মটরশুঁটির সাদা ফুলে একাকার ক্ষেত

চাষ পদ্ধতি সহজ, উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন কৃষক

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ৬ মার্চ, ২০২১ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

ফাগুনের এই বাসন্তি ছোঁয়ার উষ্ণ শীতল মুহূর্তে সরিষার ফসলের মাঠে হলুদ চাদর প্রকৃতি থেকে বিলীন হবার পরপরই কোথাও কোথাও সাদা রঙের প্রজাপতি যেন পাখনা মেলেছে দলবেঁধে। ক্ষেতজুড়ে মটরশুঁটির সাদা ফুলে একাকার। দীগন্তরেখায় হলুদবর্ণ যেন সাদার মোহে আলিঙ্গনে মত্ত।
কৃষি প্রধান জনপদ মীরসরাই উপজেলার পতিত কৃষি জমিতে সহজ চাষ ও লাভজনক মটরশুঁটি আবাদে ঝুঁকছে কৃষকরা। শূন্য থেকে শুরু করে চলতি বছরের মধ্যে ৫ হেক্টর জমিতে এখন মটরশুঁটি চাষাবাদ হচ্ছে। তবে ৫শত থেকে এক হাজার হেক্টর মটরশুঁটি চাষাবাদে উপযোগী জমি রয়েছে। তবে এখন চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় আশাবাদী কৃষি বিভাগও।
উপজেলার পার্শ্ববর্তী ফেনী জেলার বারাই গোবিন্দ গ্রামের মাস্টার রবিউল হককে সেদিন মোটরশুঁটি থেকে আনন্দঘন মুহূর্তে পাওয়া যায়।
তিনি বলেন শখ করেই লাউ, লাল আলু আর কুমড়ার পাশাপাশি এবার সরিষা এবং মোটরশুঁটিও চাষ করেছেন। মাত্র ২ হাজার টাকা খরচে ৪ গন্ডা জমিতে মটরশুঁটি ফেলেছেন। ভাল ফলন হলে প্রায় ২০ হাজার টাকার ফলন পাবেন আশা করছেন। পরীক্ষামূলকভাবে ভাল ফলন দেখে খুশিতে আটখানা তিনি। মীরসরাই উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার নুরুল আলম জানান উপজেলার ১২নং খৈয়াছরা ইউনিয়নের পূর্ব খৈয়াছরা গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান, সুবাস কান্তি নাথসহ বেশ কয়েকজন কৃষক প্রায় ৫ হেক্টর মটরশুঁটি চাষ করেছেন। এখানকার পতিত জমিতে চাষাবাদ করলে রপ্তানি সম্ভব। মীরসরাই উপজেলা কৃষি অফিসার রঘুনাথ নাহা বলেন, আমরা কৃষকদের এখন থেকে মটরশুঁটি চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। আশা করছি শীঘ্রই ব্যাপকতর হবে এই উৎপাদনমুখী কৃষি পণ্য। কৃষি বিভাগ জানায় জমিতে মাত্র একটি চাষ দিয়েই অক্টোবর-নভেম্বর মাসে মটরশুঁটির বীজ বপন করা সম্ভব। এরপর আর ব্যয় তেমন নেই বললেই চলে। বিঘা প্রতি ১২ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। জমিতে শুধুমাত্র টিএসপি ও পটাশ সারের প্রয়োজন হয়। সেচের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। তিন দফায় গাছ থেকে মটরশুঁটি সংগ্রহ করা হয়। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে খরচ পড়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা। অন্যদিকে, বিঘা প্রতি উৎপাদিত ২৫ মণ গড় ফলনের বাজার দর মণ প্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা হিসাবে ৬২ হাজার টাকা। খৈয়াছড়ার কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন ৩০ শতক জমিতে মটরশুঁটি আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে গাছ থেকে মটরশুঁটি পেয়েছেন প্রায় ২ মণ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় আরও কয়েক মণ মটরশুঁটি পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। এতে তার গোটা বছরই নিজের ঘরের খরচ চলবে বলে জানান।
কৃষক সুবাস কান্তি নাথ বলেন, মটরশুঁটির জমিতে ইউরিয়া সারও প্রয়োজন হয় নেই, অধিকন্তু পরবর্তী ফসল চাষাবাদে ওই জমিতে ২০ ভাগ ইউরিয়া কম ব্যবহার করলেই চলে। কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, এই উপজেলার গুণাগুণ ও উপযোগিতার তথ্য কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেবার পর থেকে কৃষকরা মটরশুঁটি চাষে ক্রমশ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এই ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে মটরশুঁটি এলাকার অন্যতম অর্থকরি ফসলে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতের প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি
পরবর্তী নিবন্ধঅস্ট্রেলিয়ায় করোনা টিকার চালান আটকে দিল ইতালি