‘মসজিদের মাইকে লোক ডেকে’ চারজনকে পিটিয়ে হত্যা

| মঙ্গলবার , ১৯ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ

মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গ্রামবাসীর পিটুনিতে চারজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। গত রোববার রাত ১২টার দিকে উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের বাঘরী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যু হয়। খবর বিডিনিউজের।

নিহতরা হলেন সোনারগাঁ উপজেলার রাজাপুর শেখেরহাট গ্রামের আমান উল্লাহর ছেলে জাকির হোসেন (৩৬), আড়াইহাজারের কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের শামসুল হকের ছেলে আব্দুর রহিম (৪৮) ও একই উপজেলার জালাকান্দী গ্রামের মজিদ হোসেনের ছেলে নবী হোসেন (৩৫)। বাকি একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আহত মোহাম্মদ আলীকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেনের ভাষ্য, নিহতদের মধ্যে জাকির সোনারগাঁয়ের ডাকাতদলের সর্দার। তার এক মামাও পুলিশের তালিকাভুক্ত ডাকাতদলের সদস্য। আর আব্দুর রহিম গত বছরের মার্চে ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। নবী হোসেনের বিরুদ্ধেও রয়েছে ডাকাতির মামলা।

বাঘরী গ্রামের লেবুরটেক জামে মসজিদের ইমাম জহিরুল ইসলাম বলেন, তারাবির নামাজ শেষ হওয়ার পর আমি মসজিদেই ছিলাম। গ্রামবাসী মসজিদের ভেতর ঢুকে মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে অ্যানাউন্স করে। এর আগে আরো দুইতিনটা মসজিদ থেকেও ডাকাতের বিষয়ে মাইকে জানানো হয়। লোকজন তখন বিলে নামে ডাকাত খুঁজতে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একটি স্টিলমিলের এক শ্রমিক বলেন, রাত সোয়া দশটার দিকে মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার ঘোষণা শুনে তিনি বিলে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন ‘কয়েকশ’ গ্রামবাসী বিলের মধ্যে ‘ডাকাতদলের’ সদস্যদের খুঁজছে। পরে একজনকে খুঁজে পেয়ে তাকে লোকজন মারধর করে। বিলের অন্যপাশেও আরও কয়েকজনকে পেয়ে মারধর করেন গ্রামবাসী। গ্রামবাসী যে যা পাইছে, তাই হাতে নিয়া বিলে নামছে। ওইগুলা দিয়াই মারছে। মারধরের শিকার ব্যক্তিরা খালি গায়ে ছিল, পরনে শুধু হাফপ্যান্ট ছিল। তাগো হাতে কোনো অস্ত্র দেখি নাই।

রাতে লাশ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আহত অবস্থায় ডাকাতদলের এক সদস্য পুলিশের কাছে ভিডিওতে জবানবন্দি দিয়েছিল। ওই সময় সে জানায়, বানিয়াবাড়ি গ্রামের একটি বাড়ি তাদের টার্গেট ছিল। এইজন্য বিলের উঁচু এক ভিটিতে তারা প্রায় সাতজন জড়ো হয়েছিল, আরও কয়েকজনের আসার কথা ছিল। এর মধ্যেই মাইকে ডাকাত পড়ার ঘোষণা শুনে গ্রামবাসী বিলে নেমে পড়লে দৌঁড়ে তারা পালানোর চেষ্টা করে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রাথমিক তদন্তের বরাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ আলীর জবানবন্দি ও প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জাকির হোসেনের নেতৃত্বে রোববার রাতে তারা কয়েকজন ডাকাতির উদ্দেশ্যে ওই বিলে জড়ো হয়েছিল। পিটুনিতে চারজনের মৃত্যু এবং একজন আহত হওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করছে পুলিশ। এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীমান্তে গুলিতে নিহত বাংলাদেশির লাশ ফেরত দিল বিএসএফ
পরবর্তী নিবন্ধমুনিরীয়া যুব তবলীগের মহাসচিব অধ্যাপক মুহাম্মদ ফোরকান মিয়ার ইন্তেকাল