকবুল হোসেনের পুত্র।
নিহতের পরিবার জানিয়েছে, চকরিয়া-মহেশখালী সড়কে যানবাহন চলাচল এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কয়েক ইঞ্চি পুরুত্বের মাটির প্রলেপ পড়ে বিটুমিনের এই সড়ক একেবারে ঢাকা পড়ে গেছে। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে সকল ধরণের যানবাহন।
আঞ্চলিক এই মহাসড়ক দুটিতে সিএনজি অটোরিঙা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহকারী জালাল উদ্দিন, মনু মিয়া ড্রাইভারসহ অসংখ্য যানবাহনের চালক বলেন, ‘প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে তাদের। দীর্ঘদিন ধরে সড়ক দুটিতে মাটি খেকোদের নৈরাজ্য চলমান থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কোনো ধরণের তদারকি বা নজরদারি নেই। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তারা।’
সড়ক দুটিতে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালকের ভাষ্য-একদিকে চলতি মৌসুমে মাঠে উৎপাদিত লবণ পরিবহনের সময় ট্রাক থেকে নিঃসৃত হচ্ছে লবণ পানি। তার ওপর উপকূলীয় এলাকার ফসলি জমির পলিমাটি কেটে ডাম্পার ট্রাকযোগে পরিবহনের সময় সড়কের ওপর পড়ছে মাটি। এতে লবণ পানি ও পলি মাটির আস্তরণে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সড়ক দুটি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জরুরি এবং কঠোর পদক্ষেপ না নিলে সামনে ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে সড়ক দুটি দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী-সাধারণসহ যানবাহনগুলোর জন্য। কারণ সামনে শুরু হবে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাত। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে যানবাহন চলাচল।
সড়ক দুটির দেখভালসহ নৈরাজ্য রোধের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সাখাওয়াত হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘উপকূলীয় আঞ্চলিক মহাসড়ক দুটির বড় সমস্যা হচ্ছে মাটি এবং লবণ পরিবহন। লবণ পরিবহনের সময় ঘন পুরুত্বের পলিথিন ব্যবহারের নিয়ম মানা হয় না। অপরদিকে কৃষি জমির টপসয়েল কেটে ডাম্পারভর্তি করে পরিবহনের সময় মাটি পড়ছে। এতে প্রতিনিয়তই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে সড়কটি।’
তিনি বলেন, এই সমস্যা থেকে উত্তরণকল্পে শুধুমাত্র সড়ক বিভাগ উদ্যোগী হলে হবে না। এখানে উপজেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, পুলিশ থেকে শুরু করে সর্বোপরি পরিবহন মালিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তাই কোনো সংস্থার একার পক্ষে এই সমস্যা সমাধান করা যাবে না। অবশ্যই যাত্রী-সাধারণের চলাচল নিরাপদ করতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নিয়েই এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। সড়ক দুটির নৈরাজ্য বন্ধে উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশের সহায়তা নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ব্যস্ততম আঞ্চলিক মহাসড়ক দুটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। যারা কৃষিজমির টপসয়েল কেটে অন্যত্র পরিবহনের সময় সড়কের ক্ষতি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবার নতুন অধ্যায়ের সূচনা
পরবর্তী নিবন্ধজনগণকে সেবা প্রদান নিশ্চিতে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর