ভালো থেকো বাবা

শর্মিষ্ঠা চৌধুরী | মঙ্গলবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২১ at ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ

এই দিনটা আমার কাছে একটা গল্প, দুঃস্বপ্নের গল্প। হঠাৎ করে তুমি হারিয়ে যাওয়ার গল্প- যে গল্পের কোন শেষ নেই। প্রতিদিন ভোর হয়, সন্ধ্যা নামে, পাখিরা নীড়ে ফিরে যায়-নতুন হয়ে আসে একেকটা দিন। নতুনভাবে বাঁচার চেষ্টা করি
শুধু তুমি ফিরে আসো না! বাবা-সেদিন হাসপাতালে যাওয়ার সময় মাকে বলে গিয়েছিলে কিছুক্ষণ পরই ফিরে আসবে
কই আসলে না তো! এসেছিলো একটা নিথর দেহ। নির্বাক তাকিয়ে ছিলাম,একজন অজানা অচেনা তুমি আগে তো কখনো এভাবে দেখিনি তোমায়। তবে কি একেই বলে হারিয়ে যাওয়া! এ কেমন হারিয়ে যাওয়া বাবা! বাবা, আগেরদিন তোমাকে দেখে এলাম, কী সুন্দর দেখাচ্ছিলো তোমায়, একেবারে ফ্রেশ। চুলে কালার করেছিলে, বার বার জিজ্ঞেস করছিলে চুল ঠিকাছে কিনা! তুমি খুব পরিপাটি থাকতে পছন্দ করতে। আমি হেসে বললাম একদম ঠিকাছে, তোমাকে আজ অন্যদিনের চাইতে অনেক বেশি ফ্রেশ দেখাচ্ছে। একটু হাসলে, আনন্দের হাসি। আমি মুগ্ধকে নিয়ে যাইনি দেখে খুব মন খারাপ করলে,ওর সাথে ফোনে কথা বলতে চাইলে। কথাও বললে অনেক মজা করে। কে জানতো বলো এটাই ছিলো মুগ্ধ’র সাথে তোমার জীবনের শেষ কথা! সেদিন অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়ে বাসায় ফিরলাম। কেননা প্রথমবার হার্ট এট্যাকের পর হাসপাতাল থেকে ফেরার সাত দিনের মধ্যে এই প্রথম তোমাকে দেখে মনে হলো তুমি খুব ভালো আছো! তাই অনেক তৃপ্তি নিয়ে রাতে ঘুমোতে গিয়েছিলাম। একবারের জন্যও ভাবিনি পরদিন তুমি অন্যলোকের বাসিন্দা হবে! বাবা, মুগ্ধ আমার শরীরের ভেতর যখন আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো, তুমি কোন না কোন অজুহাতে আমার বাসায় আসতে, আমি কেমন আছি দেখবার জন্যে। আমার মনটাও কেমন আনন্দে ভরে উঠতো। চলে যাওয়ার সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোমার চলে যাওয়া দেখতাম, যতদূর তোমাকে দেখা যায়- মনের মধ্যে কেমন জানি একটা আশংকা, ভয় কাজ করতো-মনে হতো এই বুঝি তুমি এঙিডেন্ট করলে রাস্তা পার হতে গিয়ে। অপেক্ষায় থাকতাম কখন তুমি বাসায় পৌঁছে আমাকে ফোন দিয়ে শংকামুক্ত করবে। কতবার বলেছি রিঙায় যাও তুমি কিছুতেই যাবে না। হাসতে হাসতে বলতে হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তুমি হাঁটতে ভালোবাসতে, চলার পথে পরিচিত কাউকে দেখলে গল্প করতে পছন্দ করতে। কারণ ওই পথ যে তোমার, প্রতিদিনকার…সত্যিই চলে গেলে সবকিছু ছেড়ে। জানো বাবা সেই পথও তোমার জন্য কান্না করে, ঠিক আমার মতন
কেন চলে গেলে বাবা! এ কেমন চলে যাওয়া তোমার! বাবা, এখনো তোমার ছবির দিকে তাকাতে পারিনা-সে এক অদ্ভুত দৃষ্টি তোমার। কেমন জানি করে তুমি তাকিয়ে থাকো আমার দিকে! মনে হয় তুমি আমায় কিছু বলতে চাইছো। কেন কিছু বলোনা বাবা। শুধু ভেঙে চুরমার করে দাও আমাকে! আমি আজও তোমায় খুঁজি অনেক মানুষের ভীড়ে। কতবার ভুল করি তুমি ভেবে! কখনো কি খুঁজে পাবো তোমায়, কবে দেখা হবে আমাদের! বাবা, আজ সাতটা বছর তুমি নেই আমাদের মাঝে
তোমাকে ছেড়ে থাকা কতটা কষ্টের তুমি বোঝো। আর কটা দিন থাকলে না কেন তুমি! তোমাকে ছাড়া আমি ভালো নেই বাবা, আবারও যদি কখনো এই পৃথিবীতে জন্ম নিতে পারি তুমিই আমার বাবা হয়ে এসো প্লিজ! বাবা, তোমার প্রিয় মুগ্ধ খুব ভালো আছে, ওকে আশীর্বাদ করো যেন ভালো মানুষ হয়-ঠিক তোমার মতন। ভালো থেকো বাবা। খুব ভালো থেকো অন্য কোন জগতে…।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরউন্নয়নে চাই ‘নগর সরকার’
পরবর্তী নিবন্ধমনন-শিক্ষা-মানবিকতা পালিয়েছে বুকের খাঁচা ছেড়ে