ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু

প্রথমদিনে একহাজার রোহিঙ্গার যাত্রা

উখিয়া ও টেকনাফ প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন ধাপে ২১ বাসে শতাধিক পরিবারের এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া ছেড়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্য সূত্র মতে, গতকাল রাতের মধ্যে ৬শ পরিবারের ২ হাজার ৫শ রোহিঙ্গা উখিয়ার অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। আজ শুক্রবার আরো সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম নৌবাহিনীর বিএফ শাহীন কলেজ মাঠের অস্থায়ী ক্যাম্পে নেওয়ার কথা রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ ধরে এই কার্যক্রম চলবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, উখিয়া কলেজ মাঠের অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে প্রথম ব্যাচে ১০টি বড় বাসে রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের পতেঙ্গার উদ্দেশে রওনা দেন। প্রতি ১০টি বাসের বহরে ১টি অ্যাম্বুলেন্স ও ১টি পুলিশের গাড়ি রয়েছে। তাদের পতেঙ্গার বিএফ শাহীন কলেজ মাঠে নেয়ার পর সেখান থেকে ভাসানচরে নেয়া হবে। এজন্য নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৪টি জাহাজ।
স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের গত বুধবার রাত থেকে উখিয়া কলেজ মাঠে আনা হয়। সেখানে অস্থায়ী ক্যাম্পে খাবার ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। পরে তাদের ডাটাএন্ট্রি করে বাসে তোলা হয়। রোহিঙ্গাদের পরিবহনের জন্য শতাধিক বাস, ৪০টি মালাবাহী কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, পালংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১৩ পরিবারের ৫৬ জন, বালুখালী পানবাজার ক্যাম্প থেকে ২৩ পরিবারের ১১০ জন, শামলাপুর ক্যাম্পের ৫ পরিবারের ২৭ জন, কুতুপালংয়ের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ২শ পরিবারের ৯৩৮ জন এবং নয়াপাড়া-২ ক্যাম্প থেকে ১০ পরিবারের অর্ধশত রোহিঙ্গাকে অস্থায়ী ক্যাম্পে আনা হয়। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত একহাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরের উদ্দেশে নেয়া হয়েছে।
২৩নং ক্যাম্পের মাঝি আবুল হাশেম বলেন, ভাসানচরে যাওয়ার জন্য কোনো ধরনের জোর জবরদস্তি করা হচ্ছে না। যারা স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক তাদের নেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো রোহিঙ্গা জানান, ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ আরও অনেক রোহিঙ্গা ভাসানচর যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গতকাল সকাল থেকে উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্প এলাকা ও স্টেশনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়ে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উখিয়ার আকাশে র‌্যাবের হেলিকপ্টার একাধিকবার চক্কর দিতে থাকে। উখিয়া কলেজ এলাকায় সাধারণ লোকজনসহ গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড়তে দেয়া হয়নি।
সমপ্রতি ভাসানচর পরিদর্শন করে আসা একাধিক এনজিও প্রতিনিধি জানান, দ্বীপটি বাসস্থানের উপযোগী করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের জন্য আধুনিক বাসস্থান, বেসামরিক প্রশাসনের জন্য অফিস ও আবাসিক ভবন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ভবন, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও খেলার মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সেখানে মহিষ, ভেড়া, হাঁস, কবুতর পালন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষও করা হচ্ছে।
সেখানে এক লাখ এক হাজার ৩৬০ জন বসবাস করার মত গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। ১২০টি গুচ্ছগ্রামে ঘরের সংখ্যা এক হাজার ৪৪০টি। রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবায় দুটি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এবং চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অন্তত কিছুটা অপরাধ মুক্ত থাকা যাবে। সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন উখিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে অবগত থাকলেও তাদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি বলে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকা-চট্টগ্রামের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে সাঁড়াশি আক্রমণ
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল