ভোজ্যতেলের বাজার চড়া

ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের দুই মত

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

পাইকারিতে বেড়েই চলেছে ভোজ্যতেলের বাজার। গত এক মাস ধরে তেলের বাজার চড়া। গত দুদিনে পাম অয়েল এবং সয়াবিন তেলের দাম প্রতি মণে বেড়েছে আরো ২শ টাকা। খাতুনগঞ্জের তেল ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের বুকিং রেট অনেক বেশি বেড়েছে। ফলে এর প্রভাব পাইকারিতেও পড়েছে।

তবে ভোক্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা বাজারের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করেন। দেখা যায়, আমদানি মূল্যের সাথে বিক্রয় মূল্যের বিরাট ব্যবধান। এছাড়া যেসব তেল এখন মজুদ করা আছে, সেগুলো আমদানি হয়েছে আগে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বুকিং রেট বাড়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন, যা অনুচিত। গতকাল খাতুনগঞ্জের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহ আগে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ টাকায়। সপ্তাহ না ঘুরতেই ৩০০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। এছাড়া গত তিনমাস আগে প্রতি মণ পাম তেল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। অন্যদিকে বর্তমানে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৪ হাজার টাকায়। গত সপ্তাহে এই তেল বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। এছাড়া গত তিনমাস আগে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৯০০ টাকায়। খাতুনগঞ্জের কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয় তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছে অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। বলা যায় ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়ে উঠে। এই সুযোগে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী এবং আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির একমাত্র কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়া। আগে পাম তেলের বুকিং রেট ছিল ৫৫০ ডলার। সেটি এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩০ ডলারে। এছাড়া সয়াবিনের বুকিং রেট ছিল ৬৫০ ডলার, বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০ ডলার। পাম তেল সাধারণত আমদানি হয় ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া থেকে। সয়াবিন আমদানি হয় ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়া থেকে। আমরা জেনেছি, ওইসব দেশে উৎপাদন কম হয়েছে এবং পণ্যের ঘাটতি রয়েছে। এখানে কৃত্রিম সংকট করার সুযোগ নেই। বুকিং কমে গেলে দাম এমনিতেই কমে যাবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজার সব সময়ই ব্যবসায়ীদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তারা নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটে। তবে ভোগ্যপণ্যের বাজারে যেভাবে তদারকি হওয়া দরকার সেটিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। প্রশাসন মাঝে মাঝে আকস্মিক অভিযানে বের হয়ে কিছু জরিমানা করে তারপর আবার চুপ হয়ে যায়। ফলে বাজার ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এখন পেঁয়াজের পথ ধরে পাম অয়েলের বাজারও যেমন ঊর্ধ্বমুখী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদীঘিনালায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুর
পরবর্তী নিবন্ধসার্ভার নষ্ট, অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ না পেয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা